শহীদ মিনার ঘিরে যত অপকর্ম
সাইমুন ইসলাম
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০১:৩৮ পিএম, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ রোববার
# নিরাপত্তা নিশ্চিত নেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য
# ইভটিজিংয়ের এর শিকার হচ্ছে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীরা
# শহীদ মিনারের ভিতরে ও বাহিরে প্রকাশ্যে চলে চাঁদাবাজি
শুরু হয়েছে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। অনেক আন্দোলন সংগ্রামের পর ১৯৮৫ সালে ভাষা সৈনিকদের ত্যাগের ও বিরত্বের সম্মানে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো। নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এর গুরুত্ব অপরিসীম। ভাষা আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জের নাম অবিচ্ছেদ্য। অথচ প্রতিষ্ঠার প্রায় ৩ যুগ পর এতো বীরত্বের শহীদ মিনারই হয়ে উঠেছে অপরাধের আখড়া। দিন যত যায় এ শহীদ মিনার ঘিরে বাড়তে থাকে অপরাধের তীব্রতা। শুধু মাত্র এ ভাষার মাসের একটি বিশেষ দিনেই এই গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাটি নিরাপদ ও সম্মানিত হয়ে থাকে। বছরের বাকি দিনগুলো অনিরাপদ জায়গা হিসেবে তালিকাভুক্ত হয় এই স্থানটি। এ স্থানটিকে কেন্দ্র করে যত অপরাধ ঘটে তা নিম্নে তুলে ধরা হলো।
ভিক্ষুকবেশী চক্রের ভোগান্তি
নারায়ণগঞ্জের একেবারে প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত হওয়ায় শহরের অভ্যন্তরের এবং বাহিরের মানুষদের প্রধান মিলনায়তন এই শহীদ মিনার। কিন্তু শহীদ মিনারে প্রবেশ করতে না করতেই শিশু ভিক্ষুকদের কবলে পড়তে হয় প্রায় প্রত্যেক্যেই। টাকা না দেওয়া অবধি তারা পা জড়িয়ে ধরে থাকে। এমন অবস্থার সৃষ্টি করে যেনো তাদেরকে টাকা দিতে বাধ্য হয়। কেউ টাকা না দিলে তাকে লাঞ্ছিত করা হয়। সূত্র বলছে এসব কিশোর ভিক্ষুকদের নিয়ন্ত্রণ করছে একটা প্রভাবশালী গোষ্ঠী। যারা প্রতিটি শিশু থেকে ভিক্ষার টাকা নিয়ে নেয়।
বখাটেদের উৎপাত
চাষাঢ়ার আশেপাশে বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস শুরু হওয়ার আগে ও পড়ে শহীদ মিনারে বেশ খানিকক্ষণ সময় কাটান। এসময় কিছু বখাটেরা তাদের নানাভাবে ডির্স্টাব করে। মেয়েদের নানা কটূক্তি করে। লাঞ্ছনার স্বীকার হয় স্কুলছাত্রীরা। গত ৩ ডিসেম্বর শনিবারও এমন একটি ঘটনার স্বাক্ষী হয়েছিলো শহীদ মিনার। এর আগেও শহীদ মিনার থেকে তরুণীকে উঠিয়ে নিয়ে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
চাঁদাবাজি
শহীদ মিনার একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। এর অভ্যন্তরীন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। কিন্তু তারা এসব না দেখে চাঁদাবাজীতে লেলিয়ে দেয় একশ্রেণির মানুষকে। তারা শহীদ মিনারের ভিতরে ও বাহিরে দোকান বসিয়ে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করে শহীদ মিনারের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে ভোগান্তিতে ফেলছে সাধারণ মানুষকে। বর্তমানে এই শহিদ মিনার ঘিরে দোকান বসিয়ে এত পরিমান চাঁদাবাজি চলে যে শহিদ মিনাররের বাইরে তো বটেই, ভিতর দিয়ে ও চলাচল করতে পারেনা সাধারণ মানুষ। সাধারণ মানুষের দাবি একেবারে হকারমুক্ত করা সম্ভব না হলেও হকার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে যেনো মানুষের চলাফেরায় অসুবিধে না হয়।
চুরি ও ছিনতাই
শহীদ মিনার ঘিরে চুরি ছিনতাই সাম্প্রতিক সময়ে আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। দিন রাত সবসময় সক্রিয় থাকে এ অপরাধ চক্র। তবে রাত নামলেই কয়েকগুণ বেশি সক্রিয় হয়ে কয়েকটি সিন্ডিকেটে বিভক্ত হয়ে চুরি-ছিনতাই এর মতো জঘন্য অপরাধে মগ্ন থাকে চক্রটি। আর এসব চক্রের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করে ভুক্তভোগীরা। কারণ এখানে নিয়োজিত থাকেনা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আর এই সুযোগ যেন সোনায় সোহাগা অপরাধীদের জন্য।
এসব বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপারেশন) চাইলাউ মারমা এর সাথে কথা বললে তিনি যুগের চিন্তাকে জানান, ‘যদিও বর্তমানে একেবারে নির্ধারিত ফোর্স সেখানে অবস্থানরত থাকেনা তবে কিছুক্ষণ পরপরই পুলিশ সেখানে টহল দিচ্ছে। এমনকি ট্রাফিক পুলিশও সেখানে টহল দেয়। আগে যেমনভাবে শহীদ মিনারে ফোর্স অবস্থান করতো এখন জনবল সংকটের কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। তবে ভাষার মাসের কারণে এই স্থানে মানুষের আনাগোনা বৃদ্ধি পাবে সেই বিবেচনায় এই স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারা নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে’ তবে শহরবাসী চায় নিরবিছিন্ন ও নিরাপদ শহীদ মিনার যেখানে নিরাপদ থাকবে সবাই।
এস.এ/জেসি