গ্যাস সংকটে বাড়ছে বৈদ্যুতিক চুলার চাহিদা
আবু সুফিয়ান
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০১:৩০ পিএম, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ রোববার
# উৎপাদন ক্ষমতা এখন ভালো পর্যায়ে আছে দাবি বিদ্যুৎ বিভাগের
রান্নার জ্বালানি হিসেবে পাইপ লাইনের গ্যাসের পাশাপাশি বোতলজাত এলপি গ্যাস ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কিন্তু এখন পাইপ লাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করা এই গ্যাসের তীব্র সংকট আর বোতলজাত এলপি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ধুঁকছে পুরো না.গঞ্জবাসী।
আবার এদিকে সরকারিভাবে নতুন গ্যাস সংযোগও বন্ধ। হু হু করে বাড়ছে এলপি গ্যাসের দাম। এমন সংকটময় পরিস্থিতি থেকে পরিত্রান পেতে মানুষ খুঁজছে বিকল্প উপায়। নিরাপদ, সহজলভ্য আর বিদ্যুত খরচ কম হওয়ায় দিনকে দিন রান্নাঘরের সেই জায়গা দখল করে নিচ্ছে বৈদ্যুতিক চুলা।
নতুন করে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয়ার কারনে বেড়েছে ইলেকট্রিক চুলার ব্যবহার। এমনটাই মনে করছেন নারায়ণগঞ্জ শহরের উকিল পাড়ার মো. আলী জিন্নাহ। তিনি বলেন, বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আর বিভিন্ন রকমের ইলেকট্রিক চুলা পাওয়া যায়। আর এগুলোর খরচ এলপি গ্যাসের তুলনায় অনেক কম।
ইলেকট্রিক চুলা বেশি জনপ্রিয় হবার হওয়ার অন্যতম কারন বলে মনে করেন তিনি। তবে এই অবস্থায় বিদ্যুতের ব্যবহারও কিছুটা বেড়েছে এমন মন্তব্য করার পাশাপাশি তিনি আরোও বলেন, এই চুলার ফলে চলমান সংকট থেকে আমাদের রাধুঁনীরা কিছুটা স্বস্তি পাবে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা এখন ভালো পর্যায়ে আছে। তাই বিদ্যুতের উপর কোন চাপ পড়বে না।
আমাদের বিদ্যুত বিভাগ বলছে, এ ধরনের ইলেকট্রনিক চুলা বিদ্যুত সাশ্রয়ী হলে গ্রাহক পর্যায়ে তা ব্যবহারের জন্য উৎসাহিত করা যেতে পারে। এদিকে চলমান গ্যাস সংকটের কারনে রান্নার কাজে গ্যস সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। সারা দেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জ শহরেও এই সংকট তৈরী হয়েছে।
শহরের জামতলার বাসিন্দা মোছা. ফাতেমা আক্তার বলেন, এক বছর ধরে আমরা তীব্র গ্যাস সংকটে আছি। দিন দিন এই সংকট আরোও তীব্রতর হচ্ছে। এখন সারাদিন কোনও গ্যাসের চাপ থাকে না। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর অবস্থা আরোও ভয়াবহ হয়। কোন চাপই থাকে না। রান্ন করতে কি যে কষ্ট হচ্ছে।
তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি ইলেকট্রিক চুলা ব্যবহার শুরু করবো। ফাতেমার পাশের বাসার মোছা. আকলিমা বেগম বলেন, এখন গ্যাসের যে চাপ তাতে চা বানানোও যায় না। তাই আমি গত মাস থেকে বৈদ্যুতিক চুলা কিনেছি। দাম মাত্র ৩৮০০ টাকা। বাড়ছি কোন ঝামেলা নাই। তিন বেলা রান্না করে এই মাসে আমার বিদ্যুত বিল আসছে মাত্র ৫০০ টাকা।
আকলিমা দুই মাস আগের কষ্টের কথা মনে করে যুগের চিন্তাকে বলেন, আগে তো গ্যাস না থাকার কারনে এক বেলা রান্না করে তিন বেলা খেতাম। কি যে কষ্ট গেছে। এদিকে আবার গ্যাস না থাকলেও বিদ্যুত বিল পুরোটাই দিতে হতো। শিল্পাঞ্চল বিসিকে বসবাস করা এক গৃহিণী মোছা. নাজমা বেগম জানান, তিনি একটি নতুন বাসায় উঠেছেন। যেখানে আগে থেকেই গ্যাস সংযোগ নেই।
এদিকে এলপি গ্যাস-এর দাম বেশি হওয়ায় রান্না করার জন্য নির্ভর করতে হচ্ছে ইলেকট্রিক চুলায়। এই চুলায় রান্নার খরচ সম্পর্কে তিনি বলেন, তিন বেলা রান্না করলেও মাসে ৫০০ টাকার বেশি বিদ্যুত বিল আসে না। আর একই পরিমান রান্নার জন্য এলপি গ্যাসের ক্ষেত্রে খরচ হয় প্রায় ২০০০ টাকার মত। অবশ্য এটা রান্নার ওপর নির্ভর করে বলে তিনি জানান।
ফতুল্লার পঞ্চবটির ইলেকট্রিক চুলা বিক্রেতা বলেন, তিন-চার সদস্যের পরিবারের সব রান্নার জন্য মাসে প্রায় ২০০০ টাকা সম মূল্যের সিলিন্ডার গ্যাসের প্রয়োজন পরে। আবার দুই চুলার পাইপ লাইনের গ্যাসের বিল ১০৮০ টাকা। অন্যদিকে একই পরিমান রান্নার জন্য ইলেকট্রিক চুলায় পরে প্রতি মাসে সর্বোচ্চ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে।
এই চুলার দামের ব্যপারে জানতে চাইলে তিনি যুগের চিন্তাকে বলেন, আমার দোকানে ব্র্যান্ড ভেদে একেকটি চুলা ৩৮০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত আছে।
পরিশেষে বলা যায়, এখন আর ইলেকট্রিক চুলা শৌখিনতা নয় বরং এই চুলা ব্যবহার যেন চলমান সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র হাতিয়ার। জ্বালানি সংকট এবং আরো কিছু কারনে দিন দিন এরকম চুলার চাহিদা বাড়ছে।
আর এই সমস্যাগুলোর স্থায়ী সমধান হিসেবে শহর কিংবা গ্রামের পরিবারগুলোর রান্নাঘরে জায়গা করে নিচ্ছে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ইনডাকশন বা ইনফ্রারেড চুলা। এন.হুসেইন/জেসি