কথা দিলেও রাখেনি কেউ
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ১২:৪২ পিএম, ৫ মার্চ ২০২৩ রোববার
# কথা দেন, নির্বাচিত হন এবং তারপর ভুলে যান
# নাসিম ওসমান সেতু বাণিজ্যিক ব্যবহারের, মেলবন্ধনের নয়
# অনেকেই এই সেতুকে দিয়ে বন্দরবাসীর স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা চালাচ্ছেন
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে যিনি-ই সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি-ই বন্দরবাসীর খুব প্রিয় লোক হন। আর নির্বাচনের পূর্বেতো জান-প্রাণই বন্দরবাসীর জন্য বিসর্জন দিয়ে দেন। কিন্তু নির্বাচন শেষে সেই কথা ভুলে যান বলে বন্দরবাসীর অভিযোগ। এরই মধ্যে বন্দরবাসীর সাথে শহরের মানুষের হৃদ্যতা বৃদ্ধি, যেকোন প্রয়োজনে সহজ যোগাযোগ এবং শহর ও বন্দরকে একত্রিত করার জন্য একটি সেতু নির্মাণ করা হবে বলে বিভিন্ন নেতা ও জনপ্রতিনিধি বিভিন্ন সময় কথা দেন। আর এই সেতুটি হবে হাজীগঞ্জ-নবীগঞ্জ কিংবা চারারগোপ-একরামপুর এলাকায়।
এই সেতুর আশায় একের পর এক নেতাকে নির্বাচিত করে বারেবার সেই সেতুর স্বপ্ন দেখেন বন্দরবাসী। তবে বন্দরবাসীর সেই আশায় গুড়েবালি। কথা দেন, নির্বাচিত হন এবং তারপর ভুলে যান। আবুল কালাম, এসএম আকরাম, নাসিম ওসমান, মেয়র আইভী ও সেলিম ওসমান তারা প্রত্যেকেই এই সেতুর প্রতিজ্ঞা করেও এই সেতু নির্মাণ করতে কিংবা কবে নাগাদ করা হবে কিংবা আদৌ হবে কি না তা নিশ্চিত করতে পারছেন না। তাদের প্রতিজ্ঞা করার সেই ধারাবাহিতা এখন পর্যন্ত চলমান আছে। সেই সেতু তাদের মুখে মুখে থাকলেও কিংবা কাগজে কলমে থাকলেও নদীর উপর দেখার সৌভাগ্য বন্দরবাসির হয়নি।
অনেকটা ‘কাজীর গরু কেতাবে আছে গোয়ালে নেই’ এমন অবস্থা। অনেকেই আবার বাণিজ্যিক যোগাযোগে আমূল পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে নির্মাণ করা বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসিম ওসমান সেতুকেই সেই কাঙ্খিত সেতু বলে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন বন্দরবাসী। কেউ আবার হাজীগঞ্জ-নবীগঞ্জ ঘাটের ফেরিকেও সেই সেতুর বিকল্প বলে প্রচার করতে চেষ্টার কোন কমতি রাখেন না। যেগুলো অনেকটা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো অবস্থা।
বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য-উপাত্তে জানা যায়, ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর বন্দরবাসীর যোগাযোগ ব্যবস্থার কষ্ট লাগব করার জন্য নবীগঞ্জ-হাজীগঞ্জ এলাকায় একটি সেতু করা হবে বলে প্রচার করেন। তবে সেই মেয়াদে তারা এই সেতু নির্মাণের জন্য কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। এরপর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পূর্বে এই শীতলক্ষ্যা সেতুর ওয়াদা করে এসএম আকরাম নির্বাচিত হন বলে জানা যায়। কিন্তু তিনিও কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।
২০০১ সালে বিএনপি পুনরায় ক্ষমতায় আসলেও সেই সেতুর ওয়াদা মুখেই থেকে যায়, বাস্তাবায়নের কোন উদ্যোগই নেওয়া হয়নি। তাই ২০০৬ সালে ক্ষমতা থেকে বিদায় নেয়ার পূর্বে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য এডভোকেট আবুল কালামের বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মাধ্যমে হাজীগঞ্জে শীতলক্ষ্যা সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনকে রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি বলে আখ্যায়িত করেন অনেকেই। এরপর রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ঘটে। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে এই সেতুর স্বপ্ন দেখান একেএম নাসিম ওসমান। কিন্তু নাসিম ওসমান এই শীতলক্ষ্যা সেতু নির্মাণে ভূমিকা রাখতে না পারলেও মদনগঞ্জ-সৈয়দপুর এলাকা দিয়ে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু নির্মাণে ভূমিকা রাখেন।
২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সময় মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াত আইভীও এই সেতু নির্মাণের ওয়াদা করেন বলেন বলে বন্দরবাসী জানান। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। এরপর ২০১৬ সালের সিটি নাসিক নির্বাচনের সময়ও মেয়র প্রার্থী আইভী এই সেতুর বিষয়টি গুরুত্ব আরোপ করেন এবং নির্বাচিত হওয়ার পর নবীগঞ্জ ঘাট ও ৫নং খেয়াঘাটে সেতু তৈরির জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয় এবং ৫নং খেয়াঘাট এলাকা দিয়ে হবে সেতু নির্মাণ হবে বলে ঘোষণা করা হয়। সেই সেতুর নামকরণ করা হয় কদম রসুল সেতু।
২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর একনেকের সভায় ৫৯০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে কদম রসুল সেতু নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়। এরই মধ্যে ২০১৬ সালের বন্দরে অনুষ্ঠিত এক মত বিনিময় সভায় নিজস্ব অর্থায়নে শীতলক্ষ্যা নদীর উপর একটি টানা ব্রিজ নির্মাণের ঘোষণা দেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। তবে এসব এখন বন্দরবাসীর কাছে শুধু স্বপ্নই মনে হয়। বাস্তবে কবে রূপ নিবে, তা বলতে পারছেন না কেউ। কিন্তু এখনও সেই কদম রসুল সেতু কিংবা টানা ব্রিজ কোনটাই বাস্তবে রূপ নেয়নি। আর খুব শীঘ্রই রূপ নিবে বলে মনে হচ্ছে না।
নবীগঞ্জ এলাকার বাইক আরোহী আরাফাত রহমান বলেন, আমরা বন্দরবাসী খুবই দুর্ভাগা। সময় পাল্টায়, ক্ষমতা পাল্টায়, নেতা পাল্টায় কিন্তু আমাদের ভাগ্য আর পাল্টায় না। আমাদের ভাগ্য নিয়ে সবাই ছিনিমিনি খেলে। গাড়ি নিয়ে ৫মিনিটের রাস্তা পার হতে আমাদের সময় লাগে আধঘন্টা থেকে একঘন্টা। তাও আবার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যেতে হয়। আমাদের কোন ইমার্জেন্সী নেই, কোন সময়ের দাম নেই। ঝড়-বৃষ্টি, রোগ-বালাই কিংবা রাত-বিরাতে কোন জরুরী প্রয়োজন হলেও নিজেদের চেষ্টায় আগে শহরে যাওয়ার কোন উপায় নেই। যেতে হবে কর্তাদের ইচ্ছায়। অর্থাৎ তারা যে সময় পার করবেন সে সময়ই পার হতে হবে।
নাসিম ওসমান সেতুর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাই নাসিম ওসমান সেতু বন্দরবাসীর সেই স্বপ্নের সেতু হতো তাহলে বন্দর খেয়াঘাটে কিংবা নবীগঞ্জ খেয়াঘাটের এরকম চিত্র থাকতো না। এই ফেরি ঘাটে (হাজীগঞ্জ-নবীগঞ্জ ফেরিঘাট) ঘন্টার পর ঘন্টা বসে মশার কাঁমড় খাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতাম না। আর অন্যান্য ঘাটের কথাতো বাদই দিলাম।
এস.এ/জেসি