দেশ এগুলেও এখনো স্কুল থেকে শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ে : আবু সাঈদ খান
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৭:৪৪ পিএম, ১২ মার্চ ২০২৩ রোববার
দৈনিক সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাওয়া বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। কিন্তু এখনো প্রাইমারি স্কুল থেকে, হাইস্কুল থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা ঝরে পড়ে। সবার জন্য যে অধিকার সেটা স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরেও নিশ্চিত করা যায়নি। একই স্কুলের ছেলে মেয়েরা এখনো একই রকম পোশাক পড়তে পারেনা। একই রকম টিফিন খায়না। এমনকি অনেকে হয়তো টিফিনও খেতে পারেনা। এ বিষয়গুলি আমাদের খতিয়ে দেখা দরকার।
শনিবার সকালে মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন-শাহ্ শরীফুন নেছা সমাজ কল্যান সংস্থা আয়োজিত শিশুদের মধ্যে ব্যাগ ও স্কুল ড্রেস উপহার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। সাহিত্যিক-সাংবাদিক শরীফ উদ্দিন সবুজের জন্মদিন ও তার মা শাহ্ শরীফুন নেছার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নগরীর পুরাতন কোর্ট এলাকায় অবস্থিত জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগার মিলনায়তনে এ আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে আবু সাঈদ খান আরো বলেন, আমাদের শ্রেষ্ঠ সম্পদ মানব সম্পদ। আগে আমাদের স্কুলগুলির বেড়া ছিলো। ভবন ছিলো না। এখন সুন্দর ভবন হয়েছে। কিন্তু শিক্ষার আরো উন্নতি প্রয়োজন। অনেক স্কুলে অংকের, ইংরেজীর শিক্ষক নেই। খেলার মাঠ নেই। মাঠগুলি বেদখল হয়ে যাচ্ছে। সেখানে মার্কেট গড়ে উঠছে। শিক্ষার মানোন্নয়নের পাশাপাশি, স্কুল মাঠ তথা খেলাধুলা বিনোদনের ব্যবস্থাও থাকতে হবে।
তিনি বলেন, গ্রামের স্কুলগুলিতে দুপুরে বাচ্চারা বাসায় চলে যায়। কারন স্কুলগুলিতে খাবারের ব্যবস্থা নেই। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্কুলে লাঞ্চের ব্যবস্থা করা উচিৎ। সরকারের এদিকে লক্ষ রাখা উচিৎ। পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাক্তি বর্গ শিল্পপতি ব্যবসায়ী তাদেরও এগিয়ে আসা উচিৎ। সাংবাদিক সবুজ তার, তার বোনের জন্মদিন পালন না করে, মা’র মৃত্যুবার্ষিকীতে অন্য আয়োজন না করে বাচ্চাদের স্কুল ব্যাগ দিয়েছে আমি মনে করি এটি একটি অনুসরনীয় দৃষ্টান্ত।
তিনি বলেন, আমাদের সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে জমাট অন্ধকার এখনো বিদ্যমান। এ অন্ধকার দূর করতে পারে এই শিশুরা। এদের ভেতরে জ্ঞানের আলো জ্বালতে হবে। শিশুদের ভেতরে জ্ঞানের আলো জ্বালতে পারলে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ, বিজ্ঞান মনস্ক সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব। মানুষে মানুষে যে ব্যবধান আছে, হিন্দু মুসলমানের মধ্যে যে রেশারেশি আছে, সুন্নি কাদিয়ানিদের মধ্যে যে রেশারেশি আছে -এই রেশারেশি দূর করে আমরা যে স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম সেই বৈষম্যহীন বিভেদহীন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। সেই লক্ষে শিশুদের গড়ে তুলতে হবে।
অনুষ্ঠানে সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন মডেল গ্রুপের এমডি মাসুদুজ্জামান, ইব্রাহীম টেক্সটাইলের এমডি কানিজ ফাতেমা রিমা, নৌ-পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এর পুলিশ সুপার মোতাজ্জের হোসেন, সিআইডি হেডকোয়ার্টার্স এর পুলিশ সুপার মিনহাজুল ইসলাম, দৈনিক সংবাদের চীফ রিপোর্টার সালাম জুবায়ের, নারায়ণগঞ্জ মহিলা পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা লক্ষী চক্রবর্তী, শহর সমাজ সেবা কর্মকর্তা এ কে এম সাইফুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ জেলা শ্রমিক লীগের মহিলা সম্পাদিকা নীলা আহমেদ নিশি।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি মডেল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদুজ্জামান বলেন, মানুষ মানুষের পাশে না দাঁড়ালে দেশ এগিয়ে যেতে পারেনা। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে শিশুদের পরিচর্যা করতে হবে। যে শিশুদের পরিচর্যা ঠিক মতো হচ্ছে না তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তিনি বলেন, কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ পাইলট হতে চাও। কিন্তু আমি বলবো তোমরা ভালো মানুষ হও। আমাদের ভালো মানুষের খুব সংকট রয়েছে।
ইব্রাহীম টেক্সটাইল এর এম ডি কানিজ ফাতেমা রিমা বলেন, একজন নারী মুক্তিযোদ্ধা আজ এ মঞ্চে উপস্থিত রয়েছে তাকে দেখে আমি আপ্লুত। তিনি বলেন, আমরা অনেকে বাচ্চাদের ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বানাতে চাই। পাশাপাশি আমি বলবো আপানারা বাচ্চাদের ব্যবসায়ী হওয়ারও ধারনা দিন। এই দেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য।
নৌ-পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এর পুলিশ সুপার মোতাজ্জের হোসেন বলেন, শরীফ উদ্দিন সবুজের মা আজ পনেরো বছর ধরে নেই। কিন্তু তার মমত্ব বোধ আজো আমরা অনুভব করি। একটা জন্মদিনের অনুষ্ঠান যে কত সুন্দরভাবে উদযাপন হতে পারে তা আজকের অনুষ্ঠান না দেখলে বুঝা যায়না। অনুষ্ঠানে দেড়শ শিশুকে স্কুলব্যাগ ও একচল্লিশজন শিশুকে স্কুল ড্রেস প্রদান করা হয়। বিগত পনেরো বছর ধরে মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন-শাহ্ শরীফুন নেছা সমাজকল্যান সংস্থা এ কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।
এস.এ/জেসি