রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রেললাইন দখল করে ভাসমান দোকানের রমরমা ব্যবসা

আবু সুফিয়ান

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০১:০১ পিএম, ২৮ মার্চ ২০২৩ মঙ্গলবার


# ট্রেন বন্ধ থাকায় সরকারি জায়গায় বেপরোয়া ব্যবসায়ীরা

# কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় লাভবান স্থানীয় বিশেষ মহল
 

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেল যোগাযোগ বন্ধ তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে। আর এই সুযোগে শহরের এক নং রেলগেট থেকে দুই নং রেলগেইট পর্যন্ত এক কিলোমিটার অংশের দু'পাশই দখল করে বসেছে বিভিন্ন রকম ফলের বাজার, কাঁচাবাজার সহ বিভিন্ন পণ্যের দোকান। যদিও এ চিত্র ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকা অবস্থায়ও ছিল।

 

 

নারায়ণগঞ্জ শহরের দুই নং রেলগেট এলাকার এই চিত্র দেখলে বোঝার কোন উপায় নেই যে এটি রেললাইন নাকি বাজার। কিন্তু নিয়ম অনুসারে রেললাইনের দুই পাশের ১০ ফুট জায়গায় কোন ধরনের স্থাপনা রাখা যাবে না। রেল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় কোন রকমের নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে আজ দখল হচ্ছে সরকারি রেলের জায়গা। 

 

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নারায়ণগঞ্জের এক রেল কর্মচারী বলেন, এখন তো ঢাকা নারায়ণগঞ্জ ট্রেন চলাচল বন্ধ। আগে যখন ট্রেন চলাচল ছিল, যখন ট্রেন আসছে তখন শুরু হয় বিভিন্ন ভারসামাল ব্যবসায়ীদের দোকান সরানোর প্রতিযোগীতা। আবার যখন ট্রেন চলে যেত তখন ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন রকমের পসরা নিয়ে আবার বসতো রেললাইনের জায়গা দখল করে। এভাবেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিক্রেতারা বিভিন্ন রকমের জিনিস বেচাকেনা করতো।

 

 

অবশ্য এখানে যারা বিভিন্ন পণ্য কিনতে আসতো তাদেরও জীবনের ঝুঁকি ছিল। এই কর্মকর্তা বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন, আগে যখন ট্রেন চলত তখন ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটা ভয় ছিল কখন ট্রেন আসবে তাছাড়া রেল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে তৎপর ছিলেন। আর এখন ট্রেন বন্ধ তাই ব্যবসায়ীরাও অনেক বেপরোয়া হয়ে গেছে। আসলে রেল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় তারা তাদের ইচ্ছেমতো ব্যবসা পরিচালনা করছেন সরকারি রেলের জায়গা দখল করে। 

 

 

শহরের দুই নং রেলগেটের মো. আমিরুল ইসলাম নামের এক ফল বিক্রেতা বলেন, আগে ট্রেন চলত তখন আমাদের কেউ কিছু বলে নাই আর এখন তো ট্রেন বন্ধ এখন আমাদের কে কি বলবে ? এই ফল বিক্রেতার এ ধরনের কথায় বোঝা যায় রেললাইন দখল করা বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা কতটা বেপরোয়া। কথা হয় পাশের আরেকজন ভাসমান ব্যবসায়ীর সাথে। আশরাফুল ইসলাম নামের এই ব্যবসায়ী যুগের চিন্তাকে বলেন, আসলে রেললাইন দখল করে ব্যবসা করা অবৈধ কিন্তু আমি পরিস্থিতির শিকার। অন্য কোথাও জায়গা না পেয়ে এখানে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করছি। 

 

 

নারায়ণগঞ্জের এ রেল পয়েন্টের কয়েকজন ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে, রেলওয়ের কর্মকতা ও ক্ষমতাসীনদের যোগসাজশেই বসছে এসব অবৈধ দোকানপাট। জানা গেছে, দোকানীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অংকের চাঁদা আদায়ের কারণে এসব অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করা হয় না। কিন্তু রেলওয়ে বিভাগ এই ধরনের কোন অভিযোগ তারা মানতে চায় না।

 

 

আবার তারা স্থায়ী কোন ব্যবস্থাও নিচ্ছেন না। আর এভাবেই তাদের মত দে বাংলাদেশের রেলওয়ের মত সরকারি জায়গা এবং রেল লাইনের ক্ষতি হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ রেল স্টেশনের এক কর্মকর্তার সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা নারায়ণগঞ্জ রোডে রেল লাইনের উন্নয়ন কাজ চলমান। এই কাজ শেষ হলে যখন রেল আবার স্বাভাবিক ভাবে চলবে তখন রেললাইনে দুপাশে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হবে। তবে স্থানীয়রা মনে করেন, রেললাইনের পাশে নির্মিত বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা এবং অবৈধ দোকানপাট সহ বিভিন্ন ভাসমান দোকান গড়ে ওঠার পেছনে স্থানীয় কিছু চক্রসহ রেল কর্তৃপক্ষ নিজেই দায়।

 

 

রেললাইনের পাশে অবৈধ স্থাপনা বন্ধে রেল কর্তৃপক্ষের কোন ভূমিকাই ছিল না বলে দাবি স্থানীয়দের। রেল কর্তৃপক্ষ সহ ক্ষমতাসীনরা বিশেষ সুবিধায় এবং তাদের সহযোগিতায় ব্যবসায়ীরা দোকান পরিচালনা করছেন নারায়ণগঞ্জের দখল করে। রেল বিভাগ থেকে নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযানের কথা বলা হলেও এ বিষয়ে রেলওয়ের কোন পদক্ষেপে ছিল না। যার কারণে এখানকার ব্যবসায়ীরা আরো বেপরোয়া। 

 

 

এ দিকে রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে গেন্ডারিয়া অংশে তিনটি পৃথক রেললাইনের নির্মাণকাজ চলমান থাকায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।

 

 

এতে বলা হয়, রেললাইনের নির্মাণকাজ চলমান থাকায় রোববার (৪ ডিসেম্বর) থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকছে। কাজ শেষে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে আবার ট্রেন চলাচল শুরু হবে বলে রেলপথ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তবে বিজ্ঞপ্তিতে কোনো নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করা হয়নি। রেল কর্মকর্তাদের ধারণা, এ কাজে অন্তত সাড়ে তিন মাস সময় লাগতে পারে। কিন্তু প্রাথমিক সেই সময়সীমা অর্থাৎ সাড়ে তিন মাস পেরিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক না হয় উদ্বিগ্ন এই রুটের সাধারণ যাত্রী।

 

 

জানা গেছে, ১২ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথে প্রতিদিন ২৬টি ট্রেন চলতো। তাতে পাশাপাশি দুই নগরে যাতায়াত করতেন ৩০ হাজারের মতো যাত্রী। এ দিকে ট্রেন বন্ধ থাকায় সেই চাপ পড়েছে সড়কে। ঢাকা নারায়ণগঞ্জ রুটের রেল যাত্রীদের সাময়িক অসুবিধার জন্য রেল বিভাগ দুঃখ প্রকাশ করলেও সেই যাত্রীদের বাসে যাতায়াতের জন্য গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা।

 

 

এছাড়া রেল বিভাগের ঐ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, কমলাপুর স্টেশন থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লাইন এবং পদ্মা সেতু প্রকল্পের রেললাইন পাশাপাশি গেছে গেন্ডারিয়া পর্যন্ত। সেখান থেকে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের লাইন কেরানীগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর, মাওয়া ও পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা জংশন দিয়ে যশোর পর্যন্ত যাবে। এন.হুসেইন/জেসি