দ্রব্যমূল্য তো বাড়বেই
করীম রেজা
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০২:২৩ পিএম, ৩০ মার্চ ২০২৩ বৃহস্পতিবার
৩০০ টাকার তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। নারায়ণগঞ্জ শহরের পত্রপত্রিকায় খবর প্রচার হয়েছে ফলাও করে। গ্রাহক স্বল্পদামে রোজার মাসে তরমুজ পেয়ে খুশি। কিন্তু এই খুশি একদিনের, স্থায়ী কিছু না।
ভোক্তা অধিকার কর্মকর্তারা অভিযান চালিয়েছে তাই খুচরা বিক্রেতারা কম দামে বিক্রি করেছে। তারপর যা আবার তা। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে রোজার আগে থেকে। রোজা উপলক্ষ করে একটু বেশি বাড়ে। রোজার পরে আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায় না। উচ্চমূল্য তখন সামান্য নীচের দিকে আসে।
ব্যবসায়ীদের দাম বাড়ার অনেক যুক্তি আছে, থাকে। একসময় ছিল ভোক্তার ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধির যুক্তি। দেশ উন্নতশীলতার ধাপে চড়তে যাচ্ছে যখন, তখন এক আধটু দাম ত বাড়বেই। এই বাড়াটুকু মেনে নিতে হবে বৈকি। বড়লোক হওয়ার একটা মূল্য ত চুকাতে হবে। কেননা জনগণের আয় বৃদ্ধি পেয়ে কেনার সক্ষমতা বেড়েছে। তাই দাম বাড়লেও কিনতে পারবে, পারতে হবে। কাজেই দাম বাড়বে, দাম বাড়া দোষের কিছু নয়।
ভোর রাতে সেহরী খেয়ে টিসিবির কমদামে পণ্য বিক্রয় কেন্দ্রে বা ট্রাকে বিক্রির স্থানে যে লাইন দিয়ে মানুষ ভীড় জমাচ্ছে, সেসব দেখে এখন আর ক্রয় খেমতা বাড়ার দোহাই কেউ দেয় না। যেমন দেয় না রাশিয়া আর ইউক্রেন যুদ্ধের দোহাইও। বড় বড় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কথাও আর তেমন শোনা যায় না । চিঁহি চিঁহি মিহি মিহি করেও কেউ আর এসব এখন মুখে আনে না। অপেক্ষা করতে হবে নতুন কোনও গল্পের।
মুরগি, গরুর মাংস, বেগুন, গো-খাদ্য নিয়ে এখন বাজার রমরমা। নানা দৃষ্টিকোন থেকে বিচার বিশ্লেষণ হচ্ছে, আরও হবে। ক্রেতা দোষী করবে দোকানীকে, দোকানদার বলবে পাইকারী বিক্রেতার কথা আর পাইকাররা জানাবে মিল মালিক, উৎপাদক বা বড় ব্যবসায়ী বা তাদের সিন্ডিকেটের দায়।
তবে কঠিন বাস্তবতা হলো শেষ পর্যন্ত দায়ী করার মত বাজারে, তল্লাটে এমনকি সারা দেশে কোনো উধুর খোঁজ মিলবে না বুধোর পিন্ডি চাপাতে। মাঝখান থেকে কিছু ঢাকঢোল পেটানো অভিযানের দ্বারা লোক-দেখানো-রকম কয়েকজন ছোট ব্যবসায়ীর ঘাড় মটকে দেয়ার প্রদর্শনী মঞ্চস্থ হবে। এদিকে ভোক্তার পিন্ডি সারা বছরই চটকানো চলে, চটকানো সহজও বটে।
নারায়ণগঞ্জে হঠাৎ করে তরমুজের দাম কমেছিল ভোক্তা অধিকার রক্ষাকারী একটি প্রতিষ্ঠানের আচমকা বাজারী অভিযানের ফলে। এখন যদি বলা হয় বা জনগণ যদি আশা করে, নিয়মিতই এমন অভিযান চালু থাকুক। যাতে আয়ের সঙ্গে মিল করে ব্যয় সমতা না ফিরলেও কিছু পরিমাণ লাঘব হবে। বাজারের সকল পণ্যই তখন সহনীয় এবং ন্যায্য মূল্যে বিক্রি হবে। এতে করে কেউ কারো পকেট কাটতে পারবে না। দোষারূপের সংস্কৃতিও হয়ত দূর হবে।
কিন্তু ভবীকে ভোলানো এত সহজ নয়। চারদিক থেকে তারস্বরে বলা হবে লোকবল সংকটের কারণে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা অসম্ভব। কথা নির্ভেজাল সত্য। এই অবস্থা সরকারী সব প্রতিষ্ঠানের বেলা সত্য। আরেক দিকের বিপরীত সত্য এই যে, দেশে কোটি কোটি বেকার লোকের সংখ্যা।
প্রতি বছর লাখে লাখে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে আরও লোকজন বেকার হচ্ছে। অশিক্ষিত বেকার ত থাকছেই। চাকরি করতে চাইলেও মিলবে না। ফলে সাগরে ডুবে মরার জন্য কেউ কেউ অতি সাহস করে বিদেশমুখী হচ্ছে। কেউ আবার বিদেশ গিয়ে বন্দী থাকছে, মুক্তিপণের বিনিময়ে দেশে আসছে। নিজে এবং পরিবার স্বজন সবাইকে সর্বস্বান্ত করছে।
সরকারী দপ্তরে জনবল সংকট ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পায়। নতুন নিয়োগ হয় না। সাধারণ মানুষ সেবা-সুযোগ বঞ্চিত থাকে। কর্মচারিদের উপর কাজের চাপও লাগাতার বাড়তে থাকে। একজন কর্মকর্তা একাধিক প্রকল্পের ভার বহন করে কোনও প্রকল্পই সময় মত শেষ করতে পারেন না।
প্রকল্পের সময় বাড়ে। ভোগান্তি বাড়ে জনগণের। আয় বাড়ে হাতে গোনা কয়েকজনের। ব্যয় বাড়ে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সাধারণের। জিনিসপত্রের দাম ত বাড়বেই। দেখার কেউ না থাকলে যা হয় । দেখার কেউ থাকলে কি হয় বা হতে পারে তা মাঝে মধ্যে একদিনের জন্য দেখা যায়। তরমুজের দামের কথা আবারও মনে পড়ে। আহা! পুরো মৌসুম যদি এমন দামে পাওয়া যেত! এন.হুসেইন/জেসি