রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

গণপরিষদ সদস্য মুক্তিযুদ্ধ সংগঠক আফজাল হোসেনের ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৪:০২ পিএম, ৩০ মার্চ ২০২৩ বৃহস্পতিবার


গতকাল ২৯ শে মার্চ বুধবার সাবেক গণপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও ভাষা সৈনিক আফজাল হোসেন এর ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়। এ উপলক্ষ্যে মরহুমের পরিবারের পক্ষ থেকে কবর জিয়ারত, কোরআন খতম, বাদ তারাবী মিলাদ ও দোয়া মাহফিল (তারা মসজিদে) অনুষ্ঠিত হয় ২৯ মার্চ, বুধবার।

 

 

বিশিষ্ট সমাজকর্মী ও রাজনৈতিক নেতা জনাব আফজাল হোসেন ১৯৩৪ সালে নারায়ণগঞ্জ শহরের ১নং বাবুরাইলে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা বিশিষ্ট কন্ট্রাক্টর ও সমাজ কর্মী আলহাজ্ব মুজাফফর আলী। তিনি নারায়ণগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়, জয় গোবিন্দ হাই স্কুল ও তোলারাম কলেজে অধ্যয়ণ করেছেন।

 

 

১৯৫২ সালে ছাত্র অবস্থায় তিনি মাতৃভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৬-৫৭ সালে তোলারাম কলেজে ছাত্র ছাত্রী সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এ নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে সকলের নজরে পড়েন। তিনি প্রথমে ছাত্র রাজনীতি ও পরে আওয়ামী লীগ সংগঠনের সঙ্গে জড়িত হন।

 

 

তিনি ১৯৬৪ সালে একাধারে নারায়ণগঞ্জ পৌর পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক, শহর আওয়ামী লীগের সহ সম্পাদক, দেওভোগ ইউনিয়ন কমিটির চেয়ারম্যান এবং পদাধিকার বলে পৌরসভার কমিশনার নির্বাচিত হন। এ ভাবেই তিনি সামাজিক এবং রাজনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে ১৯৬৬ সালে নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলনে নেতৃত্ব দান করে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন।

 

 

তিনি ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা রাখেন জনাব আফজাল হোসেন ১৯৭০ সালে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং ভারতে মুজিব নগর সরকারের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধ কালীন সময়ে তিনি বিহারের চাকুলিয়ায় বিশেষ সামরিক ট্রেনিং গ্রহণ করেন।

 

 

স্বাধীনতার পর গণপরিষদ সদস্য হিসাবে তিনি সংবিধান রচনায় সহায়তা করেন। তিনি ১৯৭৩ সালে পুনরায় জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বিভিন্ন সময়ে তোলারাম কলেজ, মহিলা কলেজ, নারায়ণগঞ্জ কলেজ, আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়, কার্য নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও বাংলাদেশ রেলওয়ে এডভাইজারী কাউন্সিল, নারায়ণগঞ্জ শহর উন্নয়ন কমিটি ইত্যাদির সদস্য পদে কাজ করেছেন।

 

 

জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজের সভাপতি পদেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। জনাব আফজাল হোসেন নারায়ণগঞ্জ চিত্ত বিনোদন সমিতির সভাপতি, কিন্ডার কেয়ার স্কুল এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, রহমত উল্লাহ মুসলিম ইনস্টিটিউটের সহ সভাপতি, বাংলাদেশ জুট এসোসিয়েশনের সহ সভাপতি। 

 

 

তানজিম এসোসিয়েশনের সদস্য, বাংলাদেশ টেলিগ্রাফ এন্ড টেলিফোন এডভাইজারী কাউন্সিলের সদস্য, চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রাস্ট এডভাইজারী সদস্য, নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার পরিদর্শক টিমের সদস্য, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির আজীবন সদস্য ও বাংলাদেশ ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন নারায়ণগঞ্জ শাখার প্রতিষ্ঠাতা দায়িত্ব পালন করছেন।

 

 

তিনি ডায়াবেটিক এসোসিয়েশনের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে নারায়ণগঞ্জে একটি ডায়াবেটিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি ১৯৭৫ সালে জাপানে অনুষ্ঠিত “ও.এস.কা” ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯১ সালে তিনি জাপানে লেবার ম্যানেজমেন্ট হিসেবে যোগদান করেন।

 

 

তিনি ব্যবসা সংক্রান্ত কাজে সরকারী ও বেসরকারী প্রতিনিধি হিসেবে ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, হংকং, কোরিয়া, পর্তুগাল, চীন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। তিনি ১৯৮৯ সালে হজ্বব্রত পালন করেন। ব্যক্তি জীবনে তিনি বিবাবিহত এবং এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক। ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তিনি ৭৭ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।

 

 

আফজাল হোসেন পুত্র তারেক আফজাল তাঁর পিতার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনার জন্য সকল মহলের নিকট আহ্বান জানিয়েছেন।  এন.হুসেইন/জেসি