রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

গ্যাস সংকটে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বিসিকের গৃহিণীরা

আবু সুফিয়ান

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৭:৫৩ পিএম, ৩১ মার্চ ২০২৩ শুক্রবার


# টিম টিম চুলা, পানি দিয়েই সারতে হচ্ছে ইফতারি


# রমজানে পরিস্থিতি সামাল দিতে চিন্তিত গৃহিণীরা


রমজান কেন্দ্রিক দুর্দশায় জর্জরিত শিল্পাঞ্চল নারায়ণগঞ্জের বিসিকবাসী। রমজান এলে হু হু করে বাড়ে দ্রব্যমূল্যের দাম। যানজটের ভোগান্তি বাড়ে বহু গুণ। দেখা দেয় তীব্র গ্যাসের সংকট। প্রতিবছর রমজান মাসে এ ধরনের সমস্যা নিরসনে সরকারিভাবে নেওয়া হয় বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ। তবুও রোজার মাসে খুব একটা কমেনা নগরবাসীর দুর্ভোগ।

 

 

আমাদের দেশে আমদানি করা এলএনজি সরবরাহ করা হয়ে থাকে। ফলে আমদানিতে ছেদ পড়লেই গ্যাসের কষ্ট শুরু হয়। প্রায় সময় গ্যাস সংকটে নাকাল হন নগরবাসী। অনেক সময় গ্যাসের চাপ কমে গেলেও মিটমিট জ্বলে চুলা। তাতে রান্না করা যায় না। রমজান চলে আসায় সেই শঙ্কা আরও বেড়েছে।

 

 


ষষ্ঠ রমজানে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বিসিকের অনেকেই ঘরে তাদের ইফতারির আয়োজন পূর্ণ করতে পারেননি। গ্যাসের তীব্র সংকটের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। সকালের দিকে চুলা টিম টিম চললেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে গ্যাসের সংকট আর তীব্র হয়।

 

 

 

গ্যাস না থাকায় বাইরে থেকে খাবার কিনে এনে ইফতার করেছেন এসব এলাকার অধিকাংশ মানুষ। রমজানে ইফতার তৈরিসহ রান্নার কাজে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন বিসিকের কয়েকটি পয়েন্টের বাসিন্দা। কোনো কোনো বাসায় একদমই গ্যাস ছিল না। কোথাও নিভু নিভু করে জ্বলেছে চুলা। যে পরিমাণ গ্যাস চুলায় জ্বলছে, তা দিয়ে ইফতারি বা রান্না তৈরি করার মতো অবস্থা ছিল না।

 

 

এ জন্য এসব এলাকার মানুষকে ইফতার দোকান থেকে কিনে এনে খেতে হয়েছে। এতে করে ইফতারসামগ্রীর দোকানে দেখা যায় ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। বিসিকের শাসনগাও এলাকার বাসিন্দা মোছা. নাজমা বেগম অভিযোগ করে বলেন, কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই আজ গ্যাসের চাপ না থাকায় তাদের বিপাকে পড়তে হয়েছে।

 

 

যদিও সকালের দিকে চুলা নিভু নিভু ছিল, কিন্তু এই আগুনে কোনো কিছুই করা সম্ভব হয়নি। কলাবাগানের বাসিন্দা ফরিদা আক্তার বলেন, দুপুর পর্যন্ত কোনো রকমে চুলায় রান্না করা গেছে। কিন্তু বিকালে আলুরচপ, বেগুনি ভাজতে গিয়ে দেখেন চুলা আর জ্বলছে না। পরে দোকান থেকে কিনে এনে ইফতার করতে হয়।

 

 

ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই রমজানের প্রথম দিন থেকে এভাবে গ্যাস না থাকায় তাদের বিপাকে পড়তে হয়েছে। ভাঙ্গা ক্লাব মোড়ের বাসিন্দা তানজিলা আক্তার বলেন, কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই এভাবে গ্যাস সংকট মেনে নেওয়া যায় না। সকাল থেকে কোনো রান্নাবান্না করা সম্ভব হয়নি। বাইরের খাবার কিনে খেতে হবে।

 

 

সকাল থেকেই নিভু নিভু আগুনে কোনো কিছুই করা সম্ভব হয়নি বলে জানালেন শাসনগাও এলাকার বাসিন্দা নার্গিস বেগম। তিনি বলেন, সকাল থেকেই তাদের এখানে গ্যাস না থাকার মতো। কোনো কিছুই করা যাচ্ছে না। রমজানে এ রকম পরিস্থিতি হবে চিন্তাও করা যায় না। কলাবাগানের বাসা গুলোতে দুপুরের আগে থেকেই গ্যাস সংকট চলছে।

 

 

ইফতারের সময় হয়ে হলেও শাসনগাঁও পূর্বপাড়ায় রাত পর্যন্ত চুলা জ্বলেনি বলে খবর পাওয়া গেছে। বিসিক এলাকার বাসিন্দা ফারজানা জানান, দুপুরের দিকে গ্যাস চলে যায়। তখন চুলা জ্বালানো যাচ্ছিল না। বিকালে গ্যাস আসলেও চাপ ছিল একেবারেই কম। এতে ইফতারি রান্না করতে কষ্ট হয়েছে।

 

 

বিসিক এলাকার বাসিন্দা রুহুল আমিন জানান, তার বাসা এবং আশপাশের বাসার লোকজনকে গ্যাসের জন্য দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। কখনো চুলা জ্বলে আবার কখনো জ্বলে না। বনশ্রী মোড়ের বাসিন্দা রওশন আরা জানান, গ্যাস থাকলেও আগের মতো চাপ নেই। এ জন্য রান্না করতে সমস্যা হচ্ছে।

 

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোনো কোনো এলাকায় সামান্য পরিমাণ গ্যাস ছিল। কিন্তু সে আগুনে ইফতারি বানানো থেকে শুরু করে দৈনন্দিন কোনো রান্না করার মতো অবস্থা ছিল না। এজন্য প্রায় সব এলাকার বাসিন্দাদের দোকান থেকে ইফতার কিনতে দেখা যায়। একই এলাকার বাসিন্দা ফারজানা বলেন, বিকালে অফিস থেকে ফিরে ইফতার বানাতে গিয়ে দেখি চুলায় গ্যাস নেই।

 

 

সেই গ্যাস সন্ধ্যা পর্যন্ত আসেনি। বাধ্য হয়ে ইফতার দোকান থেকে কিনে আনি। জানি না, গ্যাস কখন আসবে। শুধু ফারজানা নয়, গ্যাস সংকটের কারণে ওই এলাকার অনেক বাসাতেই ইফতার তৈরি করা যায়নি। ফলে সবাই বাইরে থেকে ইফতার কিনেছেন। কেউ কেউ বাসায় থাকা কেরোসিনের স্টোভের ওপর ভরসা করছেন।

 

 

মনোয়ারা বেগম নামের এক গৃহিণী বলেন, প্রায় সময় দুপুর পর্যন্ত বাসার চুলায় গ্যাস থাকে না। আবার যখন থাকে তখন গ্যাসের চাপ এতটাই ধীরগতি থাকে, রান্না করা যায় না। কিন্তু রোজার মাসে বাসায় ইফতার বানাব, অথচ আজকের দিনেও গ্যাসের এমন অবস্থা! সত্যিই দুঃখজনক।

 

 

 

ইফতেখার আহমেদ নামের একজন বলেন, গ্যাস পুরোপুরি সরবরাহ থাকে না এটা আমাদের এলাকার দীর্ঘদিনের সমস্যা। তাই বলে রোজার সময়ও গ্যাস থাকবে না এর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কী হতে পারে। মাস গেলে ঠিকই বিল দিই। অথচ রোজার দিনও ইফতার বাইরের হোটেল থেকে কিনে আনতে হলো।

 

 

পাশের বাসার মসিউর রহমান বলেন, সকাল থেকে গ্যাসের চাপ ছিল না। টিমটিম করে চুলা জ্বলছিল। দুপুরের পর থেকে চুলা একবারেই জ্বলেনি। বাইরে থেকে ইফতার কিনতে হয়েছে।

 


শীতকাল চলে গেলেও এখনো মাঝে মাঝেই চুলায় গ্যাসের সরবরাহ পাচ্ছেন না বিসিক এলাকার একটি বড় অংশের মানুষ। জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের নামে মাসে কয়েকবার নারায়ণগঞ্জ-আড়াইহাজারের আশপাশের এলাকায় বন্ধ রাখা হয় গ্যাসের সরবরাহ। এতে করে গ্যাস সংকটে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় এসব এলাকার বাসিন্দাদের।

 

 

বিতরণ সংস্থা তিতাস বলছে, রমজান মাসেও যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে এ রকম জরুরি শাটডাউন করতেই হবে। এতে করে রমজান মাসেও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। এর ওপর আবার পেট্রোবাংলা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেই দিয়েছে, রমজানে বিদ্যুৎ এবং শিল্পকে অগ্রাধিকার দিয়ে আবাসিক শ্রেণিতে গ্যাস সরবরাহ সীমিত রাখা হবে।

 

 

এতে করে আবাসিক খাতের গ্রাহকদের দুর্ভোগ বাড়বে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এই বিজ্ঞপ্তির মধ্যে এটা স্পষ্ট যে, রমজানে আবাসিকের গ্রাহকদের গ্যাসের সরবরাহ নিয়ে দুর্ভোগ পোহাতেই হবে। তবে জরুরি প্রয়োজনে শাটডাউন করলেও যেন ইফতার এবং সেহরি বানানোর সময়টায় সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা হয়, এমন দাবি জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের সাধারণ গ্রাহকরা। এন.হুসেইন/জেসি