যানজট নিরসনে সুফল নেই
লতিফ রানা
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৮:২৬ পিএম, ৩ এপ্রিল ২০২৩ সোমবার
# কিছুদিন ফাঁকা থাকলেও ধীরে ধীরে পুরানো চেহারায় ফিরে যায়
# শুধু কারণ চিহ্নিত নয়, সঠিক প্রয়োগও করতে হবে : শহরবাসী
# কিছু কারণ সৎ ও দায়িত্ববান হলে খুব সহজেই নিবারণ করা সম্ভব
নারায়ণগঞ্জ শহরের যানজটকে শহরবাসী অভিশাপ হিসেবে দেখে। সকাল সন্ধ্যার নিত্য যানজটে প্রতিনিয়তই নাকাল হতে হয় এখান দিয়ে চলাচলরত সকল যাত্রীগণকে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সভা সেমিনারে কিংবা মিডিয়ার সংবাদে এই যানজটের বিভিন্ন কারণ চিহ্নিত করে প্রশাসনের উদ্দেশ্যে উপস্থাপন করলেও ফলাফল জিরোই রয়েছে গেছে। তাই গত দুই বছর যাবত অন্তত পবিত্র রমজানকে কেন্দ্র করে এই যানজট নিরসনে প্রশাসনকে সহযোগিতাসহ উৎসাহিত করার জন্য নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমানের উদ্যোগে আর্থিক সহযোগিতাও করা হচ্ছে।
কিন্তু এই উদ্যোগে রোজার প্রথম কয়েকদিন শহরের রাস্তা অনেকটা ফাঁকা থাকলেও ধীরে সেই চিরচেনা আগের রূপেই ফিরে যেতে থাকে। তাইতো শহরের জনগণ রাস্তার পুরানো সেই চেহারাকে যেউ লাউ সেই কদু হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন কেউ কেউ।এর আগে শহরের যানজটের বিষয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাসহ স্থানীয় সচেতন মহল একাধিকবার বসে অন্যতম কারণ হিসেবে বেশ কয়েকটি বিষয়কে চিহ্নিত করলেও এখন পর্যন্ত সেই কারণগুলো নিবারণ কিংবা যানজট নিবারণ করা সম্ভব হয়নি।
এর মধ্যে যেসব কারণগুলোকে অন্যতম দায়ী হিসেবে চিহ্নিত করা হয় তাহলো শহরের প্রধান সড়কের মধ্যে একাধিক রেল ক্রসিং, শহরের ফুটপাত হকারদের দখলে চলে যাওয়া, শহরের মধ্যে অবৈধ ইজিবাইকসহ ব্যাটারী চালিত রিকশার অবাধ চলাচল, শহরের প্রধান সড়কের একাধিক জায়গায় সিএনজি এবং অটোর অবৈধ স্ট্যান্ড তৈরি করা, শহরের প্রধান সড়কগুলোর ব্যস্ততম জায়গার যেখানে সেখানে গণপরিবহন থামিয়ে যাত্রী ওঠানো, সড়কের যেখানে সেখানে প্রাইভেট কারসহ বিভিন্ন যানবাহন পার্কিং করে রাখা, মৌমিতা কিংবা হিমাচলের মতো ফিটনেস ও অনুমোদনবিহীন যানবাহনের দাম্ভিক চলাচল, যানজট নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বরত প্রশাসনিক বিভাগের উদাসীনতা এবং সাংবাদিক নামধারী কিছু ব্যাক্তির সাথে ট্রাফিক বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে অবৈধ যানবাহনের অবাধ যাতায়াতের রাস্তা করে দেওয়া। এসব কারণগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে শহরের এই গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম সড়কটি অনেকটাই যানজটমুক্ত থাকা যাবে বলে সচেতন মহলের ধারণা।
তবে এরমধ্যে শহরের প্রধান সড়কের মধ্যে একাধিক রেল ক্রসিংয়ের বিষয়টি এই মুহুর্তে নেই। তাই অন্যতম এই কঠিন সমস্যা যেটা ইচ্ছে করলেই বন্ধ করা সম্ভব নয় তা উন্নয়ন কাজের জন্য এখন বন্ধ আছে। গত বছরের রোজায় যানজট নিরসনে সাংসদ সেলিম ওসমানের উদ্যোগে দেওয়া দশ লাখ টাকা অনুদানের পর প্রথম রোজা থেকেই শহর একদম ফাঁকা ছিল বলে বিভিন্ন মিডিয়ায়ও সংবাদ প্রকাশ করা হয়। যার ফলে পুলিশ চাইলে সবই পারে নামে সংবাদও প্রকাশ করে দায়িত্বরত পুলিশ বিভাগের কাজের প্রশংসাও করা হয়।
কিন্তু দশ রোজা পার হতে না হতেই যানজটের অবস্থা ফিরে যায় সেই আগের চেহারায়। শহরবাসীর অনেকেই তখন অনেকটা মনোকষ্ট নিয়ে বলেছিলেন দশ লাখে শহর দশদিন যানজট মুক্ত ছিল। তাই এবার যখন সাংসদ সেলিম ওসমান যানজট নিরসনে কাজ করার জন্য পঁচিশ লাখ টাকা অনুদান দেন তখন এবার হয়তো কাজ হবে এই আশায় বুক বেধেছিল শহরবাসী। কিন্তু ক্রমে ক্রমে সেই আশাও ফিকে হওয়ার উপক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আবির হোসেন নামের এক রোগী জানান, তিনি শারীরিক অসুস্থতার জন্য শহরের ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে যাওয়ার উদ্দেশ্যে দুপুর সাড়ে এগারোটার সময় শহর সংলগ্ন পাঠানটুলি থেকে রিকশায় উঠেন। প্রথমে তিনি যাটজটে পড়েন হাজীগঞ্জ ফেরিঘাট এলাকায়। সেখান থেকে রেহাই পাওয়ার পর রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের সামনে এসে আবারও যানজটের কবলে পড়েন। এখান থেকে যানজটের মধ্যেই তাকে রিকশার মাধ্যমে একটু একটু করে এগিয়ে হাসপাতালে পৌছাতে হয়। ফলে তিনি সময় মতো হাসপাতালে পৌছাতে পারেননি। তাই তার পক্ষে আজকে (গতকাল) আর চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হয়নি।
পাইকপাড়াবাসী সামিন আক্তার জানান, পাইকপাড়া থেকে রিকশাযোগে চাষাঢ়ায় আসতে তার সময় লেগেছে প্রায় আধা ঘন্টা। অথচ হেটে আসলেও এখানে তার চেয়েও আগে আসা যায়। তিনি আরও বলেন রোজার প্রথম দিকে রাস্তা অনেক ফাঁকা দেখেছিলাম। তখন শুনেছিলাম আমাদের এমপি সাহেব নাকি যানজট নিরসনের কাজ করার জন্য বেশ কিছু টাকা দিয়েছে তাই রাস্তা এমন ফাঁকা। কিন্তু এখনতো দেখছি যেই লাউ সেই কদু। রাস্তার যানজট আবারও সেই একই অবস্থায় ফিরে গেছে। তাহলে এই টাকা দিয়ে লাভ হলো কি! যানজট কি কারণে হয় আমরা সেগুলো পত্রপত্রিকায় দেখি। কিন্তু শুধু কারণ দেখলেইতো চলবে না, কারণ দূর করার জন্যতো সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
শহরবাসীর মতে যানজট নিরসনে শুধুমাত্র কারণ চিহ্নিত করলেই হবে না। যে কোন ব্যবস্থাই প্রত্যেকের নিজেদের দায়িত্ব থেকে নিতে হবে। যানজটের উৎপত্তির একাধিক কারণ নির্ধারণ করা হলেও সব কারণ দ্রুত নিষ্পত্তি করা যাবে না। কিন্তু কিছু কিছু কারণ আছে যা একটু সৎ ও দায়িত্ববান হয়ে সঠিকভাবে প্রয়োগের মাধ্যমে খুব সহজেই নিবারণ করা সম্ভব। যারফলে শহরের যানজটের অন্তত অর্ধেক নিবারণ হবে বলে মনে করেন শহরের অতিষ্ঠ জনগণ।
এস.এ/জেসি