রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

প্রতিশোধ নিতেই আফজালকে হত্যা

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৮:০৫ পিএম, ৭ এপ্রিল ২০২৩ শুক্রবার

 

# আফজালের নামে ১৪ মামলা, জেল থেকে সম্প্রতি ছাড়া পান
# ইট-বালির ব্যবসার নামে সন্ত্রাসী তৈরী করে জুয়েল প্রধান

 

 

ফতুল্লায় প্রতিপক্ষের হাতে খুন হয়েছেন স্থানীয় দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী আফজাল (৪২)। গতকাল বৃহস্পতিবার ফতুল্লার কাশীপুর ইউনিয়নের পশ্চিম দেওভোগের হাশেমবাগ এলাকায় আফজালকে রিকশা থেকে তুলে নিয়ে রাস্তার পাশে হাত-পায়ের রগ কেটে হত্যা করা হয়েছে বলে জানা গেছে। আফজালের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, চুরি, ছিনতাই, মাদক ও মারামারিসহ বিভিন্ন অভিযোগে বিভিন্ন থানায় প্রায় ১৪টির মতো মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে। এর আগে আফজালকে একাধিকবার গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও পুলিশ সূত্রে জানা যায়। নিহত আফজাল পশ্চিম দেওভোগের প্রধানবাড়ির এবায়দুলের ছেলে।

 

স্থানীয়রা জানান, পশ্চিম দেওভোগের বাঁশমুলি এলাকায় রাজু বাহিনী ও সাল্লু বাহিনী নামে দু’টি সক্রিয় সন্ত্রাসী বাহিনী হিসেবে পরিচিত। এখানকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তারা প্রায়ই সংঘর্ষে লিপ্ত হতো। আফজাল ছিল রাজু বাহিনীর লোক। কিন্তু সম্প্রতি রাজুর সাথে আফজালের বিরোধ তৈরি হওয়ায় কিছুদিন আগে আফজাল তার সঙ্গীদের নিয়ে রাজু প্রধানের সহযোগী রাসেলের ভাই রাশেদকে কুঁপিয়ে আহত করে। যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয় এবং আফজাল গ্রেফতার হয়।

 

আফজালের ভাই মোফাজ্জল জানান, সকাল ৯টার দিকে বাঁশমুলি এলাকা দিয়ে যাচ্ছিল আফজাল। এ সময় রাজু, রাসেল ও রাশেদসহ প্রায় ১০/১২ জন মিলে আফজালকে হাসেমবাগ এলাকায় তুলে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে কুঁপিয়ে জখম করে। খবর পেয়ে তারা আফজালকে উদ্ধার করে শহরের জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। তবে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্য রাজু প্রধানকে স্থানীয় পঞ্চায়েতের লোকজন এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেয়ার পর থেকে আফজালের সাথে তাদের বিরোধ তৈরি হয় বলে জানায় মোফাজ্জল। ওই বিরোধের জেরেই আফজালকে খুন হতে হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

 

নিহত আফজালের স্ত্রী ইতি বলেন, আমার ছোট ছোট পোলাপাইন বাসায় আমি তাদের গিয়ে কি উত্তর দিমু। রাজু প্রধান ও সাজু প্রধান আমরা স্বামীকে অনেকদিন আগে হুমকি দিয়েছিল। যে তোরে রকির মতো মাইরা বস্তায় ভড়ে পাঠিয়ে দিব। আজকে ওরা আমার জামাইরে মাইরা লাইলো। আমি এই হত্যাকান্ডের সুষ্ঠ বিচার ফাঁসি চাই।

 

এ বিষয়ে নিহতের চাচা রাজু আহম্মেদ জানান, বাঁশমুলি এলাকার যে সন্ত্রাসী রাজু প্রধান, সাজু প্রধান, রাসেল, রাশেদ, যারা আছে এছাড়াও তাদের সাথে যে বহিরা-গতরা রয়েছে তারা সকলেই নূর মসজিদ, বাঁশমুলি, বাংলাবাজার এলাকাগুলোতেএমন কোন কাজ না নাই। যে তারা করে নাই সকল খারাপ কাজের সাথে তাদের হাত রয়েছে। তাই এলাকার থেকে তাদের এই প্রভাব প্রতিহত করার জন্য আমরা সবাই যেমন: মেম্বার, চেয়ারম্যান, প্রশাসনদের নিয়ে তাদের প্রতিহত করার লক্ষে আমরা মাঠে নেমেছিলাম।

 

তখন আমাদের সাথে এই আফজাল ও নেমেছিল। সেই জের ধরেই তারা যেখানেই যাকে পাচ্ছে মারধর করছে। তাদের প্রতিহতের পিছনে তারা যাকেই যেখানে পাচ্ছে ধরে হাত-পা ভেঙ্গে দিচ্ছে। সেই জেরেই আজকে আমার ভাতিজা আফজালের মৃত্য হলো। আজকে আফজলের একটি মামলার হাজিরা ছিল। তখন যাওয়ার পথে তাকে ধরে এই রাজু বাহিনীরা এলোপাথারী কুঁপিয়ে হাতের রগ কাটছে, পায়ের রগ কাটছে, কপালে কোপ দিছে। আমরা শুনেছিলাম কিছুদিন আগে ও এক ছেলের হাত-পা তারা সকলে মিলে ভেঙ্গে ফেলেছিল।

 

বর্তমানে আমরা শুনতে পেলাম এই রাজু বাহিনীরা তাঁতিপাড়া, ইব্রাহিম ব্রিজ এলাকায় একটু বেশি সময় দিচ্ছে। আর এই রাজু বাহিনীর যদি পতন না ঘটে তাহলে সামনে আরো মার্ডার হবে। এই রাজু প্রধানের নামে ২৯টি মামলা রয়েছে এর মধ্যেই ৩টি মার্ডার মামলা এছাড়াও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ১০/১৫ টা করে মামলা রয়েছে। আর যদি এদের কোন প্রতিহত না হয়। তাহলে এই এলাকায় জীবন ভরে মার্ডার হতেই থাকবে। আমি এই হত্যাকান্ডের সুষ্ট বিচার ও সকলের হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।

 

এলাকাবাসী জানান, কয়েক মাস আগে বাঁশমুলির সামনে সন্ত্রাসী রাজু প্রধান বাহিনীর অন্যতম সন্ত্রাসী রাশেদকে হোন্ডা থেকে নামিয়ে আফজালসহ বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী কুপিয়ে হাত ও পা ভেঙ্গে দেয়। সে সময় এ ঘটনার ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেই মামলায় আফজালসহ হুকুম দাতা জুয়েল প্রধান গ্রেফতার হয়। বেশ কয়েকমাস জেল খাটার পরে আফজাল জামিনে বেরিয়ে আসেন এবং হুকুম দাতা জুয়েল প্রধানও কয়েকদিন জেল খাটেন।

 

এলাকাবাসী আরও জানান, এই এলাকার প্রধান শেল্টার দাতা হচ্ছে জুয়েল প্রধান। শুরু থেকেই তারা ইট-বালির ব্যবসার নামে এসব সন্ত্রাসী তৈরী করে। রাজু প্রধান জুয়েল প্রধানের সম্পর্কে ভাতিজা। তার ছত্রছায়াই এই রাজু বাহিনীর উথান। পরবর্তিতে রাজু প্রধানের সাথে জুয়েল প্রধানের দ্বিমত হলে রাজু তার নিজের শেল্টারেই সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরী করেন। এই পর এলাকার মাদক ও সন্ত্রাস মুক্ত করার জন্য জুয়েল প্রধান তৈরী করে আফজাল প্রধান বাহিনী।

 

নিহত আফজালের নামে প্রায় ১২টি মামলা রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে আদালতে সেই মামলার হাজিরা দেওয়ার যাওয়ার পথে পূর্বে শত্রুতার জের ধরে আফজাল দেওভোগ মাদ্রাসার পূর্ব নগর মোড়ের সামনে থেকে তুলে নিয়ে হাসেমবাগ এলাকায় রাজু বাহিনীর অন্যতম সদস্য রাসেল, তার ভাই রাসেদ, হিটলার, আমির, শামীম সহ কয়েকজন মিলে এলোপাথাড়িভাবে কোপায় ও তার পায়ের রগ কেটে দেয়। পথে আফজাল নিয়ে রক্তাক্ত মাখা অবস্থায় অটো রিশকায় চড়ে তার বাড়ি দিয়ে যায়। সেখান থেকে তাকে জেনারেল ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত্য ঘোষণা করেন।

 

এ বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ রিজাউল হক দিপু জানান, নিহত আফজাল বেশ কয়েক মাস পূর্বে বাঁশমুলি অপর এক সন্ত্রাসী রাসেলের ভাই রাসেদকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে মারাক্তজখম করেন। বেশ কয়েকমাস চিকিৎসাধীন থাকার পর হাসপাতাল তেকে রাসেদ সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে আসেন। বৃহস্পতিবার সকালে যাওয়ার পথে আফজালকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে রাসেল ও তার ভাই রাসেদ সহ কয়েকজন কোপায়। নিহতর স্বজনরা শহরের ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে সে মারা যায়। এছাড়াও আফজালের বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডের থানায় ১২টি মামলা রয়েছে।

 

তিনি আরও জানান, আমাদের পুলিশে কয়েকটি টিম ঘটনা স্থলে আছে, অতি তারাতারি আমরা আসামীদের গ্রেফতার করব। এবিষয়ে নিহত আফজালের স্বজনরা জানান, আফজাল আগে রডের মিস্ত্রির কাজ করত। বর্তমানে সে সিমেন্ট এর ব্যবসা করে। আফজাল জুয়েল প্রধানে চাচাত ভাতিজা। এই জুয়েল প্রধানের কারণেই আজ আফজালের প্রান গেলো। তার নির্দেশে আফজাল রাসেদকে মারধর করেছিলো। সেই পূর্ব শত্রুতার জের ধরেই আজ তারা আফজালকে হত্যা করেছে।

 

এ বিষয়ে আফজালের বন্ধু সেলিম জানান, আমি সকালে কাজে যাওয়ার পথে তারা আমাকেও আটক করে। আমি দূরে পালিয়ে যাই। পরে ৯৯৯ নম্বরে পুলিশকে কল দিয়ে আমি তাদেরকে বিষয়টি জানালে তারা আমাকে বলে ওদের হাত-পা ভাঙ্গার সময় আপনাদের মনে ছিলোনা। পুলিশের এই কল রেকর্ডটি আমার কাছে আছে।  

এস.এ/জেসি