বৈশাখে ‘শান্তির বারি’ নিয়ে প্রস্তুত হচ্ছে না.গঞ্জ চারুকলা
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৪:১৯ পিএম, ১০ এপ্রিল ২০২৩ সোমবার
পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব। পুরাতনকে ঝেড়ে ফেলে নতুন বছরকে বরণ করে নিতে নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইন্টিটিউট ক্যাম্পাসে চলছে বর্ষবরণের প্রস্তুতি। আর মাত্র কদিন পরেই চৈত্রের বিদায় ঘন্টা বাজিয়ে বৈশাখের আগমন ঘটবে।
তাছাড়া, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ি এবার শিক্ষার্থীদের বাংলা নববর্ষ ১৪৩০ উদযাপনের আয়োজন করতে হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই। গত দু’বছর ধরে রোজার মধ্যে পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হয়ে আসছে।
এ উৎসবকে বরণ করে নিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন নারায়ণগঞ্জ চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। যুদ্ধ থেমে শান্তি ফিরুক পৃথিবীতে- এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রা থেকে এই আহ্বান জানানো হবে। সে কারণেই থিম নেওয়া হয়েছে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার পঙিক্ত থেকে, ‘বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি’। এই প্রতিপাদ্যে এবার সব মঙ্গল প্রতীকের নকশা করা হচ্ছে।
দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউট ভবনের দ্বিতীয় তলায় চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের দারুণ ব্যস্ততা। নানারকম ছবি আঁকছেন তারা, কেউবা গভীর মনযোগ দিয়ে জলরঙের ছবি আঁকতে মগ্ন।
কেউ নকশা করছেন মাটির হাড়িতে, কেউ রঙ তুলি দিয়ে ছবি আঁকছেন, কেউ মাটির সরা, রাজা-রানিসহ বিভিন্ন প্রাণীর মুখোশ ও মোটিফ তৈরি করছেন। অনেকে মিলে কাঠ ও বাঁশ দিয়ে তৈরি করছেন বিভিন্ন প্রাণীর কাঠামো। এ বছর রমজানের কারণে শুধু মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজন করবে নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউট।
পহেলা বৈশাখের প্রস্তুতি সর্ম্পকে চারুকলার শিক্ষার্থী সজিব মন্ডল বলেন, এবারেরও পহেলা বৈশাখ পবিত্র রমজান মাসে থাকায় আমাদের আয়োজন একটু স্বল্প পরিসরে করবো। আয়োজন কম হলেও রমজানে পহেলা বৈশাখ ভিন্ন রকম আমেজ ছড়াচ্ছে। বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের জন্য আমরা প্রতিবছরের ন্যায় এবারও সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি, পরিশ্রম করছি। আমরা যথাসময়ে আমাদের সব কাজ শেষ করতে পারবো বলে আশা রাখি। আর আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করছি, এটা সত্যিই আনন্দের।
তিনি আরও বলেন, বর্ষবরণ ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সব বাঙালির প্রাণের উৎসব। আর উৎসবের প্রধান অনুষঙ্গ এই মঙ্গল শোভাযাত্রা। ইতোমধ্যে এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এই কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরে সত্যি আনন্দিত। শুধু আমিই না, এখানে যারা আছে, সবার কাছেই গর্বের। সবাই এটাকে নিজের কাজ মনে করি।
নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী প্রিন্তি পাল বলেন, বর্তমানে বিশ্বে সব থেকে বড় সমস্যা যুদ্ধ। যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বের মানুষের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়েছে। যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান ও মানুষের মঙ্গল কামনা করে এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রতিদিন নিজেদের ক্লাস, পরীক্ষার ফাঁকে দুপুর আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এই প্রদর্শনী ও আঁকার কাজ। বাঙালির ইতিহাস স্বীকৃত এই ঐতিহাসিক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরে আনন্দিত তারা। নিজেদের কাজ মনে করেই এসব কাজ করেন বলে জানান তারা।
নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মো. সামছুল আলম আজাদ বলেন, এ বছর রোজার ছুটি হয়ে যাওয়ায় আমরা শুধু মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করেছি। এবারের প্রতিপাদ্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান- ‘বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি’। শান্তির প্রতীক হিসেবে আমরা কবুতরকে বেছে নিয়েছি।
আরও কিছু ব্যাপারে আমরা ভেবে রেখেছি। ওইরকম মেটারিয়াল পেলে সেটা পরে জানানো হবে। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের মিটিংয়ে আমাদের সরকার থেকে সিমিত পরিসরে পালন করার নির্দেশনা দিয়েছেন। এর পাশাপাশি লোকজ ঐতিহ্যগুলোও বিভিন্ন প্রতীকির মাধ্যমে মঙ্গল শোভাযাত্রায় ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হবে। পহেলা বৈশাখ যেহেতু গতবারও আমরা রমজান মাসে পালন করেছি, এবারও তাই করবো। শেখ রাসেল পার্কের মধ্যে আমরা এর শোভাযাত্রা করবো। এন.হুসেইন/জেসি