রমজানে চাহিদা বাড়ায় তিন গুণ দামে আনারস
আবু সুফিয়ান
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৪:২৩ পিএম, ১০ এপ্রিল ২০২৩ সোমবার
রমজান আসলেই আমাদের দেশে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া পুরোনো ঘটনা। রমজান আসলেই এখন নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা উদ্বিগ্ন থাকেন। রমজান আসার আগেই তাদের উদ্বেগ শুরু হয়ে যায়। রমজানজুড়ে সেই উদ্বেগ থাকে। উদ্বেগটি রমজানে নিত্যপণ্যের বাজারে দামের আগুণ নিয়ে।
রমজানের আগে থেকেই বেড়ে যায় বিভিন্ন পণ্যের দাম। এটাই সাধারণ ভোক্তারা দেখে আসছেন বছরের পর বছর। অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের চক্র রমজানে লাভের পুরোটিই তুলতে যেন অপেক্ষায় থাকে। বিশ্বের অন্য দেশে রমজান আসলে যেখানে দ্রব্যমূলের দাম কমানো হয়, বিশেষ অফার দেওয়া হয় আর আমাদের দেশে রমজান আসলে বিভিন্ন সিন্ডিকেটের কারণে জিনিসপত্রের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে।
আনারসের কথাই ধরা যাক। আনারস এখন বিশ্বের প্রধান ফলগুলোর একটি। এখন প্রায় সব দেশেই আনারসের চাষ হয়। যে আনারস রমজানের আগে বিক্রি হতো ২০ থেকে ২৫ টাকায়। সেই একই আনারস রমজান মাসে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। শিল্পাঞ্চল বিসিক সহ নারায়ণগঞ্জ শহরের বিভিন্ন ফলের দোকানসহ ভ্যান গাড়িতে বিক্রি হচ্ছে সুস্বাদু ফল আনারস।
নারায়ণগঞ্জের বিসিকের এক ভাসমান আনারস বিক্রেতা জসিম। জানান, রমজানের আগে এত বেশি চাহিদা ছিল না। রমজানে চাহিদা বেড়েছে। তাছাড়া কয়েকদিন ধরে গরম পড়ায় চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ বেশি। চাহিদা বাড়ার কারণে সরবরাহের সমস্যা থাকায় আমাদেরকে বাড়তি দামে আনারস কিনতে হচ্ছে তাই বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে।
এই দোকানে আনারস কিনতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী মো.আমিনুল ইসলাম। তিনি যুগের চিন্তা কে বলেন, রমজানের আগে যে আনারস ছিল ২০ টাকা, এখন সে আনারস ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমাদের কেউ বাধ্য হয়ে বাড়তি নামে কিনতে হচ্ছে। একই দোকানে আনারস কিনতে এসেছেন পোশাক কর্মী মিলন মিয়া।
তিনি বলেন সর্বশেষ ভ্যান গাড়ি থেকে আনারস কিনেছিলাম সপ্তাহ দুয়েক আগে। তখন ছোট সাইজের প্রতি পিস আনারস ছিল ২০ টাকা। আজ দুইটা আনারস কিনে দোকানদারকে চল্লিশ টাকা দেয়াতে দোকানদার জানান ২ পিস আনারস এখন ১২০ টাকা। কি আর করার বাধ্য হয়ে তিনগুণ টাকা দিয়ে দুই পিস কিনে নিলাম।
নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাড়া মোড়ে ভ্যান গাড়িতে করে আনারস বিক্রি করছেন মমিন মিয়া। তিনি যুগের চিন্তা কে বলেন রমজানে মানুষের চাহিদা বেড়েছে। কয়েকদিন থেকে গরম বাড়ায় আনারসের চাহিদা আরো বেশি বেড়েছে। আনারস কিনতে গেলে এখন আর আগের দাম আনারস পাচ্ছিনা। বেশি দামে আমাদেরকে কিনতে হচ্ছে তাই বেশি দামে আমাদেরকে বিক্রি করতে হচ্ছে।
আনারস বিক্রেতারা খুব সুন্দর করে দক্ষতার সঙ্গে আনারস কেটে বিক্রি করেন। আনারস কাটতে সত্যি দক্ষতার প্রয়োজন আছে। বঙ্গবন্ধু সড়কের এক আনারস ক্রেতা বলেন, সুন্দর করে কাটা আনারস খাওয়ার তৃপ্তিই আলাদা। আধপাকা বা পাকা আনারস রান্না করেও খাওয়া যায়। মাংস বা মাছের সঙ্গে আনারস অতুলনীয়।
কেবল সালাদ খেতে চাইলেও আনারসের জুড়ি নেই। আনারসের সালাদ যেমন পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ তেমনি সুস্বাদুও। এ ছাড়া টাটকা আনারসের জুস শরীরের ক্লান্তি দূর করে ঝরঝরে করে তুলে। আনারসের পুষ্টিগুণ থেকে জানা যায়, আনারসে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ এনজাইম ব্রোমেলেইন। এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি-পাওয়া যায়।
এই ফলে আছে ম্যাঙ্গানিজ নামক খনিজ উপাদান, যা দেহের শক্তি বাড়ায়। আছে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন বি-১, যা শরীরের জন্য অপরিহার্য। পাশাপাশি এই ফল খেলে শরীরে খুব কম ক্যালরি সঞ্চিত হয়। সুতরাং মুটিয়ে যাওয়ার ভয়ও থাকে না। প্রতি ১০০ গ্রাম আনারস থেকে পাওয়া যায় মাত্র ৫০ কিলোক্যালরি।
তা ছাড়া এতে কোনো কোলেস্টেরলও নেই। এতে আছে পেকটিন নামক গুরুত্বপূর্ণ ডায়েটরি ফাইবার। ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের নানা উপদান যেমন ফলেট, থায়ামিন, পাইরিওফিন ও রিবোফ্লোবিনও পাওয়া যায় আনারস থেকে।
আনারস খেলে অনেক উপকার হয়। আনারস দেহের গ্ল্যান্ড বা গ্রন্থিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। গয়টার অর্থাৎ থাইরয়েড গ্রন্থির স্ফীত হওয়া প্রতিরোধ করে। নিয়ন্ত্রণ করে উচ্চ রক্তচাপ। এটি আর্থরাইটিস উপশমে সহায়তা করে। তা ছাড়া কৃমিনাশক হিসেবে কাজ করে। ক্ষুদ্রান্ত্রের জীবাণু ধ্বংসে উপকারী।
পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য কমায় এবং মর্নিং সিকনেস অর্থাৎ সকালের দুর্বলতা দূর করে। এটি জরায়ু, স্তন, ফুসফুস, অন্ত্র ও ত্বকের ক্যানসার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বার্ধক্যজনিত চোখের ত্রুটি প্রতিরোধে সাহায্য করে। আনারস জ্বর ও জন্ডিস রোগের জন্য বেশ উপকারী।
এক কথায়, দেহের পুষ্টি সাধন এবং দেহকে সুস্থ, সবল ও রোগমুক্ত রাখার জন্য এটি একটি অতুলনীয় এবং কার্যকর ফল। তাই আমাদের প্রচুর পরিমাণে আনারস খাওয়া উচিত। কিন্তু আজকের দ্রব্যমূল্যের এই উর্ধগতির বাজারে অতিরিক্ত দাম দিয়ে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর জন্য নিয়মিত আনারস খাওয়া যেন স্বপ্নের মত। এন.হুসেইন/জেসি