রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ঢাকা-না.গঞ্জ ট্রেন : বেড়েই চলেছে যাত্রী ভোগান্তি

আবু সুফিয়ান

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৯:৩৮ পিএম, ১১ এপ্রিল ২০২৩ মঙ্গলবার

 

# দীর্ঘ চার মাস পেরিয়ে যাওয়ায় যাত্রী দুর্ভোগ চরমে
# ট্রেন চালু না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় লক্ষাধিক ঈদ যাত্রী

 

 

নেই যানজটের ঝামেলা, গুনতে হয় না অতিরিক্ত ভাড়াও। কোন ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই এ দুই সুবিধাকে সাথে নিয়ে স্বল্প সময়ে গন্তব্যস্থানে যেতে ট্রেনের কোন বিকল্প নেই। তাইতো নিম্ন আয়ের মানুষসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষের প্রথম পছন্দই ট্রেন। এই সুবিধা গুলোর জন্যই ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে প্রতিদিন প্রায় ৪০ হাজার ট্রেন যাত্রী যাতায়াত করে থাকেন। কিন্তু গত ৪ ডিসেম্বর পদ্মা সেতু রেল সংযোগ ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য এ রুটে রেল চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

 

নারায়ণগঞ্জের রেল স্টেশন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ট্রেন বন্ধের সময়সীমা প্রাথমিকভাবে তিন থেকে সাড়ে তিন মাস হবে বলে তারা ধারণা করছেন তারা। কিন্তু সেই সময়সীমা আজ পেরিয়ে গেছে। পেরিয়ে গেছে চার মাসেরও বেশি সময়। যার কারণে দীর্ঘ চার মাস ধরে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীসহ নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ। চার মাস পেরিয়ে গেলেও এ রুটের ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক না হওয়ার কারণে যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। শুধু কি তাই, যানজটের কারণে অতিরিক্ত ভাড়ার সাথে নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান কর্ম ঘন্টা।

 

নারায়ণগঞ্জের যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন অন্তত ৪০ হাজার মানুষ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচল করা ট্রেনে যাতায়াত করেন। সময় ও অর্থ সাশ্রয়ের জন্য ঢাকায় যাতায়াতের জন্য ট্রেনকে বেছে নেন যাত্রীরা। প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করে রেলপথটি চালু করার দাবি জানান তারা। সোমবার (১০ এপ্রিল) নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় রেল স্টেশনে দেখা যায়, ট্রেনের খবর নিতে এসেছেন বিসিকের পোশাক কর্মী মো. শাহজাহান।

 

তার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, তার বাড়ি রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম জেলায়। জানতে চাইলে তিনি তিনি যুগের চিন্তাকে বলেন, প্রতিবার ঈদে কমলাপুর রেলস্টেশনের যাওয়ার জন্য চাষাড়ার ট্রেনে করে কমলাপুরে যাই এবং সেখান থেকে লালমনি এক্সপ্রেস অথবা কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসে করে বাড়িতে যাই পরিবারের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য। আরো বলেন, চাষাড়া থেকে কমলাপুর রেলস্টেশনে ট্রেনে না গিয়ে যদি বাসে করে যাই তাহলে সময় অনেক বেশি লাগবে এবং ভাড়াও বেশি লাগবে। তাছাড়া ঈদের সময় বাস তেমন একটা পাওয়া যায় না। ঈদের সময় বাস, অটো, রিকশা, টেম্পু সবকিছুতেই বাড়তি ভাড়া দিয়ে যেতে হয় তাই চেষ্টা করি ট্রেনে যাওয়ার জন্য।

 

নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় রেলস্টেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে আগে ১৬ জোড়া ট্রেন চলাচল করলেও শনিবার পর্যন্ত ১০ জোড়া ট্রেন চলেছে। নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশন থেকেই প্রতিদিন ১০ হাজার টিকিট বিক্রি হয়। এছাড়া ঢাকার কমলাপুর পর্যন্ত আরও পাঁচটি স্টেশন আছে। সবমিলিয়ে দৈনিক বিশ হাজারেও বেশি মানুষ ট্রেনে যাতায়াত করেন। ট্রেনে যাতায়াতকারীদের মধ্যে অধিকাংশই চাকরিজীবী ও শিক্ষার্থী। করোনা পরিস্থিতি লকডাউনের সময় ছাড়া দীর্ঘ বছরেও এই রুটে এতদিন ট্রেন চলাচল কখনও বন্ধ থাকেনি।

 

রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে গেন্ডারিয়া অংশে তিনটি পৃথক রেললাইনের নির্মাণকাজ ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের জন্য গত ডিসেম্বর থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের ট্রেন চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। কবে নাগাদ কাজ শেষ হবে সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু না জানালেও অন্তত তিন থেকে সাড়ে তিন মাস ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানাচ্ছেন রেলওয়ে কর্মকর্তারা। কিন্তু আজ সেই তিন থেকে সাড়ে তিন মাস পেরিয়েছে, পেরিয়ে গেছে চার মাস।

 

একই রেল স্টেশনে কথা হয় ব্যবসায়ী মো. আনোয়ার হোসেন এর সাথে। তিনি বলেন, বর্তমান মানুষের যে অবস্থা আর দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধগতি তাতে বেঁচে থাকা খুব কঠিন। মানুষ এখন চিন্তা করে কিভাবে অল্প খরচে বেঁচে থাকা যায় কিভাবে একটু খরচ কমানো যায়। এরকম চিন্তা শুধু এখন আর নিম্ন আয়ের মানুষ করে না মধ্যবিত্ত উচ্চবিত্ত সবাই এরকম চিন্তা ভাবনা করেন। আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত সবকিছু দাম বাড়ছে জ্বালানির দামও পিছিয়ে নেই।

 

তাই যাতায়াত ভাড়া বেড়েই চলছে। মানুষ এখন চিন্তা করে কিভাবে কম খরচে গন্তব্যস্থলে যাওয়া যায়। তাই সব সময় ট্রেনকেই বেছে নেয়ার চেষ্টা করে। তিনি বলেন, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ চার মাস পেরিয়ে গেছে। যার কারণে এই রুটের যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছে। এই ভোগান্তিতে স্কুল কলেজে পড়ুয়া ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে সব ধরনের যাত্রী সাধারণ। আজ তাদের দাবি একটাই যত দ্রুত সম্ভব এই রুটের ট্রেন চালু করা হোক।

এস.এ/জেসি