তীব্র দাবদাহের হাঁসফাঁস জনজীবন
তানজিলা তিন্নি
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৩:৫২ পিএম, ১৪ এপ্রিল ২০২৩ শুক্রবার
চৈত্র মাসের সাথে সাথে পবিত্র রমজান মাস প্রায় শেষের দিকে। রোজার শেষে ঈদের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সবাই। তবে এই ব্যস্ততার মাঝে যেন কর্মজীবনের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে চৈত্রের শেষের দিকের কাঠ ফাটা রোদ। বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ। তীব্র তাপ মাথায় নিয়েই করতে হচ্ছে জীবিকার কাজ।
বিশেষ করে বিপাকে পড়ছেন খেটে খাওয়া মানুষ। যাদের সারাদিনের রোদের মধ্যে মাথায় ঘাম পায়ে ফেলে রোজগার করতে হয়। একদিকে রমজান মাস তার উপর রোদের তীব্রতা। সারাদিন রোজা রাখার পর গরমের তীব্রতায় তৃষ্ণার্ত খেটে খাওয়া মানুষের নাভিশ^াস উঠেছে। আবহায়া অফিসের সুত্রে জানা যায়, ৩৬ থকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মাঝারি তাপপ্রবাহ এবং তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠে গলে তাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলে।
আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) নারায়ণগঞ্জে সবোচ্চ তাপমাত্র ছিল ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এবং আজ শুক্রবার ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্র বাড়তে পারে। তাছাড়া আগের বছরের তুলনায় এবছর গরমের প্রকোপ একটু বেশি। বৈশাখের শুরুর দিকে গরমের তীব্রতা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রোদের তাপ বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে নানা ধরনের রোগ। রোজার মাস হওয়া পুরো দিন রোদের মধ্যে পানাহার না করায় অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। পানি পান না করায় বিশেষ করে ডায়রিয়া, জ্বর, শ্বাসকষ্টের রোগীর সংখ্যা বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। বিশেষজ্ঞরা প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে পরামর্শ দিলেও কর্মজীবী লোকজন পিপাসা মিটাতে বাধ্য হয়ে ফুটপাতের শরবত, পানি পান করছেন। এতে করে পানিবাহিত অন্যান্য রোগও ছড়াচ্ছে দিন দিন। শিশুসহ বয়জেষ্ঠ্য যারা আছেন সবাই অতিষ্ট এই গরমে। গরম সহ্য না করতে পেড়ে অনেকেই দুর্বল হয়ে পড়ছেন।
গরমে অতিষ্ট রিকসাচালক আলী গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছেন। তার কাছে গরমের বিবরন চাইলে তিনি বলেন, সারা দিন রোজা রাইখা এতো খাটনি করতে পারি না। এই বেলা পর্যন্ত রিকসা চালাই কিন্তু তেমন কামাই হয় না। আমাগো দিন কাল এমনেই যায়। আমি এই একটু বিশ্রাম নেই আবার কাজে লাগি। এদিকে দাবদাহে রোজাদারদের কষ্টও বেড়েছে। রোজার মাস হওয়ায় একটু স্বস্তি পেতে ঠান্ডা শরবত, পানি, আইসক্রিম খেয়ে তৃষ্ণা মেটাতেও পারছে না মানুষ। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে জীববৈচিত্র্যের ওপর।
শহরের বাসিন্দা মৌমিতা সাহা বলেন, প্রচণ্ড গরম পড়েছে। বাচ্চা নিয়ে খুবই সমস্যায় আছি। ঘরের মধ্যে গরমে থাকা যায় না। আমার সন্তান গত তিন দিন থেকে জ্বর-সর্দি ও কাশিতে ভুগছে। জানি না কবে বৃষ্টির দেখা মিলবে। কলেজ শিক্ষার্থী ফাহমিদা মিমের কাছে এই গরমকে ‘আগুন’ মনে হয়েছে। মিম বলেন, দিনের বেলা রুমে বসে থেকেই মনে হচ্ছিল- গরমে মাথাটা ঘুরতেছে। ফ্যানের বাতাসে কিছু হয় না। বালিশ-বিছানা সবকিছু গরম। এই গরমে রোজা রেখে প্রচুর কষ্ট হচ্ছে। আর বাইরে না বের হয়েও উপায় নেই।এন.হুসেইন/জেসি