শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১   ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

 শেষ মুহুর্তের এসএসসি প্রস্তুতি: কিছু পরামর্শ

এন.হুসেইন রনী

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০২:০১ পিএম, ১৮ এপ্রিল ২০২৩ মঙ্গলবার



পবিত্র রমজান মাস, ঈদুল ফিতর, অত:পর ৩০ এপ্রিল, ২০২৩ শুরু হতে যাচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা; প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জীবনের প্রথম মাইলফলক। বিজ্ঞানী ফ্রাঙ্কলিন বলেছেন, “শিক্ষা ব্যতীত একজন প্রতিভাবান, খনিতে থাকার রূপার মত”। দীর্ঘ দশ বৎসরের শিক্ষা জীবনের মূল্যায়ন হয় এসএসসি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে। তাই এই পরীক্ষা প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জীবনের প্রথম ধাপ, এর মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু হয় উচ্চশিক্ষার।

 


যে সকল শিক্ষার্থী জীবনের প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে তাদের স্বভাবতই কিছুটা ভয় বা জড়তা থাকার কথা। অভিভাবকরা চিন্তা করতে পারেন; কিন্তু এটা ভুল। ভয় নয়, চলো ভয়কে জয় করি। পরীক্ষার পূর্বে ঠিক করে নাও তোমার প্রস্তুতি এবং লক্ষ্য-

 


১. পরীক্ষার আগে প্রবেশপত্র হাতে পাওয়ামাত্র এর ফটোকপি করে নিতে হবে। বাড়ী থেকে পরীক্ষার হলের উদ্দ্যেশ্যে বের হওয়ার আগে দরকারি জিনিসপত্র যেমনঃপ্রবেশপত্র, রেজিষ্ট্রেশন কার্ড, কলম, পেনসিল, ঘড়ি ইত্যাদি সঙ্গে আছে কি না, তা দেখে নেবে। প্রথম দিন পরীক্ষা শুরু হওয়ার অন্তত এক ঘন্টা আগে হলে পৌঁছার চেষ্টা করবে। পৌঁছেই প্রথমে সিটপ্ল্যান দেখে নেবে।

 


২. প্রস্তুতির পাশা পাশি শারীরিক প্রস্তুতি জরুরী। ব্যাবহারিক সহ প্রায় দেড় মাস পরীক্ষা হবে। এই সময়ে শারীরিক দিক থেকে সুস্থ থাকটা জরুরী। পড়াশুনার পাশাপাশি খাওয়া, ঘুম, বিশ্রাম এগুলোও নিয়ম মতো করতে হবে। বেশী রাত জাগবে না অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। শরীর সুস্থ না থাকলে ভালো প্রস্তুতি নিয়েও পরীক্ষায় তা প্রয়োগের সুযোগ পাবে না। টানা পড়াশুনা অনেক সময় বিরক্তির জন্ম দেয়। তাই কিছু সময় বিনোদনের জন্য রাখা যেতে পারে।

 


৩. আশে পাশের কারো কাছ থেকে সহায়তা পাবে এমন আশা নিয়ে পরীক্ষার হলে না যাওয়াই ভাল। নিজের ওপর শতভাগ বিশ্বাস রাখো তুমি পারবে। এর আগে নির্বাচনি, প্রাক নির্বাচনি, অনেক পরীক্ষায় সফল হয়ে এসেছো। তাই এই চূড়ান্ত পরীক্ষায় তোমাকে পারতে হবে, তুমি পারবে। মনে রাখবে আত্মবিশ্বাসটা খুব জরুরি।

 


৪. পরীক্ষার কেন্দ্রে কী কী নেওয়া যাবে বা কী কী করা যাবে না – এসব নিয়ম লেখা আছে প্রবেশ পত্রের পেছনের অংশে। পরীক্ষা কেন্দ্রে যে উত্তরপত্র দেওয়া হয় তাতেও কিভাবে উত্তরপত্রে লিখতে হবে, অতিরিক্ত পাতা নিলে তা কোথায় উল্লেখ করতে হবে, এসব বিষয়ে বিস্তারিত লেখা আছে। খাতায় মার্জিনের জন্য স্কেল ব্যবহার করবে।

 


৫. খাতা হাতে পাওয়ার পর সতর্কতার সঙ্গে নাম, রোল নম্বর রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ভুল হলে যত ভালো পরীক্ষা হোক ফল প্রকাশের ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেয়। তাই প্রয়োজন প্রথমে পেনসিল দিয়ে দাগিয়ে ঠিক হয়েছে কি না মিলিয়ে নিয়ে পরে বৃত্ত ভরাট করলে ভাল হয়। মনে রাখবে বিষয় কোড লিখবে প্রশ্ন পাওয়ার পর। বৃত্তের ওপর কোনো রকম কাটা ছেঁড়া বা ঘষামাজা করা যাবে না। সেট কোডে ভুল করা যাবে না। কোনো ভুল হলে সঙ্গে পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা পরিদর্শককে জানাতে হবে।

 


৬. ও এম আর শিট পূরনের ক্ষেত্রে ভুল হলে অনেকে বকাঝকা খাওয়ার ভয়ে পরিদর্শককে বিষয়টি জানায় না। এমনটি করলে বড় ধরনের জটিলতায় পড়তে হবে। যারা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কিংবা পরীক্ষক, তাদের সহনশীল মনোভাব পরীক্ষার্থীর আস্থা বাড়ায়। এস এস সি পরীক্ষায় ইংরেজী ও বাংলা দুই মাধ্যমে প্রচলিত আছে। তাই পরীক্ষার ডিউটিরত শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ এই ব্যাপারে সু-দৃষ্টি দিয়ে থাকে এবং পরিদর্শকদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়।  

 


৭. ‘সকল প্রকার শিক্ষা রুচি, নিষ্ঠা, দক্ষতা ও মনোযোগের উপর নির্ভরশীল’’ তাই প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়ার পর প্রতিটি প্রশ্ন মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর লেখা শুরুর আগে তার নম্বর সুন্দর হস্তাক্ষরে লিখতে হবে। প্রশ্নের নম্বর লেখার পর প্রশ্নপত্রের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে হবে। প্রশ্নের একটি উত্তর লেখা শেষ হলে সমাপ্তি চিহ্ন (#) দিয়ে দুই ইঞ্চি ফাঁকা রেখে নিচ থেকে পরবর্তী উত্তর লেখা শুরু করতে হবে।

 


৮. উত্তর লেখার সময় ভুল করে পৃষ্ঠা ফাঁকা থাকলে তা লম্বাভাবে কলম দিয়ে কেটে দিতে হবে। হাতের লেখা সুন্দর হতে হবে। সুন্দর না হলেও যেন পরিচ্ছন্ন হয়। লিখতে হবে দ্রুত, হাতের লেখা যেন বাঁকা না হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে। লেখার সময় অযথা কাটা কাটি বা ঘষামাজা করা যাবেনা। কাটতে হলে একটানে কাটতে হবে। পরীক্ষা শেষের অন্তত দশ মিনিট আগে সব প্রশ্নের উত্তর শেষ করতে হবে। এরপর রিভিশন দিতে হবে।

 


৯. রিভিশনের সময় খেয়াল করতে হবে- (১) প্রশ্ন পত্রের নম্বরের সঙ্গে উত্তর পত্রের নম্বরের মিল আছে কি না। (২) প্রতিটি পাতায় মার্জিন দেওয়া হয়েছে কি না। (৩) উত্তর পত্রের শিটে বৃত্ত ভরাট এবং অতিরিক্ত উত্তর পত্রের সংখ্যা লেখা হয়েছে কি না। (৪) উত্তর পত্রের অতিরিক্ত পাতা স্টেপল করা হয়েছে কি না। (৫) পরীক্ষার শেষ ঘন্টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে উত্তর পত্র কক্ষ পরিদর্শককে বুঝিয়ে দিতে হবে। উত্তর পত্র জমা দেওয়ার পর প্রবেশ পত্র, কলম পেনসিল, জ্যামিতি বক্স ইত্যাদি গুছিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে পরীক্ষা হল ত্যাগ করবে।

 


সবশেষে বলবো নিজের প্রতি আত্ববিশ্বাস ও আল্লাহর উপর ভরসা রাখবে। নিশ্চয় আল্লাহ পরিশ্রমী ও ধৈর্য্যশীলদের সাথে আছেন। সকল পরীক্ষার্থীদের জন্য রইল শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা। যেহেতু সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা তাই আশা করছি সবাই যেন তোমরা সৃজনশীলতার পুরোটাই এই পরীক্ষায় ঢেলে দিয়ে নিজেদের মেধা এবং প্রতিভার বিকাশ ঘটাও।

 

 

তোমাদের মধ্যে রয়েছে সৃজনশীল প্রতিভা তাই ডেল কার্ণেগী’র উক্তির মধ্য দিয়ে শেষ করছি- “যার মাঝে সীমাহীন উৎসাহ, বুদ্ধি ও একটানা কাজ করার গুণ থাকে, তবে তার সফল হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি”। লেখক- প্রাক্তন প্রভাষক, ইংরেজি বিভাগ; ফিরোজা বাশার আইডিয়াল কলেজ, ঢাকা। এন.হুসেইন/জেসি