রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নারায়ণগঞ্জের সকল মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ

এন. হুসেইন রনী

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৫:০৮ পিএম, ২৮ এপ্রিল ২০২৩ শুক্রবার


# সোমবারের মধ্যে নোটিশ পাঠাবে ফায়ার সার্ভিস

# রাজউকের কর্মকর্তাদের জোরালো ভূমিকা রাখার দাবি
 

নারায়ণগঞ্জের সকল মার্কেটই অগ্নিঝুঁকিপুর্ণ অবস্থানে রয়েছে বলে মনে করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা। সম্প্রতি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় নানা রকম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ফায়ার সার্ভিস। ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য অন্যতম প্রসিদ্ধ নারায়ণগঞ্জের অবকাঠামোতে পুরনো ভবনগুলোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক হবে বলে আশঙ্কা তাদের। নবনির্মিত ভবনগুলোতে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়টি আমলে নিয়ে ভবন নির্মাণ করা হয়নি বলে মনে করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা। এতে করে নারায়ণগঞ্জের সকল মার্কেট ও বিপণীবিতানগুলোই ঝুঁকিপূর্ণ বলে মত দেন তারা।

 

ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক (ডিএডি) ফখর উদ্দিন আহাম্মদ বলেছেন, “নারায়ণগঞ্জের প্রায় সকল মার্কেটই ঝুঁকিপূর্ণ। নারায়ণগঞ্জের ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট ও বিপণিবিতানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে জরিপ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে নারায়ণগঞ্জের শহরের সকল মার্কেট পরিদর্শন করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।”

 

 

ফ্রেন্ডস মার্কেট পরিদর্শন করে দেখা যায় মার্কেটের প্রতি তলার সিঁড়ির আশেপাশে দোকানগুলো এমনভাবে বসানো হয়েছে যে- যদি কোন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে তাহলে এই মার্কেটের সিঁড়িগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যাবে। ফায়ার সার্ভিস বিশেষভাবে দৃষ্টি দিয়েছে দোকানের সারিগুলোতে রাখা মালামালের দিকে। সিঁড়ি ও রাস্তার পাশে রাখা মালামাল চলাচলের পথকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। ফায়ার সার্ভিসের দলটি দেখতে পায় মার্কেটে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থাপনা নেই, নেই যথেষ্ট ফায়ার এক্সটিংগুইশার এবং অগ্নি-সতর্কীকরণ এলার্ম।

 

 

ফায়ার সার্ভিসের দলটি প্রতিটি মার্কেটের সাজসজ্জায় ব্যবহার করা জিনিসপত্রের দিকেও আঙুল তুলেছেন। অগ্নি-সতর্কতার অংশ হিসেবে এসব অতিরিক্ত সাজসজ্জাও সরিয়ে ফেলতে হবে বলে জানিয়েছেন সকল মার্কেট কর্তৃপক্ষকে।

 

 

ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক (ডিএডি) ফখর উদ্দিন আহাম্মদ বলেছেন, সমবায় মার্কেট-ফ্রেন্ডস মার্কেট-দেওভোগ-নয়ামাটি পাইকারি কাপড়ের মার্কেটসহ বেশ কিছু ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট রয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষে থেকে এই সবগুলো মার্কেটই সার্ভে করা হবে ক্রমান্বয়ে। সকলকেই আমরা নোটিশ পাঠিয়ে দিয়েছি; এবং তাদেরকে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে। কোন কোন মার্কেট কর্তৃপক্ষ নোটিশ পেয়েছেন; যারা পাননি তারা আগামী সোমবারের মধ্যে নোটিশ পেয়ে যাবেন।

 

 

তিনি আরও জানান, নারায়ণগঞ্জের সকল মার্কেটেই বিএনডিসি (বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড) অনুযায়ী প্রবেশ কিংবা বাহির হওয়া এবং অগ্নিনির্বাপণে যে ব্যবস্থা থাকার কথা, তা নেই। তাই আমার কাছে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে সকল মার্কেটই ঝুঁকিপূর্ণ। মার্কেটের মালিকপক্ষকে ঈদের পূর্বেও সর্তক করেছি, মাইকিং করেছি; ঈদের ছুটির পরে আগামী রবিবার থেকে আমরা পূনরায় মাঠে নামবো। মালিকপক্ষকে নিয়ে এ সার্ভে বা জরিপ করা হবে এবং পরবর্তী করণীয় জানিয়ে দেওয়া হবে।

 

 

আগুনের ঝুঁকির কারণ হিসেবে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মার্কেটগুলোতে আগুন নির্বাপণের ব্যবস্থা নেই, আলো-বাতাসের স্বল্পতা, বিদ্যুতের তারের ছড়াছড়ি ও সরু গলি। অনেক মার্কেটগুলোতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশের পর্যাপ্ত সড়ক নেই। হঠাৎ আগুন লাগলে বা দুর্ঘটনা ঘটলে অনেক মানুষ বের হওয়ার কোনো পথ নেই। বিশেষ করে চাষাঢ়া এলাকাতে যে মার্কেট ও বিপণিবিতানগুলো রয়েছে সেখানে আগুন নির্বাপণের জন্য কাছাকাছি পানির যোগানের কোন ব্যবস্থা নেই, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক।

 

 

দোকান মালিকেরা জানিয়েছেন, তারা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পক্ষ থেকে নোটিশ পেয়েছেন। বড় ক্ষতি এড়াতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পক্ষ থেকে যেই ধরণের সতর্কতামূলক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, তা তারা মেনে চলবেন।

 

 

ঝুঁকিতে থাকা এই মার্কেটের মধ্যে রয়েছে নয়ামাটি’র মার্কেট, রিভারভিউ মার্কেট, ডিআইটি মার্কেট, ২নং রেল গেইট মার্কেট, দ্বিগুবাবুর বাজার, কালির বাজার এবং শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের দুই পাশে গড়ে উঠা মার্কেটসহ অর্ধ-শতাধিক মার্কেট আগুনের ঝুঁকিতে রয়েছে।

 

 

নারায়ণগঞ্জের মার্কেট ভবনগুলো কেন এতটা দুঘর্টনাপ্রবণ এমন প্রশ্নে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ বলছে, নিয়ম না মেনে ভবন তৈরি, অনিরাপদ গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ, ত্রুটিপূর্ণ সংযোগ মেরামত না করাসহ ভবনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকা। ভবন নিরাপত্তার বিষয়ে রাজউক কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ঈদের ছুটির কারণে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

 

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নারায়ণগঞ্জ এখন টাইমবোমায় পরিণত হয়েছে। যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় বিপর্যয়। আর এ জন্য সেবা সংস্থাগুলোর দায়িত্বে অবহেলা ও জনগণের অসচেতনতাই দায়ী। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন বড় ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটলে শহরে একযোগে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে।

 

 

কারণ, অসংখ্য গ্যাস লাইন নগরীর তলদেশে জালের মতো ছড়িয়ে আছে। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের কাছে তার নকশাও নেই। তারা জানেও না কোথায় কোথায় গ্যাস লাইন রয়েছে! আবার সেগুলোর সংস্কারও করা হচ্ছে না। যদি সেগুলো বিস্ফোরণ হয়, তবে বিপুল পরিমাণ গ্যাস উদ্গিরণ হবে।

 

 

দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রতিটি ভবনে অটোভালভিং সিস্টেম নিশ্চিতের তাগিদ ফায়ার সার্ভিসের। অটোভালভিংয়ে নির্দিষ্ট মাত্রার কম্পন অনুভূত হলেই সবভবনের গ্যাস সংযোগ স্বয়ংস্ক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। আর তাতে গ্যাস বিস্ফোরণ সংক্রান্ত দুর্ঘটনা শতভাগ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে, বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।  এন.হুসেইন/জেসি