বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১   ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অবশেষে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সব বইয়ের সংশোধনী প্রকাশ করল এনসিটিবি

এন. হুসেইন রনী

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৫:৫৩ পিএম, ৩০ এপ্রিল ২০২৩ রোববার


অবশেষে চলতি শিক্ষাবর্ষের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠ্য বইয়ের ভুলভ্রান্তির সংশোধনী দিল জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। বহু আলোচনা-সমালোচনার পর শিক্ষাবর্ষের চার মাসের মাথায় সংশোধনীগুলো এনসিটিবির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে ১৩টি করে মোট ২৬টি বইয়ে ৪২৮টি ভুলের সংশোধনী আনা হয়েছে।

 

 

ষষ্ঠ শ্রেণিতে ২০২টি এবং সপ্তম শ্রেণিতে ২২৬টি ভুল সংশোধন করা হয়। দুই শ্রেণির ইংরেজি সংস্করণের (ভার্সন) বিভিন্ন বইয়ে ৮৫টি ভুল সংশোধন করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের জন্য বিশদ আকারে সংশোধনের কাজ চলছে।

 

 

সংশোধনীতে দেখা যায়, প্রতিটি বিষয়ের জন্য আলাদাভাবে এই সংশোধনী দেওয়া হয়েছে। কোন পৃষ্ঠায় ভুলগুলো কী ছিল, সেটি উল্লেখ করে সংশোধনীগুলো কী কী হবে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী একজন শিক্ষার্থীকে ১০টি বই পড়তে হয়। বিভিন্ন ধর্মের বই মিলিয়ে প্রতিটি শ্রেণিতে বর্তমানে মোট বই ১৩টি।

 

 

এনসিটিবির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, দুটি শ্রেণিতেই ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ অনুশীলন বইয়ে সবচেয়ে বেশি ভুল ছিল। বিতর্কের জেরে গত ১০ ফেব্রুয়ারি পাঠ্যপুস্তক দুটি প্রত্যাহার করে নেয় এনসিটিবি।

 

 

এ বিষয়ে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা দুটি পর্যায়ে পাঠ্যপুস্তক সংশোধনের কাজ করছি। চলতি বছরের চার মাস চলে যাওয়ায় যেসব বিষয়ে সংশোধন আনা একান্ত প্রয়োজন, তা সংশোধন করা হয়েছে। এগুলো বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানো হচ্ছে। শিক্ষকরা সংশোধনী দেখে শিক্ষার্থীদের পড়াবেন। এ ছাড়া ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের জন্য বিশদ আকারে সংশোধনের কাজ চলছে।’

 

 

ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বইগুলো নিয়ে সমালোচনার মধ্যে আছে, বানরের ছবি ব্যবহার করে বইয়ে বিতর্কিত ও অবৈজ্ঞানিক বিবর্তনবাদকে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রকৃতিবিরুদ্ধ ও দেশীয় সংস্কৃতি বিরোধী ট্রান্সজেন্ডার প্রমোট করা হয়েছে। সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলনী বইয়ে ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

 

 

মেয়ে ও ছেলেদের বয়ঃসন্ধিকালে যে পরিবর্তন হয় সে সম্পর্কে বিগত হাজার বছর ধরে পারিবারিকভাবেই বাচ্চারা জেনে আসছে। কিন্তু নতুন পাঠ্যবইয়ে বিষয়গুলো নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করা হয়েছে, যা ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বাচ্চাদের জন্য উপযোগী না বলে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা করা হয়।

 

 

এ বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, চলতি শিক্ষাবর্ষে নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবই পরীক্ষামূলক সংস্করণ। সংশোধনীগুলো এনসিটিবির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। আগামী শিক্ষাবর্ষে নির্ভুল পাঠ্যবই হাতে পাবে শিক্ষার্থীরা।

 

 

তিনি জানান, সংশোধনী জেলা-উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শ্রেণি শিক্ষকের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বইয়ে তা সংশোধন করে দেবেন। এবারের ভুলগুলো পরবর্তীতে আর থাকবে না।

 

 

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মো. মাহমুদুল হাসান ভূঁইয়া ও সিনিয়র শিক্ষক মাহবুবুর রহমান বলেন, “ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠ্য বইয়ের সংশোধনী সর্ম্পকে আমরা এনসিটিবি’র ওয়েব সাইটের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে আগামীকাল রবিবার স্কুল খোলার পর শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে।”

 

 

মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি পৌর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক বেগম রোকেয়া পদক-২০২০ প্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদা আক্তার বলেন, “আমাদের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষককে নির্দেশনা দিয়েছি, যাতে করে এনসিটিবি’র সংশোধনী ও দিক নির্দেশনা যথাযথভাবে মেনে চলা হয় এবং সে মোতাবেক শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হয়।”  এন.হুসেইন/জেসি