বুধবার   ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ২০ ১৪৩১   ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ উপেক্ষা করে নির্বিঘ্নে চলছে কোচিং বাণিজ্য

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০১:৩৬ পিএম, ৪ মে ২০২৩ বৃহস্পতিবার


# এ মাসে না আসলেও কোচিং’কে বেতন ঠিকই দিতে হবে বলে অভিযোগ অভিভাবকদের

# মনিটরিংয়ে অনীহা প্রশাসনের, নির্দেশনা নিয়েও আপত্তি আছে কোচিং পরিচালকদের
 

এসএসসি ও সমমান পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অমান্য করেই নারায়ণগঞ্জ শহরের কলেজ রোড, জামতলা, দেওভোগ, পাইকপাড়া, কালির বাজার, হাজীগঞ্জ, শিবু মার্কেট, গোদনাইল, আদমজী সহ বিভিন্ন স্থানে খোলা রয়েছে ৫ম-৮ম-৯ম-১০ম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির কোচিং সেন্টার। 

 

 

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় মঙ্গলবার (০১ মে) এসএসসি ইংরেজি ১ম পত্র পরীক্ষার আগের দিন এবং বুধবার (৩ মে) সকালে যে দিন পরীক্ষা চলছে সেদিনও নগরীর বিভিন্ন স্থানে কোচিং সেন্টার খোলা রাখার চিত্র ধরা পড়ে। জামতলা গভ. গার্লস রোড ও কলেজ রোড এলাকায় বেশ কয়েকটি কোচিং সেন্টারে ধরা পড়ে বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস করানোর চিত্র।

 

 

এর মধ্যে বুক ম্যান কোচিং সেন্টারের পরিচালক মাসুদ রানা’কে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অমান্য করে এসএসসি’র ইংরেজি পরীক্ষার দিনও কেন কোচিং সেন্টার খোলা রেখেছেন? তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমাদের কোচিং এসোসিয়েশন’র সভাপতি রুবেল স্যার এবং সাধারণ সম্পাদক চিনকু স্যার এবং প্রাক্তন সভাপতি ও সদস্য ‘টিপু স্যারের ব্যাচ’র পরিচালক টিপু স্যারের সাথে কথা বলেন।” 

 

 

কলেজ রোডের প্যারাগন কোচিং এর পরিচালক নিলয় বলেন, “আমরা সরকারের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল; আমরা সর্বদা সে নিয়ম-কানুন মেনে কোচিং পরিচালনা করে থাকি।” 

 

 

কালির বাজার এবং জামতলার অবস্থিত অথেনটিক কোচিং এর পরিচালক মেহেদি হাসান কোচিং খোলা রাখার কথা স্বীকার করে বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কোচিং সেন্টার খোলা রেখেছি। বর্তমানে আমরা সকল শ্রেণির ব্যাচ চালু রাখলেও; এসএসসি পরীক্ষার্থীদের পড়াই না।” 

 

 

এসএসসি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে মাসখানেক কোচিং সেন্টার বন্ধের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কেন খোলা রাখা হয়েছে, সেই প্রশ্নের নেই কোনো সদুত্তর। তবে কোচিং সেন্টার বন্ধে সরকারি নির্দেশনা থাকার পরও কোচিং কর্তৃপক্ষ খোলা রাখায়; তারা ক্লাসে আসছে বলে দাবি অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের। 

 

 

একজন শিক্ষার্থী তন্ময় (ছদ্মনাম) বলেন, আমরা কোচিং এর স্যারদের নির্দেশে বাধ্য হয়ে কোচিং এ আসি। আরেকজন শিক্ষার্থী জুনিয়া (ছদ্মনাম) বলেন, “এ মাসে না আসলেও বেতন ঠিকই কোচিং’কে দিতে হবে। এ বিষয়ে কোচিং এর পরিচালকদের জিজ্ঞাসা করেন; তারা বন্ধ রাখলে আমরা আসতাম না।” 

 

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিভাবক বলেন, “আমাদের প্রশ্ন করার প্রয়োজন নেই, আমরা পরিস্থিতির শিকার। কিছু বলতেও পারবো না। এই মাসের বেতন না আসলেও দিতে হবে। নইলে পরের মাসে বলবে, নতুন করে ভর্তি হতে হবে।”  

 

 

কলেজ রোডের বাসিন্দা আরেকজন অভিভাবক বলেন, “প্রশাসন চাইলে প্রতিটি কোচিং সেন্টারের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেক করলেই তারা সঠিক তথ্য পেয়ে যাবেন। এই রোডের আশেপাশের বাড়ির মালিকদের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেক করলেও পারে; প্রশাসন কী তা করবে!!”

 

 

নারায়ণগঞ্জ কোচিং এসোসিয়েশনের সভাপতি রুবেল বলেন, “আমাদের এসোসিয়েশনভুক্ত সকল কোচিং সেন্টারসমূহকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, তারা যেন সরকারি আদেশ মান্য করে কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখে। যদি এরপরেও এসোসিয়েশনভুক্ত কোন কোচিং খোলা রাখা হয়; তাহলে প্রশাসন তার আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবে। এতে আমাদের সংগঠনের কোন দায়ভার নেই।” 

 

 

এই প্রতিবেদক জেলা শিক্ষা অফিসে কোচিং সেন্টারগুলো খোলা থাকার প্রমাণসহ তথ্য উপস্থাপন করলে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবু তালেব বলেন, “শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অমান্য করে কোচিং সেন্টার চলছে; বিষয়টি আমার জানা ছিলনা। আমি ইউএনও স্যারের সাথে কথা বলে আগামীকাল হতে আমার আশেপাশের এলাকাগুলোতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবো।”  

 

 

জেলা শিক্ষা অফিসার মো. ইউনুস ফারুকী বলেন, “আজ আমি কর্মক্ষেত্রে যোগদান করেছি। তবু আপনারা যেহেতু আমাদেরকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। আমি বিষয়টি জেলা প্রশাসক স্যারকে জানাবো এবং আইনের ব্যত্যয় হয়ে থাকলে আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।”

 

 

তিনি আরো বলেন, “কোন স্কুল বা কলেজ শিক্ষক এসএসসি পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ উপেক্ষা করে কোন ব্যাচ বা কোচিং ক্লাস নিলে শিক্ষানীতি-২০১২ অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।” 

 

 

এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনই নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ গণমাধ্যমের মাধ্যমে সকলকে সর্তক করে দিয়ে বলেন, “কোন অনিয়ম-দুর্নীতি অথবা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান যেই হোক আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।” 

 

 

প্রসঙ্গত: এসএসসি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও গুজব প্রতিরোধে ২৬ এপ্রিল থেকে ২৩ মে পর্যন্ত সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তবে এই নির্দেশনা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন বেশ কয়েকটি কোচিং সেন্টারের সত্ত্বাধিকারী। তারা বলেন, এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য সব কোচিং সেন্টার কেন বন্ধ রাখতে হবে। এসময় কোচিং বন্ধ রাখলে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতেও ব্যাঘাত ঘটবে। তাছাড়া অনার্স পড়ুয়া শিক্ষর্থীরা যারা কোচিং করেন তাদের ব্যাপারটি আমলে নেয়া হয়নি। শুধুমাত্র এসএসসি শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে বাকি শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করে নির্দেশনাটি কতটা যুক্তিযুক্ত এব্যাপারটি দেখার আহবান জানিয়েছেন কোচিং সেন্টার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।