চলতি মাসেই চালু হতে পারে ট্রেন চলাচল
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৭:৩৪ পিএম, ৪ মে ২০২৩ বৃহস্পতিবার
দীর্ঘ প্রায় পাঁচ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল। এ কারণে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচল করা যাত্রীরা। কয়েকগুণ বেশি ভাড়া গুনে গণপরিবহনে করে চলাচল করতে হচ্ছে তাদের। তবে চলতি মাসেই ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচলের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন রেল কর্মকর্তারা।
নারায়ণগঞ্জের বেশিরভাগ মানুষ রেলপথ এবং সড়কপথে ঢাকায় যাতায়াত করেন। নারায়ণগঞ্জ শিল্পাঞ্চল এলাকা এবং ঢাকা লাগোয়া জেলা হওয়ায় নারায়ণগঞ্জের অসংখ্য মানুষ ঢাকায় গিয়ে এবং ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জে এসে অফিস করেন। ব্যবসা-বাণিজ্যের কারণেও যাতায়াত রয়েছে। ফলে রেলপথ এবং সড়কপথ দুটিতেই সাধারণ মানুষের চাপ থাকে।
তারই ধারাবাহিকতায় যাত্রীদের চাপ কমিয়ে আনতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে প্রতিদিন ৯ জোড়া ট্রেন আসা-যাওয়া করতো। সবমিলিয়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ১৮টি ট্রেন যাত্রীদের নিয়ে আসা-যাওয়া করে আসছিল। কিন্তু পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্পের কাজের স্বার্থে গতবছরের ৪ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়। এখন পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
সে সময় বাংলাদেশ রেলওয়ে জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল, সরকারের ফাস্ট ট্র্যাকযুক্ত প্রকল্প পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে গেন্ডারিয়া অংশে তিনটি পৃথক রেললাইন নির্মাণকাজ চলমান। কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী সব ট্রেন সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এ লাইনে পুনরায় ট্রেন চলাচল শুরু হবে।
ট্রেন চলাচল বন্ধের পর চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জে চাষাঢ়া রেলস্টেশন ও নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশনের মধ্যবর্তী লেভেল ক্রসিং গেট টি ২ এবং ১ পর্যন্ত ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণে ভূমি-সংক্রান্ত জটিলতা সরেজমিন পরিদর্শনে এসেছিলেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।
সে সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে অনেক লোক ঢাকায় আসা-যাওয়া করেন। এ ডাবল রেললাইন নারায়ণগঞ্জের মানুষের জন্যই হচ্ছে। ডাবল লাইন হয়ে গেলে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০টি ট্রেন চলতে পারবে। এটা হয়ে গেলে নারায়ণগঞ্জের ৭০-৮০ শতাংশ মানুষ ট্রেনে ঢাকায় যেতে পারবেন।
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেনের নিয়মিত যাত্রী ছিলেন কাউসার। তিনি যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘ট্রেন চলাচল বন্ধের কারণে আমাদের অনেক ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা এবং ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জে যাতায়াত করতে হচ্ছে। আমরা যারা মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ আছি তাদের জন্য অতিদ্রুত ট্রেন চলাচল শুরু করা দরকার।
স্বপন নামের আরেক যাত্রী বলেন, ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমাদের ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে। ব্যবসায়িক কাজে নিয়মিত ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচল করতে হয়। কিন্তু ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন যাতায়াত করা সম্ভব হয় না।
এ বিষয়ে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি জানান, ‘গত ডিসেম্বর থেকেই ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ওই সময়ে রেল কর্মকর্তারা বলেছিলেন, তিনমাসের মধ্যেই ট্রেন চালু করবেন। তিনমাসের জন্য সাময়িক বন্ধ থাকবে। বর্তমানে মে মাস চলছে। কিন্তু এখনো ট্রেন চালু হয়নি।
কথা হয় নারায়ণগঞ্জ স্টেশনের কেয়ারটেকারের দায়িত্বে থাকা মো. হানিফের সঙ্গে। তিনি যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘ট্রেন চলাচল বন্ধের কারণে এখন কর্মকর্তারা নিয়মিত আসেন না। মাঝে মধ্যে এলেও তাড়াতাড়ি চলে যান। শুনেছিলাম ঈদের পর চালু হয়ে যাবে। তবে লোকবল সংকটের কারণে সম্ভব হয়নি। সবাই ছুটিতে ছিলেন। তবে চলতি মাসেই চালু হয়ে যেতে পারে।
নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তা মিজান বলেন, ‘নির্দিষ্ট করে বলতে পারছি না কবে নাগাদ ট্রেন চালু হবে। এ বিষয়ে রেল কর্মকর্তারা বলতে পারবেন। তবে আমাদের ডিউটি চলমান। এখন ঢাকায় ডিউটি করছি। ট্রেন চালু হলে নারায়ণগঞ্জে ডিউটি করবো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. খাজা সুজন যুগের চিন্তাকে বলেন, কবে নাগাদ এ রুটে ট্রেন চলাচল আবার শুরু হবে তা আমার জানা নেই। তবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে শুনেছি, চলতি মাসের মাঝামাঝিতে ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে।
নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার কামরুল ইসলাম জানান, শুনেছি চলতি মাসেই চালু হতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা আসেনি। আশা করি ট্রেন চলাচল শুরু হয়ে যাবে।