রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইটভাটার ধ্বংস থেকে রক্ষায় এবার আদালতের আশ্রয়

লতিফ রানা

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ১২:১৫ পিএম, ২০ মে ২০২৩ শনিবার


# ইটভাটার সিংহভাগই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে করা হয়েছে

# সব অবৈধ ইটভাটার বন্ধের ব্যবস্থার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট

# নারায়ণগঞ্জে একটিও অবৈধ ইটভাটা থাকবে না : ডিসি
 

ইটভাটা নির্মাণের আইনানুযায়ী পরিবেশগত ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের ইট পোড়ানো লাইসেন্স ব্যতিত কোন ইটভাটা নির্মাণ করা যাবে না। আবাসিক, কৃষি জমি, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যিক এলাকা, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা বা উপজেলা সদর, সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা জলাভূমি, রেলপথ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক এলাকা ইটভাটার জন্য নিষিদ্ধ এলাকা।

 

 

এসব এলকার কমপক্ষে ১ (এক) কিলোমিটার জায়গার মধ্যে কোন ইটভাটা নির্মাণ করা যাবে না। একইভাবে ইট নির্মাণের জন্য জেলা প্রশাসকের অনুমোদন নিয়ে ইটভাটাগুলো মজা পুকুর, খাল, বিল, খাঁড়ি, দিঘি, নদ-নদী, হাওর-বাওড়, চরাঞ্চল বা পতিত জায়গা হইতে মাটি কাটিতে বা সংগ্রহ করিতে পারিবেন। তবে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত ইটভাটাগুলোর বেশিরভাগ ইটভাটাই এসব আইন কিংবা নিয়মকানুনের তোয়াক্কা করছে না।

 

 

আদালতের দেওয়া ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের প্রতিবেদন অনুযায়ী শুধুমাত্র ঢাকা বিভাগেই ৮৮৬টি অবৈধ ইটভাটা আছে। যার মধ্যে নারায়ণগঞ্জেই আছে ১৪২টি অবৈধ ইটভাটা। অন্যদিকে যেগুলো লাইসেন্স কিংবা ছাড়পত্র পেয়ে ইটভাটা স্থাপনা করেছে তার সিংহভাগই ইটভাটা নির্মাণ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

 

 

অর্থাৎ আবাসিক, কৃষি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিক এলাকার কমপক্ষে ১ (এক) কিলোমিটার জায়গার মধ্যে কোন ইটভাটা নির্মাণ করা যাবে না বলে উল্লেখ থাকলেও এইসব আইনকেই বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে এখানকার বেশিরভাগ ইটভাটা নির্মাণ করা হয়েছে।

 

 

বিভিন্ন সময় পরিবেশ দপ্তর ও প্রশাসন থেকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান চালালেও কার্যত স্থায়ী কোন ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না। নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জায়গার পরিবেশকে বাঁচানোর জন্য তাই আদালতের স্মরণাপন্ন হচ্ছেন বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। 

 

 

গত বছর পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষ হতে অবৈধ ইটভাটা বন্ধ বা উচ্ছেদের নির্দেশনা চেয়ে একটি রিট করা হয়। এই রিটের শুনানি নিয়ে গত ১৩ নভেম্বর হাইকোর্ট রুলসহ দেশের অবৈধ সব ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধের ব্যবস্থা নিতে এবং ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কাঠের ব্যবহার বন্ধ নিশ্চিত করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়।

 

 

যেখানে দেশের জেলা প্রশাসকদের সাত দিনের মধ্যে কার্যকর নির্দেশনা দিতে বলা হয় এবং এ বিষয়ে অগ্রগতি জানিয়ে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। এর ধারাবাহিকতায় প্রতিবেদন জমা পড়ে। একই সাথে ঢাকা ও বরিশালের বিভাগীয় কমিশনারও আদালতে প্রতিবেদন জমা দিয়ে জানান এ দুই বিভাগে মোট এক হাজার ৮৪টি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। যার মধ্যে ঢাকা বিভাগেই আছে ৮৮৬টি অবৈধ ইটভাটা।

 

 

এসব প্রতিবেদন দাখিলের পর এসব ইটভাটা বন্ধ ও উচ্ছেদের জন্য গত ১২ মার্চ এইচআরপিবির পক্ষে আরেকটি আবেদন করা হয়। সে আবেদনের শুনানির পর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এসব ইটভাটা বন্ধ ও উচ্ছেদ কাজ শুরু করতে বিভাগীয় কমিশনারদের নির্দেশ দেন আদালত। একই সাথে এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করে দুই সপ্তাহের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। 

 

 

এর মধ্যে সারাদেশে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে অভিযান চালানোসহ দ্রুত পদক্ষেপ নিতে গত ১ মার্চ দেশের সব জেলা প্রশাসককে (ডিসি) নির্দেশ দেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ অধিশাখা-১ থেকে ডিসিদের কাছে পাঠানো চিঠিতে দেশের সব অবৈধ ইটভাটা, বিশেষ করে অধিক ক্ষতিকর ইটভাটা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বন্ধ করতে বলা হয়। 

 

 

এবং লাইসেন্স ছাড়া নতুন করে গড়ে ওঠা ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রম জোরদার করতে বলা হয়। একই সাথে যে জেলাগুলোয় বৈধ ইটভাটার চেয়ে অবৈধ ইটভাটা বেশি, সেসব জেলা প্রশাসককে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে বলা হয়।  

 

 

তবে এই সময়ের মধ্যে আদালতের আদেশ অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জের সব অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ না হওয়ায় নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মঞ্জুরুল হাফিজ, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) ও পরিবেশ অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জের দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে তলব করা হয়েছে। আগামী ৩১ মে তাদেরকে আদালতে সশরীরে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি শওকত আলী চৌধুরী গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। 

 

 

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. মঞ্জুরুল হাফিজ জানান, হাইকোর্ট থেকে যে সকল ইটভাটা উচ্ছেদ করার যে নির্দেশ ছিল আমরা তা ভেঙ্গে দিয়েছি। যে কয়টা বাকি আছে সেগুলোও খুব শীঘ্রই ভেঙ্গে ফেলা হবে। অবৈধ ইটভাটা নারায়ণগঞ্জে একটিও থাকবে না। বন্ধ করা সম্ভব হইতেছে না বলতে কোন শব্দ নেই। আমরা সব অবৈধ ইটভাটাই ধ্বংস করে দিব।  এন. হুসেইন রনী /জেসি