শুক্রবার   ১৮ অক্টোবর ২০২৪   কার্তিক ৩ ১৪৩১   ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

ইটভাটায় বাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে না.গঞ্জ

লতিফ রানা

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ১২:০৯ পিএম, ২৩ মে ২০২৩ মঙ্গলবার

 

# রাজনৈতিক দলগুলোর ছত্র ছায়ায় থাকায় এমনটি হচ্ছে : হাসান ইউসুফ খান

 

 

ছোট্ট একটি জেলা নারায়ণগঞ্জ। অথচ এই ছোট ভূখন্ডের মধ্যেই জালের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে বয়ে চলেছে বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী, শীতলক্ষ্যা, বালু, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদী। বাংলাদেশের মানচিত্রে এই নদী কেন্দ্রীক জেলাটি প্রকৃতির অপরূপ ভান্ডারে সমৃদ্ধ হয়ে গড়ে নজর কেড়েছে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের দৃষ্টি। এসব নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা নারায়ণগঞ্জ শহর প্রাচ্যের ড্যান্ডি খ্যাতিসহ শিল্প ও বাণিজ্যে এখনও নেতৃত্ব দিয়ে চলছে।

 

অথচ কালের বিবর্তনে আজ সেই নারায়ণগঞ্জের পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে। এই পরিবেশ বিপর্যয়ে যেসব বিষয়গুলো দায়ী তার মধ্যে অন্যতম হলো অনিয়মতান্ত্রিকভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটা। এসব ইটভাটা থেকে নির্গত বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষণসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রচণ্ডভাবে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছে নারায়ণগঞ্জের লক্ষ লক্ষ বাসিন্দা। এই বিষয়টি এখনই কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে তা মারাত্মক আকারে ধারণ করবে বলে পরিবেশবাদীদের অভিমত।

 

বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যমতে নারায়ণগঞ্জে যতগুলো ইটভাটা তৈরি করা হয়েছে তার সিংহভাগই অবৈধ। এমনকি যেসব ইটভাটা পরিবেশ বিভাগের ছাড়পত্র ও প্রশাসনের সনদ গ্রহণ করে বৈধভাবে নির্মাণ করা হয়েছে বলে দাবি করা হয় তার বেশিরভাগ কারখানায়ই ইটভাটা আইনের তোয়াক্কা করা হয়নি। আবাসিক এলাকায় ইটভাটা নির্মাণ করা যাবে না, ফসলি জমির উপর ইটভাটা তৈরি করা যাবে না, হাসপাতাল কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক কিলোমিটারে ইটভাটা নির্মাণ করা যাবে না।

 

অথচ বেশিরভাগ ইটভাটাই আবাসিক এলাকা, কৃষি জমির উপর কিংবা তার আশেপাশে নির্মাণ করা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের কোল ঘেষে অথবা তার আশেপাশে করা হয়েছে। তাই বৈধ বলে যাদের দাবি করা হয় তারও সিংহভাগই অবৈধ বলে মনে করেন পরিবেশবাদীরা। জেলা প্রশাসন থেকেও ইটভাটা নিয়ন্ত্রণে মালিকপক্ষের সাথে আলোচনা এবং নিয়মিত অভিযান পরিচালনাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়। কিন্তু দিনশেষে তেমন কোন কাজের কাজ হচ্ছে না। অর্থাৎ অবৈধ ইটভাটা কমিয়ে আনাসহ ইটভাটাগুলো আইনের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। নারায়ণগঞ্জে বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদীর দুই তীরে গড়ে উঠেছে একের পর এক ইটভাটা।

 

বন্দর, সোনারগাঁও এবং রূপগগঞ্জ উপজেলায়ও অনেকটা প্রতিযোগিতার মাধ্যমেই গড়ে ওঠেছে এসব অনিয়ন্ত্রিত ইটভাটা। এসব ইটভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে ব্যবহৃত চুল্লি থেকে নির্গত বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ও ইটের গুঁড়ো বাতাসের সঙ্গে মিশে প্রতিনিয়ত দূষণ হচ্ছে পরিবেশ। এতে করে গাছপালা মরে যাওয়া, জমিতে ফসল না হওয়াসহ নদীতে মাছের সংকট দেখা দিয়েছে বলে পরিবেশবাদীদের অভিযোগ। পাাশাপাশি শ্বাসকষ্ট ও চর্মরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে বছরের পর বছর ভুগছে শিশুসহ সব বয়েসের মানুষ।

 

এই বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক হাসান ইউসুফ খান বলেন, আমাদের দেশে যে ইটভাটাগুলো তৈরি হচ্ছে তার বেশিরভাগই কারখানাই ইটভাটা তৈরির যে আইন আছে তা তারা মানছে না। তাছাড়া ইটভাটার মালিকগণ কোন না কোনভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর ছত্র ছায়ায় থাকায় তারা অনেক শক্তিশালী হয় এবং তাদের কাছে প্রশাসনও অনেকটা অসহায় হয়ে পড়ে। তাই এগুলো নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন অনেকটাই শিথিলতা প্রকাশ করে।

 

একই কারণে বিভিন্ন সময় এসব ইটভাটায় বিভিন্নভাবে অভিযান চালালেও তার বাস্তব বা দৃশ্যমান কোন ফলাফল আসতেছে না। অবৈধ ইটভাটা কমানোসহ ইটভাটাগুলোকে আইন মানতে বাধ্য করানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই বিষয়টি নিয়ে এখন আদালতের স্মরণাপন্ন হতে হচ্ছে। সম্প্রতি উচ্চ আদালত বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিয়েছেন এবং দিক নির্দেশনা দেওয়ার মাধ্যমে এগুলো নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

 

এসব ইটভাটাগুলো নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে আগামীতে এখানকার আবাসিক এলাকায় বসবাস করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। আবাদী জমি কমে গিয়ে খাদ্য উৎপাদন ব্যহত হওয়া, শিশু-বৃদ্ধ ও সর্বসাধারনের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি হবে বলে জানান তিনি।

এস.এ/জেসি