লাইসেন্স ছাড়া অস্ত্রে লাশের পর লাশ ফেলেছে
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৬:৫৯ পিএম, ৯ জুন ২০২৩ শুক্রবার
সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহবায়ক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি বলেছেন, ত্বকী হত্যার দশ বছর পেরিয়ে গেলেও সরকারের অঘোষিত ইন্ডেমনিটি বহাল রয়েছে। র্যাবের তৈরী করে রাখা অভিযোগপত্র দশ বছরেও আদালতে পেশ করা হয় নাই। তিনি বলেন, যে আজমেরী ওসমানের টর্চারসেলে ত্বকীকে হত্যা করা হয়েছে বলে র্যাব অভিযোগপ্রত্রে উল্লেখ করেছে, সে আজমেরী ও তার সহযোগীরা বীরদর্পে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে। এখন আজমেরী অস্ত্রের লাইসেন্স চাচ্ছে।
এতদিন লাইসেন্স ছাড়া অস্ত্রে লাশের পর লাশ ফেলেছে, এখন খুনের জন্য তার সরকারের অনুমতি লাগবে। পুলিশ তদন্তপত্রে তাকে লাইসেন্স দেয়ার জন্য সম্মতিও জানিয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, হত্যা মামলায় ১৬৪ ধারায় নাম আসার পরেও তাকে গ্রেপ্তার না করার উদাহরণ, অভিযোগপত্রে নাম আসার পরেও তাকে গ্রেপ্তার না করার উদাহরণ দেশে দ্বিতীয়টি নেই।
সরকারের এমনিভাবে একজন ঘাতকের পক্ষ নেয়ার নজিরও খুব কমই আছে। সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়েই শামীম ওসমান সরকারের ভেতরে এখন আরেক সরকার। তিনি আজমেরী ওসমানকে গ্রেপ্তার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেয়ার দাবি জানান। তিনি বলেন, সরকার মক্তিযুদ্ধের কথা বলে প্রতিনিয়ত মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী কাজ করে যাচ্ছে। মানুষের বিচার পাওয়ার অধিকার, ভোট দেয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার অধিকার সহ গণতান্ত্রিক সকল অধিকার হরণ করেছে।
তিনি ত্বকী, সাগর-রুনী, তনু ও নারায়ণগঞ্জের আশিক, চঞ্চল, বুলু, মিঠু সহ সকল হত্যার বিচার দাবি করেন। তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ১২৩ মাস উপলক্ষে গতকাল সন্ধ্যায় আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার ও মিলনায়তন প্রাঙ্গণে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত আলোক প্রজ্জ্বালন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
সংগঠনের সহ-সভাপতি ধীমান সাহার সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক শাহীন মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, নিহত ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব হালিম আজাদ, যুগ্ম আহ্বায়ক দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান মাসুম, খেলাঘরের জেলা সভাপতি রথীন চক্রবর্তী, নারায়ষগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এড. এবি সিদ্দিক, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি এড. জিয়াউল ইসলাম কাজল, সহ সভাপতি মুহাম্মদ সেলিম, উদীচী নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি জাহিদুল হক দীপু, বাসদ জেলা সদস্য সচিব আবু নাইম খান বিপ্লব, ন্যাপ জেলা সাধারণ সম্পাদক এড. আওলাদ হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের নির্বহী সমন্বয়ক অঞ্জন দাস ওয়ার্কার্স পার্টি জেলা সভাপতি হাফিজুর রহমান।
হালিম আজাদ বলেন, দশ বছর আগে ত্বকী হত্যার তদন্ত শেষ হয়ে অভিযোগপত্র তৈরী করে রাখার পরেও তা আদালতে পেশ করা হয় নাই। প্রধানমন্ত্রীর অনিচ্ছার কারনে এ হত্যার বিচার বন্ধ করে রাখা হয়েছে। ঘাতকরা চিহ্নিত হবার পরেও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রশাসন তাদের নিরাপত্তা দিচ্ছে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন আপনাকে ত্বকী হত্যার বিচার করতে হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরীর শায়েস্তা খাঁ রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় মেধাবী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দু’দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী শাখা খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানায়, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর তারই টর্চারসেলে ত্বকীকে হত্যা করা হয়।
এর পর থেকে ত্বকীর হত্যার বিচার শুরু ও চিহ্নিত আসামীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখ আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।এস.এ/জেসি