বিদ্যুৎ গিলে খাচ্ছে অবৈধ অটোরিক্সা
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৮:১৩ পিএম, ১০ জুন ২০২৩ শনিবার
# মধ্যে রাতে প্রায় ৪০ লাখ অটোর ৩ হাজার ৫০০মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন
# গ্যারেজগুলোতে অবৈধ সংযোগ এর বিরুদ্ধে সচেতন হতে হবে ডিপিডিসির
ব্যাটারিচালিত তিন চাকার ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা। এ ধরণের অবৈধ যানবাহনে ছেয়ে গেছে নারায়ণগঞ্জের শহর-বন্দর-গ্রামের হাটবাজারের অলিগলি। এসব অবৈধ যানবাহন ব্যাটারির মাধ্যমে পরিচালিত হয় এবং সেই ব্যাটারি কয়েক ঘণ্টা পর পর চার্জ দিতে হয়।
নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায় প্রতিটি রিকশা গ্যারেজেই নিষিদ্ধ এসব অটোবাইক ও রিকশার ব্যাটারি চার্জ করা হয়। বেশিরভাগ গুলোতেই ব্যবহার করা হচ্ছে অবৈধ বিদ্যুৎ লাইন। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মরত একশ্রেণির অসাধু ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী ওই সব অবৈধ সংযোগ দেন অর্থের বিনিময়ে। ফলে প্রতিদিন উৎপাদিত বিদ্যুতের একটা বড় অংশ গিলে খাচ্ছে এই ব্যাটারিচালিত রিকশা ও তিন চাকার ইজিবাইক।
বিদ্যুৎ সংকটে দেশ। নারায়ণগঞ্জ সহ সারাদেশে দফায় দফায় হচ্ছে লোডশেডিং। একদিকে তীব্র ও অসহনীয় গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ, অন্যদিকে তীব্র বিদ্যুৎ সংকট। মানুষের জীবন প্রায় ওষ্ঠাগত হওয়ার উপক্রম। তবে দেশের বেশির ভাগ বিদ্যুৎ গিলে খাচ্ছে অটো রিক্সা ও মিশুক অটো যা ব্যাটারির মাধ্যমে চলে তাদে প্রয়োজন হয় বিদ্যুৎতের। নারায়ণগঞ্জে পাড়া মহল্লায় অলিতে গলিতে গড়ে উঠেছে অবৈধ ভাবে রিক্সার গ্যারেজ যেখানে চার্জ করা হয় অবৈধ ব্যাটারি চালিত গাড়ি।
এলাকাগুলোতে যে সকল গ্যারেজ গুলো আছে তাদের দেখা যায় বেশিরভাগ লাইন অবৈধ লাইন, যার কারণে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। জেলা প্রশাসন বা ট্রাফিক বিভাগের কাছে সংখ্যার কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও ধারণা করা হয় পুরো নারায়ণগঞ্জ জেলার বর্তমানে কমপক্ষে ৫০ হাজারের বেশি অটোরিকশা চলাচল করছে।
জানা যায়, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও চার চাকার ইজিবাইকের ব্যাটারি চার্জে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ বিদ্যুতের খরচ হচ্ছে। সাধারণত একটি ইজিবাইক চালানোর জন্য চার থেকে পাঁচটি ১২ ভোল্টের ব্যাটারি প্রয়োজন। আর প্রতি সেট ব্যাটারি চার্জের জন্য গড়ে ৯০০ থেকে ১১০০ ওয়াট হিসেবে পাঁচ থেকে ছয় ইউনিট (দিনে বা রাতে কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা) বিদ্যুৎ খরচ হয়।
সে হিসেবে এক লাখ ইজিবাইক বা ব্যাটারিচালিত রিকশা চার্জের জন্য জাতীয় গ্রিড থেকে প্রতিদিন অন্তত ১১০ মেগাওয়াট এবং মাসে ৩৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হওয়ার কথা। কিন্তু ৮০ ভাগ গ্যারেজ চুরি করে ও লুকিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে এসব ব্যাটারি রিচার্জ করায় সরকার প্রায় ২৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ সহ সারাদেশে কয়েক লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও তিন চাকার ইজিবাইক চলাচল করছে।
অনুসন্ধান করে দেখা যায়, শুধু নারায়ণগঞ্জের আশপাশ নয়; সারাদেশে এই অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও তিন চাকার অটোবাইকের ব্যাটারি চার্জ দেয়া হয়। সারাদেশে জেলা-উপজেলা শহরগুলোতে বিদ্যুৎ চুরির অন্যতম প্রধান কারণ নিষিদ্ধ ইজিবাইক বা অটোরিকশা বন্ধ করা উচিত বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ। বেপরোয়া গতির কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। তবু চলছে এই বাহনটি। এর সংখ্যা গুণে শেষ করা মুশকিল। নিয়মের বালাই নেই পরোয়াও নেই। দেশের ৯০ শতাংশ গ্যারেজেই নিষিদ্ধ এসব অটোবাইকের ব্যাটারি চার্জ করতে ব্যবহার করা হচ্ছে অবৈধ বিদ্যুৎ লাইন।
অনেক স্থানে চলছে মিটার টেম্পারিংয়ের মতো ঘটনা। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন করে ইজিবাইক আমদানি বন্ধ ও পুরনোগুলো পর্যায়ক্রমে তুলে নেয়ার কথা থাকলেও তা কার্যকর হয়নি গত কয়েক বছরেও। মহাসড়কগুলোতে এই যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, নামধারী সাংবাদিক, জেলা ট্রাফিক পুলিশকে নিয়মিত মাসোহারা দিয়েই রাস্তায় চলছে অটোরিকশা।
এসব অটোরিকশার পেছনে হাজার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে। এদিকে সারাদেশে অটোরিকশা কি পরিমাণ বিদ্যুৎ খাচ্ছে তার সঠিক তথ্য বিদ্যুতের কোম্পানিগুলোর কাছে নেই বলে জানা গেছে। বিদ্যুতের ব্যবহার কমাতে সরকার দিনে এক ঘণ্টা লোডশেডিং শুরু করেছে। একই সঙ্গে সরকারি অফিসে বিদ্যুতের ব্যবহার কমানোর নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ চুরির অন্যতম প্রধান ইজিবাইক বা অটোরিকশা বন্ধ থামছে না। জেলাজুড়ে চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশার আধিপত্য।
প্যাডেলচালিত রিকশার চেয়ে এর গতি বেশি হওয়ায় দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনার শিকার অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করছেন। এতে অনেক পরিবারই নিঃস্ব হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বার বার নিষিদ্ধের কথা বলা হলেও বাস্তবে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
অটোরিক্সার বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় মন্ত্রী, জনাব নসরুল হামিদ (বিপু) বলেন, রাতের বলায় আমাদের অনেক বড় একটি বিদ্যুৎতে প্রয়োজন হয় কারণ সে সময় সকল অটো রিক্সা গুলো চার্জ দেওয়া হয়। আর তাতে ৩ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নিয়ে নেয় যার কারণে আমাদের আরো একটু সমস্যা হয় কিন্তু আমরা তা বন্ধ করি নাই। বাংলাদেশে প্রায় ৪০ লাখ অটো রিক্সা আছে। তাই সবাইকে একটু সচেতন হতে হবে। এস.এ/জেসি