বৈধ অস্ত্রে ভীতি তৈরি সজুর অবৈধটি বিক্রির অফার দেন লিমন
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৭:৪৩ পিএম, ১২ জুন ২০২৩ সোমবার
গতকাল দৈনিক যুগের চিন্তায় ‘গ্যানম্যানের ভয় দেখিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে প্রভাব দেখান বহু অপকর্মের হোতা সজু’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে সন্ত্রাসী সজুর আশেপাশেল লোকজন গা ঢাকা দিয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্র। এতে এলাকাবাসী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। সংবাদটি প্রকাশিত হওয়ার পর এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, অনেকেই নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৭নং ওয়ার্ডের মহাদানবে পরিণত হওয়া তানজিম কবীর সজুর সাথে গ্যানম্যান তার নিজস্ব বলে ধারণা করেছিল।
কিন্তু এখন তারা জানতে পেরেছেন আইএফএফ সিকিউরিটি থেকে গ্যানম্যান চুক্তির মাধ্যমে নিয়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করতেই এমন শোডউন করেছেন। তবে প্রশাসনের কয়েক ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক ভালো রাখায় সজুর এই কর্মকাণ্ডেও তৎপরতা দেখায়নি পুলিশ। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মিজানুর রহমান রিপন যুগের চিন্তাকে বলেন, সজুর সাথে গ্যানম্যান নিয়ে এলাকার বিভিন্ন জায়গায় শোডাউনের বিষয়টি এলাকার অনেক লোক আমাকে জানিয়েছেন।
যদিও আমার সামনে সরাসরি পড়েনি কখনো। অস্ত্রের লাইনেন্স থাকলেও এটি নিয়ে এভাবে শোডাউন করতে হবে কেন? তাছাড়া পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানতে পেরেছি, অস্ত্রের লাইসেন্সটি তার নিজের নামেও না। জনমনে ভীতি তৈরি করে এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকাই সমীচিন। এদিকে এব্যাপারে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা যুগের চিন্তাকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিলনা, আমি এব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখবো।
এদিকে দলবল নিয়ে সজুর বসে থাকা এবং পেছনে গ্যানম্যানের শোডাউনের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় আতঙ্ক তৈরি হওয়ার পাশাপাশি সেই ছবিতে থাকা ব্যক্তিদেও মধ্যে এক ব্যক্তি অতীতে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে একটি পিস্তল বিক্রির বিষয়ে পোষ্ট করেছিলেন সেটি সামনে এসেছে।
সজুর গ্যানম্যান নিয়ে শোডাউনের যে ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে সেখানে আলামিন, রনি, লিমন, স্বপন, শরীফ, কাউছার, জনি, সজিব এবং রাজু নামের ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছে সূত্র। এরমধ্যে লিমন নামের ব্যক্তি যিনি সজুর অত্যন্ত ঘনিষ্ট সে ম্যাসেঞ্জারে নানাজনকে একটি পিস্তলের ছবি দেখিয়ে বিক্রির জন্য আহবান করেছিলেন বলে জানায় সূত্র। সেই ছবিটিও অনেকে সামনে এনেছেন। অনেকেই ধারণা করেছেন, শোডাউন করা ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে সেই অস্ত্রের হদিস পেতে পারে প্রশাসন। লিমন নামের ওই ব্যক্তি সজুর অত্যন্ত ঘনিষ্ট বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, সরাসরি রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত না থাকলে সিদ্ধিরগঞ্জের ৭নং ওয়ার্ডে এক মহাদানবে পরিণত হয়েছেন তানজিম কবীর সজু। এলাকায় তিনি দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবেই পরিচিত। তাছাড়া কিশোর গ্যাংয়ের সংমিশনে তিনি তৈরি করেছেন সজু বাহিনী। আধিপত্য বিস্তার করতে মারামারি, হুমকি-ধমকি, ত্রাস তৈরি তার নিত্যনৈমত্তিক ঘটনা।
গত একবছরে ১০/১৫টা অপকর্মের মূল হোতা হিসেবে তার নাম সবার আগে। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে গ্যানম্যানের অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে এলাকায় আতঙ্ক তৈরি করে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উঠে। একই সাথে নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী সাংসদ শামীম ওসমানের অনুগত আওয়ামীলীগ নেতাদের সাথে সেলফি তুলে অপকর্মে নিজের প্রভাব আরো বাড়াতে মরিয়া হয়ে উঠেছে তিনি।
রাজনীতিতে কোন পদ-পদবী না থাকলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের সাথে সখ্যতা রেখেই তিনি এলাকায় এসব অপকর্ম করে পার পেয়ে যান বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গত তিন মাস ধরে গ্যানম্যান নিয়ে জনসম্মুখে চলাফেরা করে ভীতি তৈরি করে ত্রাস সৃষ্টি করে চলেছেন তানজিম কবীর সজু। অস্ত্রের লাইসেন্স থাকলেও তা প্রদর্শনের নিয়ম-নীতিকে তোয়াক্কা না করে দলবল নিয়ে শোডাউন করে এলাকায় জমিদখল, ভীতি প্রদর্শন এবং জনমনে আতঙ্ক তৈরি করছেন সেই গ্যানম্যানের সুবিধা নিয়ে।
এনিয়ে তীব্র আতঙ্ক ও ক্ষোভ বিরাজ করলেও ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি। সজু সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয়েছেন।
সূত্র জানিয়েছে, সজু যেই গ্যানম্যান নিয়ে শোডাউন করছেন। তা তার ব্যক্তিগত গ্যানম্যান নয়। আইএফএফ সিকিউরিটি থেকে গত তিন মাস ধরে একটি নির্দিষ্ট অর্থের চুক্তিতে তিনি ভাড়া করেছেন। তবে তিনি নিজে এটি করেননি। জামাল নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে সজু এই গ্যানম্যানের হদিস পান।
আর এই গানম্যান জামালের প্রতিষ্ঠান জিসান ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এর সুপারিশে সজু ভাড়া করেছেন। জামাল জিসান ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ম্যানেজিং ডিরেক্টর। সজু এই প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্টর বলে জানান জামাল। সম্প্রতি সজুর পেছনে গ্যানম্যান নিয়ে শোডাউন প্রসঙ্গে জিসান ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ম্যানেজিং ডিরেক্টর জামাল জানান, অস্ত্রের লাইসেন্স সজুর নামে নেই, অন্য প্রতিষ্ঠানের নামে।
প্রশাসনিকভাবেও সজুর গ্যানম্যান নিয়ে ঘোরার বিষয়টি অবগত। আমরা সাধারণত জেনারেটরের ব্যবসা করি। নিরাপত্তার স্বার্থে গ্যানম্যানের প্রয়োজন পড়েছে। গ্যানম্যান দেখিয়ে প্রভাব বিস্তারের বিষয়টি আমার জানা নেই, এমনিতেই গত কয়েকদিন যাবৎ লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় আমরা ব্যবসা নিয়ে অনেক ব্যস্ত। জনমনে ভীতি তৈরি হচ্ছে এই বিষয়টি আমরা বুঝতে পারিনি, প্রকাশ্যে আর গ্যানম্যান নিয়ে শোডাউন আর করবোনা। বিষয়টি আসলে আমরা কখনো ভেবে দেখিনি। সামনে আর এমন হবেনা।
জনমনে আতঙ্ক তৈরি প্রসঙ্গে এবং গ্যানম্যান নিয়ে ঘোরা প্রসঙ্গে অভিযুক্ত তানজিম কবীর সজু যুগের চিন্তাকে বলেন, নানা রকম ঝামেলায় থাকি। এলাকায় জমি-জমা নিয়ে শত্রুরও অভাব নেই। তাই গত তিনমাস ধরে আইএফএফ সিকিউরিটি থেকে গ্যানম্যান চুক্তির মাধ্যমে নিয়েছি। অনেকেই আমায় নিয়ে প্রতিহিংসা করে।
গ্যানম্যান নিয়ে যখন চলাফেরা করি মানুষ থেকে ১০ ফিট দূরে থাকে তিনি। ব্যাগে গ্যান নিয়ে চলাফেরা করলে তো বিপদের সময় ওই গ্যান ব্যবহার করতে পারবেনা। তাই অপেন কইরাই ঘুরে। গত কয়দিন যাবৎ একটি জমি নিয়া ঝামেলা চলছিল, অবশ্য ওই মিটমাট হইয়া গেছে।এই জমি নিয়া গ্যাঞ্জামের সময়ই গ্যানম্যানের দরকার হইছিল। গানম্যান নিয়ে ৬৫টা বাড়ির মধ্যেই ঘুরি, মানুষ ভয় পাইবো ক্যান? আর একটু চিটাগাংরোড যাই। আমার শত্রুরা আমার বিরুদ্ধে হিংসা করে। এন. হুসেইন রনী /জেসি