রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

হাজীগঞ্জের দুই ভাইকে বাড়ি ছাড়তে অয়ন ওসমানের হুমকি

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৭:৫৩ পিএম, ২১ জুন ২০২৩ বুধবার

 

# ১৮ জুন সবুর মোল্লাকে জোর করে অয়নের অফিসে ধরে নিয়ে যায়
# ১৯ জুন পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়

 

 

পৈত্রিক সম্পত্তি ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধের জের ধরে এক পক্ষের হয়ে অপর পক্ষকে বাড়ি ছাড়ার জন্য নিজের অফিসে ডেকে নিয়ে হুমকি দিয়েছেন সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের পুত্র অয়ন ওসমান। পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে হাজীগঞ্জের একটি পরিবারের ভাইবোনদের মাঝে বিরোধ চলছে। এটা নিয়ে আদালতে মামলাও চলছে। কিন্তু এরই মাঝে অয়ন ওসমান দুই পক্ষের মাঝে এক পক্ষের হয়ে অপর পক্ষকে বাড়ি ছাড়ার জন্য হুমকি দিয়েছেন। ফলে ওই পক্ষ বাধ্য হয়ে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করেছেন।

 

গত ১৮ জুন রোববার বিকেলে চাষাড়া রূপায়ন টাওয়ারে অয়ন ওসমানের অফিসে ডেকে নিয়ে এই হুমকি দেওয়া হয়। ফলে ঘটনার পর থেকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন দাবি করে পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী দুই ভাই। ১৯ জুন সোমবার নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) বরাবর এই অভিযোগ দেন ফতুল্লার হাজীগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সবুর মোল্লা (৫৮) এবং আবু সায়েম মোল্লা (৪০)।

 

অভিযোগে তারা উল্লেখ করেন, আদালতে বিচারাধীন পারিবারিক মামলা নিয়ে আমার দুই বোন ও এক ভাই অয়ন ওসমানের দ্বারস্থ হন। এ সময় অয়ন ওসমান তাদের পক্ষ নিয়ে আমাদের বাড়িঘর খালি করে তাদের বুঝিয়ে দিতে নির্দেশ দেন। প্রয়োজনে লোকজন নিয়ে গিয়ে বাসা খালি করার ব্যবস্থা করতে বলেন।

 

লিখিত অভিযোগে দুই ভাই আরও উল্লেখ করেন, ‘গত ১৬ জুন রাত ৮টায় একই এলাকার সাগর (৪০) ফোন দিয়ে জানায় ১৮ তারিখ বিকেল সাড়ে ৪টায় অয়ন ওসমান তাদের ডেকেছেন। একই ফোনে কায়েমপুর এলাকার নাহিদ পুনরায় জানায় নির্ধারিত তারিখে যেন অয়ন ওসমানের সঙ্গে তারা দেখা করেন। কেন দেখা করতে হবে এমন প্রশ্ন করলে তারা বলেন, আমরা কিছু জানি না। বিষয়টি রহস্যজনক মনে হওয়ায় দেখা করতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন সবুর ও সায়েম মোল্লা।

 

১৮ জুন বিকেল পৌনে ৫টায় মসজিদে প্রবেশ করার সময় সবুর মোল্লাকে সাগর ও নাহিদ জোরপূর্বক অয়ন ওসমানের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকেই বসা ছিলো তার ভাই আবু সাঈদ মোল্লা (৪৮), বোন মাবিয়া সিদ্দিকা (৫২), আয়েশা সিদ্দিকা (৫৫), ভাগ্নে মাসুদ (৩৫)। কিছুক্ষণ পরেই অয়ন ওসমান ও তার সহযোগী রিয়াদ সেখানে উপস্থিত হন। এরপর অয়ন সবুর মোল্লার উদ্দেশে বলেন, আগামীকাল (১৯ জুন) সকালের মধ্যে আবু সাঈদ ও মাবিয়ার কাছে বাড়িঘর সবকিছু বুঝাইয়া দিয়া চলে যাবেন।

 

এ সময় সবুর মোল্লা কারণ জানতে চাইলে সে ধমক দিয়ে বলে আমার কারণ জানার দরকার নাই। সে তার অফিসে থাকা নাহিদকে বলে সকালে তুমি আমার লোকজন নিয়ে যাবে এবং সাইদ মোল্লাকে বাড়িঘর বুঝিয়ে দিয়ে আসবে। এ সময় সবুর মোল্লা ভয়ে কিছু বলতে না পেরে নিরবে চলে আসেন। সবুর মোল্লা জানান, এই ঘটনায় পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছেন।

 

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ভুক্তভোগী সায়েম মোল্লা বলেন, ১৮ জুন আমার বড় ভাইকে হুমকি ধমকি দিয়েছিলো অয়ন ওসমান সাহেব। ১৯ জুন সোমবার দুপুর ৩টার সময়েও নাহিদ তার লোকজন নিয়ে এসেছিলো। কিন্তু যখন শুনেছে আমরা এসপি অফিসে যাচ্ছি তখন সে চলে গেছে। আমরা বিকেল ৪টায় পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেই। পুলিশ সুপার আমাদের কথা শুনে বলেন, যেভাবে সমাধান করা যায় সেভাবেই তিনি ব্যবস্থা নিবেন। প্রয়োজনে হুমকিদাতাদের গ্রেপ্তার করা হবে।

 

কেন এই বিরোধ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০২০ সালে আমাদের বাবা মারা যান। গত বছর আমরা বাড়ি ভাগ করতে বসি। আমার দুই বোন ও এক ভাই জাল দলিল নিয়ে এসে দাবি করেন তাদের নামে নাকি সব লিখে দিয়ে গেছে বাবা। এটা নিয়ে আদালতে ৪টা মামলা আছে এবং সবগুলো বিচারাধীন। সেই বিষয় নিয়ে এখন তারা অয়ন ওসমানের ভয় দেখিয়ে আমাদের তাড়িয়ে দিতে চাচ্ছে।

 

অভিযোগের বিষয়ে অয়ন ওসমানের সঙ্গে সাংবাদিকরা যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দিয়ে থাকলে উনিই ভালো বলতে পারবেন, আমার এই বিষয়ে কিছু জানা নেই। কে করাচ্ছে সেটাও জানার বিষয়। ক্রিটিক্যাল মোমেন্টে অভিযোগ উঠবে এগুলাই স্বাভাবিক। যারা অভিযোগ দিয়েছে উনাদের জিজ্ঞাসা করে বিষয়টা জেনে নেই।

 

আমি যদি এখানে বিন্দু পরিমান মিথ্যা খুঁজে পাই তাহলে যেই কয়টা মামলা করা সম্ভব তা করার ব্যবস্থা করা হবে। আমি এক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেব না। আমার নাম বেঁচে যদি কেউ কিছু করে থাকে তাহলে মামলা হবে। আমিই মামলা দেব। আমার নামে অভিযোগ এসেছে অথচ এই বিষয়ে আমার কোন ধারনাই নেই।’ এস.এ/জেসি