নাসিক ২৪নং ওয়ার্ডে পানিবন্দি শতাধিক পরিবার
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৭:৪১ পিএম, ২২ জুন ২০২৩ বৃহস্পতিবার
# মাছের ঘেরের জন্য কালভার্ট বন্ধ করে দেওয়ায় পানি সরার রাস্তা নেই
# বৃষ্টি বেশি হলে আমাদের ঘরের ভিতর পানি চলে যায় : স্থানীয় বাসিন্দা
# সামনের ডোবা পরিষ্কার করা হলে সমস্যা থাকবে না : নাজির হোসেন
বর্ষা মৌসুম, তবে এখনও মুষলধারে বৃষ্টি হওয়া শুরু হয়নি। তারপরও পানির নিচে তলিয়ে আছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এলাকার প্রায় শতাধিক পরিবারের আবাসিক এলাকা। আর এই তলিয়ে থাকার কারণও কিছু অসাধু অর্থলোভী স্বার্থপর মানুষ। তারা এতই প্রভাবশালী যে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার মতো বা তাদের হাত থেকে এই অসহায় পরিবারগুলোকে বাঁচানোর মতো উদ্যোগ নেওয়ারও সাহস পাচ্ছেন না কেউ।
এই এলাকার মানুষজন বিভিন্ন সময় তাদের বাঁচানোর আকুতি জানালেও সেই প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের হৃদয়ে তা একটুও স্পর্শ করতে পারেনি। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) এর বন্দর এলাকার ২৪ নং ওয়ার্ডের বক্তারকান্দীর আমিরাবাদ এলাকার পূর্ব পাড়ায় এমন করুন চিত্র দেখা যায়। এলাকাবাসীর দাবি, এখনতো সাধারণ বৃষ্টি তাতেই এই অবস্থা। যখন একাধারে কয়েকদিন বৃষ্টি হয় তখন এই এলাকার প্রত্যেকের ঘরে ঘরে ভিতর পানি প্রবেশ করে।
ঘরের ভিতর মাচা তৈরি করে জীবনযাপন করতে হয়। আর এই দুর্দশার সৃষ্টি হয় মদনগঞ্জ-মদনপুর সড়কের পশ্চিম পার্শ্বে আমিরাবাদ এলাকায় রেলওয়ের ডোবা লীজ নিয়ে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির মাছ চাষের ঘেরের কারণে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সেই ঘেরগুলোর মাছ ধরে রাখার জন্য পানি বের হওয়ার সকল কালভার্ট বন্ধ করে দেওয়ার কারণে এখানকার পানি বের হতে পারে না।
তাই একটু বৃষ্টি হলেই এখানে পানি জমে এখানকার মানুষের দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। সেসব প্রভাবশালী ব্যক্তিদের চোখের সামনে এতগুলো পরিবার এমন ভোগান্তির মধ্যে থাকা সত্ত্বেও এবং স্থানীয়রা বিভিন্ন সময় তাকে বোঝানোর চেষ্টা করলেও বেশ কয়েক বছর যাবৎই এমন সমস্যায় ভূগছেন তারা। বিষয়টি স্থানীয় কাউন্সিলকেও জানানো হয়েছে বলে জানান তারা।
সরেজমিনে এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মদনগঞ্জ-মদনপুর সড়কের পশ্চিম পার্শ্বে নাসিক ২৪ নং ওয়ার্ডের দাঁসের গাও বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু করে নবীগঞ্জ পর্যন্ত বাংলাদেশ রেলওয়ের বিশাল ডোবার অবস্থান। এই ডোবার পাশেই অবস্থান কৃষি জমি। কিন্তু এখন সেই ডোবা এবং কৃষি জমি পানিতে তলিয়ে গিয়ে এখন বিশাল জলাভূমির সৃষ্টি হয়েছে।
শুধু তাই নয়, এই পানি বের হওয়ার জন্য কোন ব্যবস্থা না থাকায় এখানকার জলাভূমির আশেপাশে থাকা বাড়িঘরগুলোও আছে পানির নিচে। যদিও এখন পর্যন্ত তেমন একটা বৃষ্টি হওয়া শুরু হয়নি। আশেপাশের বাড়িগুলোর উঠোন এখন পানির নিচে। ঘর থেকে বের হতে হলেই পানি মারিয়ে বের হতে হয়। এতে করে বাড়ির আশেপাশের সকল নোংরা পানি এসব বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করেছে। এতে করে স্থানীয়দের বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ভয়সহ ভোগ করতে হচ্ছে দুর্ভিসহ জীবন।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, এখানকার পানি বের হওয়ার জন্য নবীগঞ্জ খাল (শীতলক্ষ্যা থেকে ব্রহ্মপুত্র যে খাল) এর সাথে এই এলাকার সরাসরি সংযোগ ছিল। কিন্তু স্থানীয় হারুন সরদার (প্রয়াত) এর ছেলে তাওলাত হোসেন এবং নবীগঞ্জ এলাকার নাজির হোসেন নামের দু’জন এই ডোবা এলাকাটিতে মাছের চাষ করার জন্য ঘের তৈরি করে যা লম্বায় প্রায় এক কিলোমিটারের চেয়েও বেশি।
এই এলাকার পানি বের হওয়ার জন্য যে কয়েকটি কালভার্ট আছে এই মাছের ঘেরের মালিকেরা তাদের মাছ চাষ করার জন্য সেসব ঘের বন্ধ করে ফেলেছে। তাই এখন আর এই এলাকার পানি সরে যাওয়ার কোন রাস্তা নেই।
স্থানীয় বাসিন্দা আকতার হোসেন বলেন, আমাদের এই ভোগান্তি দেখার কেউ নেই, সমাধান করারও কেউ নেই। কতগুলো বছর যাবৎ এই বর্ষাকাল এলেই আমাদের বাড়িঘর পানির নিচে ডুবে থাকে। আমরা ঘর থেকে বের হলেই পানি। আবার বৃষ্টি বেশি হলে আমাদের ঘরের ভিতর পানি চলে যায়। তখন আমাদের শিশু সন্তানদের নিয়ে অনেক ঝুঁকিতে থাকতে হয়। একদিকে পানিতে ডুবে কিংবা কোন বিষাক্ত প্রাণীর দিক থেকে বিপদ আসে কিনা সেই ভয়ে থাকতে হয়।
এই বিষয়ে স্থানীয় কাউন্সিলকেও জানিয়েছি, ঘেরের মালিক তাওলাদ ও নাজির হোসেনকেও জানিয়েছি, কিন্তু বিষয়টি তাদের কাছে কোন গুরুত্বই পাচ্ছে না। আপনাদের মাধ্যমে আমরা আমাদের মেয়র ও এমপির দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। তারা একটু সদয় হলেই আমরা এই অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে পারবো।
তবে বিষয়টি অস্বীকার করেন অভিযুক্ত মাছের ঘেরের মালিক নাজির হোসেন। তিনি জানান, আমাদের পাশের ডোবাটিতে ময়লা আবর্জনা ভরে যাওয়ায় সেখান দিয়ে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। আমরা আমাদের বাধ খুলে দিয়েছি। এখন সেই ডোবাটি পরিষ্কার করা গেলে এই পানির সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।
এই বিষয়ে জানতে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আফজাল হোসেনের মোবাইলে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও ফোন রিসিভ করেননি তিনি। এস.এ/জেসি