রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তিন জনপ্রতিনিধিকেও উদ্ধার করতে পারেননি শামীম ওসমান

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৮:০৩ পিএম, ৪ জুলাই ২০২৩ মঙ্গলবার

 

# কথা রাখতে পারেন নি, নতুন বউয়ের মতো সাজতে পারেনি ফতুল্লা
# ফতুল্লাবাসীর জন্য কী করেছেন এটাই জনমনে প্রশ্ন

 

 

‘গগনে গরজে মেঘ ঘন বরষা, কূলে একা বসে আছি নাহি ভরসা’- রবী ঠাকুরের কবিতার লাইনগুলো যেন নৈমত্তিক বিষয়ে দাঁড়িয়েছে ফতুল্লাবাসীর জন্য। বৃষ্টির আবহাওয়া দেখলেই যদি মন ভারী হয় তবে তা ফতুল্লাবাসীর। শুষ্ক মৌসুমে যেখানে জলাবদ্ধতার নিরসন হয়নি, বর্ষায় সেটি পরিণত হয় হাঁটু কিংবা কোমড় পানিতে। পাগলা, ফতুল্লা, কুতুবপুর ফতুল্লার শান্তিধারা, গিরিধারা, জালকুঁড়ি, ভূঁইগড়সহ গোটা ফতুল্লায় পানি আর পানি। যদিও এখানকার জনপ্রতিনিধি আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা একেএম শামীম ওসমান।

 

বর্ষার বর্ষণে তো বটেই সারা বছর যেসব এলাকার মানুষ পানিবন্দি থাকে তাদের জন্য আওয়ামীলীগ সরকারের ১৪ বছরেও কিছু করতে পারেননি শামীম ওসমান। এটি নিয়ে ফতুল্লাবাসীর মনে ক্ষোভের অন্ত নেই। গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে শামীম ওসমান ফতুল্লায় ঘুরে ঘুরে কথা দিয়েছিলেন, ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জকে তিনি নতুন বউ এর মতো করে সাজাবেন। সেসব এখন কথার কথা বলেই ধরা হয়।

 

সিটি এলাকার বদৌলতে সিদ্ধিরগঞ্জের পরিবেশে আমূল পরিবর্তন আসলেও শামীম ওসমান ফতুল্লাবাসীর জন্য কিছুই করতে পারেননি। বর্ষা আসলেই তিনি বিভিন্নভাবে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এবারও তিনি ঈদের পরের টানা বর্ষণে ফতুল্লাবাসীর দুর্ভোগ দেখতে না গিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জে গিয়ে ক্ষোভ ঝেড়েছেন। তিনি বলেছেন, এই জলাবদ্ধতা নিরসন না হলে তিনি ময়লা পানিতে নেমে ধর্মঘট করবেন। তাহলে এতোদিন তিনি এসব ব্যাপারে খেয়াল রাখেননি কেন?

 

ফতুল্লাবাসীর মনে প্রশ্ন, তবে কি ভোট আসলেই শামীম ওসমান ফতুল্লাবাসীকে আশার বানী শোনান। তিনি এতোদিনেও কেন এসবের সমাধান করতে পারলেন না। জেলা পরিষদ, এলজিইডির সহায়তাতেও তিনি চাইলে ফতুল্লায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা আমূল পরিবর্তন ঘটাতে পারতেন। তাহলে গত  পাঁচ বছর তিনি ফতুল্লাবাসীর এই দুর্ভোগ লাঘবে কী করেছেন। এমনকি ফতুল্লার লালপুর পৌষাপুুকুর পার যেটি ফতুল্লার ৪নং ওয়ার্ড পড়েছে সেখানেও তিনি কোন দৃশ্যমান কাজ করতে পারেননি।

 

এই ওয়ার্ডে তিনটি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যানের বসবাস। ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার লুৎফর রহমান স্বপনের বাড়ী প্রথমে তারপরে বন্দর থানার কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের বাড়ি এবং বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত আলীর বসবাস। অথচ গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে তলিয়ে গেছে ফতুল্লা ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের লালপুর-পৌষাপুকুর এলাকার রাস্তা ঘাট।

 

রাস্তাগুলোতে কোমর সমান পানির পাশাপাশি বাসা বাড়িতে ও ঢুকেছে বৃষ্টির পানি। ফলে পানিবন্দি হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। কোমর পানির নিচে তলিয়ে আছে রাস্তা ঘাট। প্রতিটি বাড়ীতেই কোমর সমান পানি। নিদারুণ কষ্টের মাঝে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। তিনজন জনপ্রতিনিধি বসবাসের পরেও এই ওয়ার্ডের লালপুর-পৌষাপুকুর পাড় এলাকার রাস্তাগুলো বছরের অধিকাংশ সময়ই থাকে পানির নিচে।

 

এই তিন জনপ্রতিনিধির জন্যও শামীম ওসমান কিছু করেননি। অবশ্য এই নিয়ে শামীম ওসমান ও প্রজেক্টের কর্তাদের উপর ক্ষোভ ঝেড়েছিলেন ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান স্বপন। তিনিও নিরুপায়। কেননা এলাকার মানুষ তাকে ধরলেও এমপি যেখানে নিরুপায় সেখানে আর তিনি কিইবা করতে পারেন।

 

এসব এলাকায় গত কযেকদিনের টানা বৃষ্টিতে অভাব দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির। বিশুদ্ধ পানির জন্য তাদের ছুটতে হচ্ছে বহুতল ভবনগুলোতে। কেউ কেউ ছুটে যাচ্ছে পার্শ্ববর্তী এলাকার পরিচিতজনদের বাসা বাড়ীতে। টিন শেড, বেড়া-টিনের এক তলা বাড়িতে যাদের বসবাস তাদের কষ্টের মাত্রা সবচাইতে বেশি। অধিকাংশ বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেছে পানি। রাস্তাগুলোতে কোমর সমান পানি। রিক্সার পরিবর্তে রাস্তাগুলোতে চলতে ভ্যানগাড়ী।

 

যে রাস্তায় এক সময় রিক্সা, অটোরিক্সা, ইজিবাইক চলতো,পায়ে হেঁটে নিজ নিজ গন্তব্যস্থলে ছুটে চলতো হাজার হাজার মানুষ সেই রাস্তায় চলাচলে আজ ভরসা একমাত্র ভ্যান গাড়ী। কিছু জায়গায় পানি কম তবে অধিকাংশ জায়গা জুড়ে পানি এতোটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে ভ্যান গাড়ীর কাঠের জায়গা ছুঁই ছুঁই। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই জলাবদ্ধতা বর্তমান সাংসদের জন্য ডিমেরিটস বলে মনে করেন রাজনৈতিক বোদ্ধারা। তারা বলছেন, কথার আশ্বাসে পার পাওয়ার সুযোগ নেই, এখানকার মানুষ চায় সমাধান। তাহলে সাংসদ ফতুল্লাবাসীর জন্য কী করলেন এতোদিন তাদের প্রশ্ন? এস.এ/জেসি