দুদকের গ্রেফতারি পরোয়ানার পরও প্রকাশ্যে বিতর্কিত কাউন্সিলর মতি
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ১২:৩৭ পিএম, ৬ জুলাই ২০২৩ বৃহস্পতিবার
অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সিদ্ধিরগঞ্জ যুবলীগের আহবায়ক মতিউর রহমান মতির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। এব্যাপারে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকেও নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
যদিও এখনও গ্রেফতারি পরোয়ানার আদেশকপি হাতে পাননি বলে জানিয়েছেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা। এদিকে এই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরও ঈদুল আজহার পর নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের পাশে সিদ্ধিরগঞ্জের এক কর্মসূচিতে দেখা গিয়েছে কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতিকে।
দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর উপপরিচালকের দায়ের করা মামলায় (নং ৭(২)২২) নাসিক ৬নং ওয়ার্ডের সিদ্ধিরগঞ্জ আদমজীনগর সুমিলপাড়া এলাকার বাদশা মিয়ার ছেলে কাউন্সিলর মতির বিরুদ্ধে এই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। আদালত সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, ১৬ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০২২ সালের ফেব্রæয়ারিতে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মতিউর রহমান (মতি) ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। ২০২২ সালের ২২ ডিসেম্বও দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিচালক মো. ইব্রাহীম আদালতে মতি ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে পৃথক চার্জশিট দাখিল করেন।
সূত্র জানায়, তদন্তকালে আসামি মতিউর রহমানের মতির নামে ১১ কোটি ৩৫ লাখ ৬৭ হাজার টাকা ও তার স্ত্রী রোকেয়া রহমানের নামে ৮ কোটি ১৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য পায় দুদক। এর আগে ২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে মতিউর রহমান ৬ কোটি ৬২ লাখ ৮২ হাজার টাকা ও তার স্ত্রী রোকেয়া রহমান ২ কোটি ৪২ লাখ ৫৯ হাজার টাকার সম্পদের হিসাব প্রদর্শন না করে মিথ্যা তথ্য দেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, প্রথম মামলায় কাউন্সিলর মো. মতিউর রহমানের (মতি) বিরুদ্ধে ৬ কোটি ১ লাখ ৭২ হাজার ২৬৫ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনসহ ১০ কোটি ৮৬ লাখ ৫ হাজার ৬৩৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। অন্যদিকে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যাংকে ৮২ কোটি ৫১ লাখ ৪২৪ টাকা জমা করে পরবর্তীতে ৭৪ কোটি ১৩ লাখ ৮৮ হাজার ৬৮৯ টাকা উত্তোলন করে স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তর করে অবস্থান গোপন করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
অন্যদিকে অপর মামলার এজাহারে কাউন্সিলর মতির স্ত্রী রোকেয়া রহমানের বিরুদ্ধে ৫ কোটি ৬১ লাখ ১৮ হাজার ৩৯৭ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভ‚ত সম্পদ অর্জন ও বিভিন্ন ব্যাংকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ১ কোটি ৮৬ লাখ ৬৭ হাজার ৩৯৫ টাকা জমা করে সেখান থেকে ১ কোটি ৮৫ লাখ ৭৬ হাজার ৩৯৮ টাকা উত্তোলন করে তা স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরপ‚র্বক অবস্থান গোপন করার অভিযোগ আনা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারা ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪ (২) ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়।
দুদকে মামলায় মতির গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন যুগের চিন্তাকে বলেন, যুবলীগ নেতা মতি কেন, কোন ব্যক্তির ব্যক্তিগত ভুল ত্রুটি অথবা অন্যায়ের দায় দল কখনো বহন করবেনা। আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট বলেছেন, কোন দুর্নীতিবাজের পক্ষে তিনি এবং দল থাকবেনা। আমরা শেখ হাসিনার কর্মী, তাই তার কথাই আমাদের কথা। মতির কুকর্ম একান্ত তার ব্যক্তিগত। এখানে দল কোন দুর্নীতিবাজের দায় নেবেনা।
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য এড. আনিসুর রহমান দিপু যুগের চিন্তাকে বলেন, কে কোথায় দুর্নীতি করলো তা দেখভাল করার জন্য দুদক এবং প্রচলিত আইন আছে। এখানে মতির মতো যুবলীগ নেতাই হোক আর যেই হোক, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। কারো ব্যক্তিগত অপকর্মের দায় কখনো আওয়ামীলীগের মতো স্বচ্ছ রাজনৈতিক দলের উপর বর্তায়না।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি মজিবুর রহমান যুগের চিন্তাকে বলেন, মতি আমাদের দলের যুবলীগ নেতা। সে আমাদের সাথে বিভিন্ন কর্মসূচিতে এসেছে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশ নিয়েছে এটা আমরা জানি।
কিন্তু কোথায় গিয়ে কি কি দুর্নীতি করেছে বা কোন কুকর্ম করেছে সেটা তো দল এবং দলের নেতা-কর্মীরা জানেনা। কারো ব্যক্তিগত কুকর্মের দায় কখনোই দলের উপর বর্তায়না। মতির দুর্নীতির যে তদন্ত হচ্ছে তা আইনের নিজস্ব গতিতেই চলবে। দল কিংবা দলের নেতাকর্মীরা কোন ব্যক্তির কুকর্মের জন্য দায়ী না। এন. হুসেইন রনী /জেসি