রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শায়েস্তা খান সড়ক দখলের নেপথ্যে চাঁদাবাজি

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৩:০৩ পিএম, ২২ জুলাই ২০২৩ শনিবার


নারায়ণগঞ্জ শহরে যানজট দৈনন্দিন রুটিনে পরিণত হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শায়েস্তা খান রোডে এই যানজটের মাত্রা তীব্র। মূল সড়ক তো বটেই ফুটপাতগুলো দিয়ে হাঁটার কোন সুযোগ  নেই। এর মধ্যে জনগুরুত্বপূর্ণ সরকারি বেশ কিছু ভবনের সামনের ফুটপাত দখলে নিয়েছে হকাররা।

 

 

ফলে রাস্তা দিয়ে চলার তো উপায়ই নেই উপরন্তু কোনটি যে সরকারি দপ্তর সেটিও বুঝা বড় দায়। বিশেষ করে সদ্য উদ্বোধনকৃত জেলা শিল্পকলা একাডেমি, জেলা গণগ্রন্থাগার, র‌্যাব-১১’র কার্যালয়, জেলা ডাকভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোর অবস্থান শায়েস্তা খান সড়কে। এই ভবনগুলোর সামনের ফুটপাতের সাথে রাস্তা দখলে নিয়ে দোকান বসিয়েছে হকাররা।

 

 

ফলে এই সড়ক দিয়ে মানুষের চলাচলের জন্য ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সড়ক ফুটপাত হকারদের দখলে থাকায় মানুষের হাঁটার কোন সুযোগ নেই। অভিযোগ উঠেছে, ফুটপাতে এসব দোকান বসিয়ে হকারদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোয়ারা আদায় করে একটি চক্র।

 

 

সেই চক্রের দাপটেই ফুটপাত দখলে থাকা হকারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছেনা প্রশাসন। হকাররা একটি প্রভাবশালী মহলকে চাদাঁ দিয়ে এখানে দোকান বসানোর কারনে নগরবাসিকে ভোগান্তিতে পরতে হচ্ছে।

 


এদিকে সরেজমিনে নগরীর বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা যায়, শুধু শায়েস্তা খান রোড নয়, নগরীর ১নং রেলগেইট,  নারায়ণগঞ্জ কলেজ ও পোস্ট অফিসের সামনে পুরোতন কোর্ট হয়ে কালিবাজারে রাস্তা ও ফুটপাত দখলে নিয়ে গায়ের জোরে দিব্যি দোকান চালাচ্ছে হকাররা।  

 

 

র‌্যাব-১১ অফিস, শিল্পকলা একাডেমি, ফ্রেন্ডস মার্কেটের সামনেসহ পুরো কালিবাজারে অবৈধ হকাদের এসব দোকান আছে প্রায় শতাধিক। সড়কের একপাশ যেন পুরোটাই দখলে রেখেছেন অস্থায়ী হকাররা। আর ফুটপাতে বসেছে ভাসমান নানা দোকান।  ফলশ্রুতিতে প্রতিনিয়ত সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে জনসাধারণকে।

 


সূত্র জানায়, ব্যবস্থা না নেয়ায় দখল করে থাকা এই সড়ক থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায়  করছে একটি মহল। চাঁদাবাজদের একটি চক্রও চাঁদার টাকা দিয়েই অস্থায়ীভাবে এখানে দোকান বসিয়ে ব্যবসা করছেন। তবে ঠিক কারা এ চাঁদা আদায় করেন তা নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ সবাই।

 


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক ব্যক্তি জানান, ফুটপাতে বসানো দোকান বুঝে ব্যবসার ধরণ বুঝে দৈনিক সর্বনিম্ন ১০০ টাকা থেকে ৩০০টাকা পর্যন্ত চাঁদা তোলে চাঁদাবাজরা। এর সাথে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তৃতীয় সারির কর্মচারীরা জড়িত। তারাই জনগুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোর সামনের ফুটপাত দখল করে দোকান বসাতে সহযোগিতা করে হকারদের।

 


নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুলে নিজের বাচ্চাকে নিয়ে আসেন সাহেদ কাউসার। তিনি জানান, সড়কটি ঠিক আছে তবে এখানের ফুটপাতজুড়ে অস্থায়ী চশমার দোকান, ছাতার দোকান, তালার দোকান, তুলার দোকান, জুতার দোকান গড়ে তুলেছে হকাররা।

 

 

যার ফলে পুরো সড়কটি ঘিঞ্জি জায়গায় পরিণত হয়েছে। মাত্র দুই মিনিটে রাস্তা পার হতে কখনো কখনো দুই ঘন্টাও পার হয়ে যায় । বাধ্য হয়ে নেমে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছান অনেকে। কিন্তু এসব দেখার কেউ নেই।

 


নারায়ণগঞ্জ কলেজের শিক্ষার্থী সাহেদ মৃধা জানান, শায়েস্তা রোডের যানজটের মূল কারণ চাঁদাবাজি। সড়কের মাঝেও অনেকে দোকান বসিয়ে ব্যবসা করছেন। শুধু স্কুল আর কলেজের গেট ছাড়া বাকি সড়কে হকাররা বসেছে। মূলত শহরে হকার ইস্যুর নেপথ্যে রয়েছে কোটি টাকার চাদাঁবাজি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যালয়ের সামনের ফুটপাতও দখল করে বসেছে হকাররা। কেউ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা।

 


চাকুরীজীবী আজম মাহবুব জানান, শহরের মাঝে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের প্রতি সকল জনপ্রতিনিধিদের উদাসীনতা। এই সড়কের পাশেই দ্বিগুবাবুর বাজার এবং মীর জুমলা সড়ক। হকাররা পুরো এলাকাটাই দখলে নিয়ে নিয়েছে। এব্যাপারে সিটি করপোরেশনও কোন দায়িত্ব পালন করছেনা। এছাড়া প্রশাসনের দায় এড়িয়ে যেতে পারেন না।

 


সদর মডেল থানা ওসি আনিচুর রহমান মোল্লা বলেন, আমাদের সবসময় অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কে বা কারা চাঁদা নেয় এ বিষয়ে আমরা অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি প্রতিনিয়ত।  এন.হুসেইন রনী /জেসি