নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে জমি ও বাড়িঘর ২৮ বছরেও বাঁধ নির্মাণ হয়নি
আশরাফুল আলম, সোনারগাঁ
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০২:৪৯ পিএম, ২৫ জুলাই ২০২৩ মঙ্গলবার
চারদিকে মেঘনা নদী পরিবেষ্টিত সড়ক পথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার নুনেরটেক এলাকায় প্রায় ২০ হাজার মানুষের বসবাস। প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে মেঘনা নদীর ভাঙ্গনে নুনেরটেক, রঘুনারচর, সবুজবাগ, টেকপাড়া, গুচ্ছগ্রাম, কমলাপুরসহ ৬টি গ্রামের মানুষ ভিটে মাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে।
বিগত ২৮ বছরে ওই এলাকার কয়েকশ পরিবার নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বাড়িঘর হারিয়ে পথে বসেছে। এবছরও গত এক মাস ধরে মেঘনা নদীর ঢেউ ও প্রচন্ড স্রোত নুনেরটেক এলাকার মানুষের বাড়িঘর ভেঙ্গে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নদীর তীরের বাড়িঘর রক্ষা করার জন্য আবারো বাঁধ নির্মাণ করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
নুনেরটেকবাসীরা জানান, বিগত ১৯৯১ সালে সোনারগাঁয়ের বিএনপি দলীয় সাবেক সাংসদ রেজাউল করিম ও ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগের দলীয় সাংসদ আব্দুল্লাহ আল কায়সার ওই এলাকায় ভাঙ্গন রোধে বাঁধ নিমার্ণ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও কেউ কথা রাখেননি। বর্তমান জাতীয় পার্টির দলীয় সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকা তিনিও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাঁধ নির্মাণ করে দেওয়ার।
দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে তিনজন সাংসদ নুনেরটেক এলাকায় মেঘনা নদীর ভাঙ্গন রোধে বাঁধ নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য এলাকাবাসীকে বার বার প্রতিশ্রুতি দিলেও কেউ কথা রাখেনি বলে অভিযোগ করেছে এলাকাবাসীরা। ভাঙ্গনের কারণ হিসেবে তারা নদীর প্রচন্ড ঢেউ, স্রোত ও অপরিকল্পিত ভাবে নদী থেকে ড্রেজারের সাহায্যে বালু উত্তোলনকে দায়ী করেন।
প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ভাঙ্গনের ফলে মানুষের ফসলি জমি ও বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বিগত ২৮ বছরে ওই এলাকার প্রায় ৯শ বিঘা ফসলি জমি ও তিন শতাধিক মানুষের বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
সরেজমিন উপজেলার বারদী ইউনিয়নের নুনেরটেক এলাকার পূর্বপ্রান্তে রঘুনারচর ও কমলাপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মেঘনা নদীর প্রচন্ড স্রোত ও ঢেউয়ের কারণে গ্রাম দুটির বাসিন্দাদের বাড়িঘর ভেঙ্গে গত এক মাস ধরে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
নুনেরটেক এলাকার বাসিন্দা ও নুনেরটেক উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি আবুল হাসেম জানান, গত কয়েক বছর ধরেই আমাদের গ্রামের মানুষের বাড়িঘর ভেঙ্গে মেঘনা নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। গত বছর আমাদের নুনেরটেক এলাকার ২০ জন মানুষের বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এ বছর বর্ষা শুরু হওয়ার পর থেকে ভাঙনের পরিমাণ একটু কম থাকলেও গত এক মাস ধরে নদীতীরবর্তী অনন্ত ১২ জন বাসিন্দার বাড়িঘর ভেঙ্গে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
বারদী ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য লোকমান হোসেন বলেন, নদীর প্রচন্ড ¯্রােতের কারণে আমাদের নুনেরটেকবাসীদের বাড়িঘর যেভাবে ভেঙ্গে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে, এমনভাবে ভাঙন সৃষ্টি হতে থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আমাদের নুনেরটেকের অধিকাংশ মানুষের বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
নুনেরটেক এলাকাবাসীরা অভিযোগ করে বলেন, নদী ভাঙ্গন থেকে নুনেরটেক এলাকাটি রক্ষা করার জন্য আমরা দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে আন্দোলন করে আসছি। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগে আমরা নদীর তীরে মানববন্ধন, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের স্মারকলিপি দিয়ে আসছি। আন্দোলনের সময় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা নদীর তীরে বাঁধ নির্মাণ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও কোনো কাজ হচ্ছে না।
নুনেরটেক এলাকার প্রবীন ব্যক্তি আব্দুল কুদ্দুস বলেন, উপজেলার বারদী ইউনিয়নের নুনেরটেক এলাকার চারদিকে মেঘনা নদী, সড়ক পথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এ গ্রামে প্রায় ২০ হাজার মানুষ বসবাস করেন। রঘুনারচর, গুচ্ছগ্রাম, চরকমলাপুর এ তিনটি গ্রামে প্রতি বছর অব্যাহত ভাঙনে আমাদের ফসলি জমি ও বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
বারদী ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ড সদস্য ওসমান গনি জানান, আমাদের নুনেরটেক এলাকার বাসিন্দাদের বাড়িঘর নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা করতে হলে অবশ্যই নদীর তীরে বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। বিগত সময় সোনারগাঁয়ের কয়েকজন সংসদ সদস্য বাঁধ নির্মাণ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবায়ন করতে কেউ এগিয়ে আসছেনা। এন.হুসেইন রনী /জেসি