রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফতুল্লায় বাড়ছে ‘হেমোরেজিক ফিভার’

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৮:৫২ পিএম, ৩ আগস্ট ২০২৩ বৃহস্পতিবার

 

শুধু শিল্প সংস্কৃতিই নয়, নানা দিক থেকে ফতুল্লা নারায়ণগঞ্জ জেলার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ন অঞ্চল। জেলার বিভিন্ন থানা থেকে ফতুল্লায় ঘনবসতি উল্লেখ্য করার মতো। তথ্যমতে, ফতুল্লায় ৬৫ বর্গ কিলোমিটারে কাশিপুর, এনায়েতনগর, ফতুল্লা, বক্তাবলী ও কুতুবপুরে ইউনিয়নে জনসংখ্যা ৭ লাখ ৪২ হাজার ৯৭৬ জন। জনঘনত্ব ১১ হাজার ৪’শ ৩০ জন। গুরুত্বপূর্ন এই শিল্প এলাকার প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা সরকার কর্তৃক বরাদ্দ পেয়ে থাকে। এরই সাথে হোল্ডিং ট্যাক্সসহ নানা ট্যাক্সও নিয়ে থাকে ইউনিয়ন পরিষদ।

 

নানা ধরনের ট্যাক্স নেয়ার পর প্রতি অর্থ বছরে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে স্বাস্থ্য বা সেনিটেশন খাতে বাজেট ঘোষণাও করা হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়না বলে অভিযোগ রয়েছে। অপরদিকে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাও ফতুল্লার বিভিন্ন এলাকায় ভঙ্গুর বলেও অনেকের অভিমত। সম্প্রতি ফতুল্লায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আশংকাজনক হারে বেড়েই চলছে। জনগনকে স্বাস্থ্য সচেতন করে তুলতে বা এলাকা ভিত্তিক ময়লা আবর্জনা পরিস্কারে জনপ্রতিনিধিরা উদাসীন বলেও অনেকের মন্তব্য।  

 

শহরের সন্নিকটে ফতুল্লা শিল্পাঞ্চল বর্তমানে ময়লা আবর্জণার ভাগারে পরিণত হয়ে পড়ছে। আবর্জনা পরিস্কারের কারো জেনো কোনো ধরণের মাথা ব্যাথা নেই। প্রতিবছর ইউনিয়নগুলোতে পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য বাজেট বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু এই বাজেট কোথায় যায় কেউ জানে না। কিন্তু বিল ঠিকই করা হয়। ফতুল্লার বিভিন্ন ইউনিয়নে সরকারীভাবে ড্রেণ করা হলেও ঐ ড্রেণগুলো দিয়ে পানি নিষ্কাশন হয় না।

 

কোনো রকম পরিকল্পনা ছাড়াই ফতুল্লার এনায়েতনগরের মাসদাইর, বাড়ৈভোগ, মুসলিমনগর, নবীনগর, ফাজেলপুর, কাশিপুরের বাংলাবাজার, উত্তর নসরসিংহপুর, ফতুল্লার লালপুর, ডিআইটি মাঠ, পৌষা পুকুরপাড়, কায়েমপুর, কুতুবপুরের দেলপাড়া, ভুঁইঘরসহ বক্তাবলীর বেশ কিছু এলাকায় ইউনিয়নর পরিষদ কর্তৃক ড্রেণ নির্মাণ করা হয়েছে অনেক আগে। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে ড্রেণ নির্মাণ করায় ড্রেণগুলো দিয়ে পানি নিষ্কাশণ না হয়ে উল্টো ড্রেণের ময়লা পানি মানুষের বাড়িঘরে প্রবেশ করে ভোগান্তি বেড়েছে কয়েকগুন।

 

ফতৃুল্লার বিভিন্ন এলাকার জনগন জানান, এই ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কখনোই মশক নিধনে কোনো ধরনের উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। এলাকার কিছু স্বেচ্ছাসেবী নিজ উদ্যোগে মশক নিধনে নিজেদের ব্যক্তি উদ্যোগে ঔষধ ছিটানোর ব্যবস্থা করে যা নিতান্তই সামান্য। এলাকাবাসী বিভিন্ন সময় ইউনিয়ন পরিষদে বিভিন্ন ড্রেণেজ পরিস্কার করার জন্য বলা হলেও কোনো ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়না পরিষদের পক্ষ থেকে।

 

এ ব্যাপারে ফতুল্লার ৫টি ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা বলেন, এডিস মশার বংশ বৃদ্ধির যাতে না করতে পারে সেজন্য বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। তবে মশক নিধনে সরকারী বাজেটও অপ্রতুল ।

 

সংশিল্টদের অভিমত, এডিশ মশার বংশবৃদ্ধি রোধে সামাজিকভাবে সবাইকে সচেতন হতে হবে। গ্রীষ্মকালে এডিশ মশার কামড়ে মূলত মানুষের ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকে। মূলত মশার কামড়ের ১৫ দিনের মধ্যে এই রোগের লক্ষণ মানব দেহে প্রকাশ পায়। ডেঙ্গু  আক্রান্ত হলে মানব শরীরের রক্তের প্লাটিলেটের সংখ্যা কমতে  শুরু করে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে  মানুষের দেহে জ্বর, মাথাব্যাথা, বমি, পেশিতে ও গাঁটে ব্যাথা এবং গাত্রচর্মে ফুসকুড়ি দেখা যায়।

 

দুই থেকে সাত দিনের মাঝে সাধারণত ডেঙ্গু রোগী আরোগ্য লাভ করে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগটি মারাত্মক রক্তক্ষরী রূপ নিতে পারে যাকে ডেঙ্গু রক্তক্ষরী জ্বর বলা হয়। এর ফলে রক্তপাত হয়, রক্ত অনুচক্রিকার মাত্রা কমে যায় এবং রক্ত প্লাজমার নিঃসরণ ঘটে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কখনো বা ডেঙ্গু শক সিনড্রোম দেখা দেয়। এডিশ মশা সাধারণত ঘরের ভেতর, বারান্দা বা ছাদে ফুলের টব, জমানো পানির পাত্র, গাড়ির পরিত্যক্ত টায়ার, নির্মাণাধীন বাড়ির পাশে রাখা চৌবাচ্চা বা ড্রাম ,কনডেন্সড মিল্কের কৌটা, নারিকেলের খোল ইত্যাদি মানুষের তৈরি কৃত্রিম পানির পাত্রে বংশ বৃদ্ধি করে।

 

এদের শহরের মশাও বলে। অন্যদিকে এডিস অ্যালবোপিক্টাসকে গ্রাম মশা বা মফস্বলের মশা বলা হয়। কারণ এরা সাধারণত মফস্বল শহরে বা গ্রামে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বদ্ধ স্বচ্ছ পানির উৎস, যেমন গাছের গর্ত, কাটা বাঁশের গুঁড়ি, ভাঙা রাস্তা, ডোবার স্বচ্ছ পানি ইত্যাদি স্থানে বংশ বৃদ্ধি করে। এডিস অ্যালবোপিক্টাসের আরেক নাম এশিয়ান টাইগার, কারণ এরা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থানীয় মশা। তবে বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাবে এই দুই ধরনের মশাই একে অন্যের প্রজনন স্থানে নিজেদের খাপ খাওয়াতে পারে। এস.এ/জেসি