রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১   ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অবদান বেশি উন্নয়নে পিছিয়ে না.গঞ্জ

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৯:১১ পিএম, ১২ আগস্ট ২০২৩ শনিবার

 

বাংলাদেশের জনশুমারি ও গৃহগণনার এক প্রতিবেদনে জানা যায়, আয়তনের তুলনায় মানুষের বসবাসের এলাকা হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে আছে নারায়ণগঞ্জ জেলা। যেখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বসবাস করছে ৫ হাজার ৭১২ জন। এর আগে শুধু মাত্র রাজধানী জেলা ঢাকা। যেখানে ১০ হাজার ৬৭ জন। শিল্প ও বাণিজ্যে সমৃদ্ধ এই নারায়ণগঞ্জের ঘনত্বের মূল কারণ হলো এখানকার বিভিন্ন কল-কারখানায় মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ।

 

যার জন্য দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেই মানুষ-জন ছুটে আসছে নারায়ণগঞ্জে। যার ফলে ছোট্ট এই জেলার লোক সংখ্যা এখন অর্ধকোটিরও বেশি। এর ফলে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এই জেলা। অথচ শিল্প বাণিজ্যে বিশাল অবদান রাখা এই জেলার উন্নয়নের ক্ষেত্রগুলি আছে সবচেয়ে পিছিয়ে। এখানকার বিসিক শিল্প নগরিতে লাখ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হলেও বিভিন্ন অব্যবস্থাপনার সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হচ্ছে তাদের।

 

নারায়ণগঞ্জের ব্যবসা বাণিজ্যকে সহজতর ও ফলদায়ক করতে পন্য পরিবহনের উন্নয়নে গড়ে তোলা নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে এখনও ধুকছে উন্নয়নহীন অবস্থায়। বিভিন্ন সময় উদ্যোগ নিলেও তার বাস্তাবায়নে দায়িত্বরতদের মধ্যে এক ধরণের অনীহা লক্ষ্য করা যায়। কর্তৃপক্ষের বাস্তবমূখী সিদ্ধান্ত এবং সমন্বয় হীনতার কারণে এখনও স্বপ্ন থেকে বাস্তবে আসতে পারেনি শহর ও বন্দরের যোগাযোগের বহুল প্রত্যাশিত কদম রসুল সেতু।

 

যানজট নিরসন, মানুষের নির্বিঘ্নে চলাচল এবং ব্যবসা বাণিজ্যের পন্যের সহজ সরবরাহের নিশ্চিতে এখানকার মূল শহরে গড়ে উঠেনি পরিকল্পিত কোন যোগাযোগ ব্যবস্থা বা ট্রাফিক সিস্টেম। মানুষের নিরাপদ চলাচলের জন্য নেই কোন ফুটওভার ব্রিজ। এমনকি তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর মতো ছোট একটি সেতু অনুমোদন হওয়ার পর বাস্তবে পরিণত হতে সময় লাগে এক যুগ। তারপরও সিদ্ধান্তের সমন্বয় না থাকার কারণে এখনো তার সুবিধা ভোগ করা সম্ভব হচ্ছে না।

 

বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে প্রস্তাবিত সময়ের চেয়েও সময় ব্যয় হচ্ছে দুই, তিন কিংবা চারগুণ। একই সাথে সে সব প্রকল্পের ব্যয়ও বেড়ে যাচ্ছে কয়েকগুণ। অন্যদিকে শিল্প কারখানায় সমৃদ্ধ এই জেলা দেশের দ্বিতীয় ঘনত্বপূর্ণ হওয়ার পরও এখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থাও খুব দুর্বল বলে অভিযোগ আসে।

 

এখানে বাস করা লাখ লাখ শ্রমিকের অগ্নি দুর্ঘটনায় আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার মতো নেই কোন ব্যবস্থা। যার ফলে প্রাণহানিসহ বিভিন্ন ভোগান্তির মানুষের সংখ্যা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। সব কিছু মিলিয়ে রাজধানীর নিকটবর্তী হওয়া সত্ত্বেও এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় মাপের একটি ভূমিকা রাখার পরও উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রেই অনেক পিছিয়ে আছে দেশের উপরের সারিতে থাকা এই জেলার অবস্থান।

 

ইতিহাসের পাতা ঘেটে জানা যায়, প্রায় আড়াইশত বছর আগে এই এলাকার নামকরণ নারায়ণগঞ্জ করা হয়েছে। অর্থাৎ বৃটিশ রাজত্ব চলার প্রায় প্রথম ধাপে। তবে বৃটিশ শাসনের অনেক আগে এমনকি মোগল শাসনেরও আগে থেকেই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শীতলক্ষ্যার পশ্চিম পাড়ের কিছু অংশসহ পূর্ব পাড়ের বিভিন্ন জায়গা এবং এখানকার নদী বন্দরের পরিচিতি ও সুনাম ছিল। মোগল শাসনামলেও বিশ্বের বিভিন্ন এলাকায় এখানকার মসলিনের সুনাম ছিল।

 

প্রাচীন ইতিহাসের বিভিন্নভাবে ওঠে আসে এখানকার খিজিরপুর, কদমরসুল, মদনগঞ্জ এবং সোনারগায়ের নাম। তবে ইংরেজরা ভারতবর্ষ দখলের পর এখানকার নদী বন্দরের কদর ব্যাপক হারে বাড়ে বলে জানা যায়। এ সময় এখানকার পাট, লবণ ও নানান রকমের মসলার খ্যাতি ছড়িয়ে পরে বিশ্ব জুড়ে। এরপর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আগমনের পর শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম পাশে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতিষ্ঠানসহ রাস্তা-ঘাট গড়ে উঠতে থাকে।

 

এর ফলে শীতলক্ষ্যার পশ্চিম পাড়ের গুরুত্ব বাড়তে থাকে। এর পর থেকেই মূলত নারায়ণঞ্জ শহরের উৎপত্তিসহ দ্রুত উন্নতি ঘটতে শুরু করে। একে একে হোসিয়ারী শিল্প, পাট শিল্প ও লবণ শিল্পের ব্যাপক উন্নতিসহ বিদেশে রপ্তানী হতে থাকে গেঞ্জি, লুঙ্গি ও সূতি শাড়ি। বর্তমানে নীটিং, ডায়িং থেকে শুরু করে পোশাক ও বস্ত্র শিল্পের বিভিন্ন ধাপে নারায়ণগঞ্জের অবস্থান শীর্ষ পর্যায়ে। একই সাথে নির্মাণ শিল্প ও বাণিজ্য, চাল-ডালের পাইকারী ব্যবসায়ও দেশ জুড়ে আছে নারায়ণগঞ্জের সুনাম। এস.এ/জেসি