সোনারগাঁয়ে দ্রব্যমূল্যের ঊধর্বগতি অসহায় নিম্ন আয়ের মানুষ
আশরাফুল আলম, সোনারগাঁ
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৩:২৮ পিএম, ২২ আগস্ট ২০২৩ মঙ্গলবার
বর্তমান বাজারে চাল, ডাল, আটা, ময়দা, তেল, চিনি, লবন, মসলা, মাছ, মাংস, মুরগি, ডিম, আঁদা, রসুন, পিয়াজ, কাঁচা সবজি ও তরিতরকারীসহ নিত্য ব্যবহার্য সাবান, স্নো, পাউডার, পারফিউম, হুইল পাউডার ও অন্যান্য প্রসাধনী সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় অসহায় জীবন যাপন করছেন নিম্নমধ্যভিত্ত পরিবারের লোকজন ও হতদরিদ্র স্বল্প আয়ের মানুষ।
বর্তমান সময়ে বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে না থাকায় নিম্নমধ্যভিত্ত ও হতদরিদ্র স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য এযেন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাড়িয়েছে। লাগামহীন ভাবে যেকোন পণ্যের অব্যাহত মূল্য বৃদ্ধি পেলেও সমতা ভিত্তিক বাড়ছে না শুধু মানুষের আয়। এমন পরিস্থিতে নাগরিক জীবনে টিকে থাকাটাই যেন দুষ্কর হয়ে পড়েছে।
শিল্পাঞ্চল সোনারগাঁয়ের স্থানীয় বাসিন্দা ছাড়াও উপজেলার কাঁচপুর থেকে মেঘনাঘাট পর্যন্ত গড়ে উঠা বিভিন্ন শিল্পকারখানায় কর্মরত কুলি, মজুর ও শ্রমিকসহ অতিরিক্ত আরো প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। সোনারগাঁয়ে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারনে নাজুক পরিস্থিতির শিকার কৃষক, শ্রমিক, জেলে, তাঁতী ও দিনমজুরসহ নিম্ন আয়ের মানুষ।
বছরজুড়ে নিত্য প্রয়োজনীয় সব রকম পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় মাসিক খরচেও এর একটি বড় প্রভাব পড়ে নিম্ন আয়ের মানুষের উপর। নিত্য প্রয়োজনীয় সব রকম পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি সমতা ভিত্তিক সবার আয় বৃদ্ধি না পাওয়ার কারনে চরম দুরাবস্থায় নিমজ্জিত নিম্নভিত্ত ও হতদরিদ্র পরিবারের মানুষ।
সব মিলিয়ে এখন ভালো নেই নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ। কাঁচপুর এলাকায় বসবাস তৈরি পোষাক কারখানায় কর্মরত নারী শ্রমিক সালেহা বেগমের সংসারে স্বামী স্ত্রী দুজন মিলে প্রতি মাসে আয় করেন মাত্র ২০ হাজার টাকা। এ টাকায় দুই ছেলে-মেয়ের পড়ালেখাসহ খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার জন্য খুব হিসাব করে খরচ করতে হয় তাকে।
এমন পরিস্থিতিতে বাজারে নিত্যপণ্যের বেশামাল অবস্থায় অনেকটাই দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি। সম্প্রতি উপজেলার চিলারবাগ এলাকায় ওএমএসের চাল ও আটা কিনতে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় আরিফা বেগম নামে এক নারীকে। ৫ কেজি চাল এবং ৩ কেজি আটা কিনতে টানা রোদে প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি।
আরিফা বেগম বলেন, এটা আমার জন্য খুবই বিব্রতকর। তবে, এ ছাড়া অন্য কোনো বিকল্পও নেই আমার। ওএমএসের ডিলার অখিল হোসেন জানান, ট্রাকে ১ কেজি ময়দার দাম ২৪ টাকা। বাজারে ময়দার কেজি এখন ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। প্রতি লিটার তেল ট্রাকের ক্ষেত্রে হয় ১১০ টাকা। খোলা বাজারে দাম ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা।
একই লাইনে আরিফা বেগমের ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন সাপেরবন্দ এলাকার গৃহকর্মী আমেলা বেগম। তার সংসারের অবস্থা আরো নাজুক। অন্যান্য খরচ বহন করে তার দিনমজুর স্বামীর হাতে খাবারের জন্য যে টাকা বাঁচে তা খুবই অল্প। আমেলা বেগম বলেন, আমার পরিবারের সদস্যরা ক্ষুধার্ত।
আরিফা বেগম ও আমেলা বেগমের মতো নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ খাবারের বাড়তি দামের সঙ্গে মানিয়ে চলার চেষ্টা করছেন অনেক কিছু ত্যাগ করার মাধ্যমে। নিত্য প্রয়োজনীয় সকল পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির পেছনে ব্যবসায়ীদেরই দুষছেন সাধারণ ক্রেতারা। লাগামহীন ভাবে নিত্য প্রয়োজনীয় সকল পণ্যের দাম বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন নিম্ন আয়ের সাধারন মানুষ।
সরেজমিন উপজেলার মোগরাপাড়া চৌরাস্তা বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, এক কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা দরে। আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, কাঁচা মরিচ ২০০ টাকা, আদা ২২০ টাকা, রসুন ২০০ টাকা, প্রতি হালি ডিম কিনতে হচ্ছে ৫০ টাকায়। এখনো নাগালের বাইরে রয়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ টাকা কেজি দরে।
বাজার করতে আসা ছয়হিস্যা এলাকার মোবারক হোসেন বলেন, পণ্য মজুদ আছে, সরবরাহ স্বাভাবিক এসব বলে বাণিজ্যমন্ত্রী মাঝে মধ্যে আমাদের শুধু বুঝ দিচ্ছেন। বলা হচ্ছে বাজারে নাকি কোনো পণ্যের ঘাটতিও থাকবে না। দাম বৃদ্ধি করে কেউ যাতে বাজার পরিস্থিতি অস্বাভাবিক না করতে পারে সেই পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলা হয়েছে।
তার পরও দেখতে হচ্ছে অনেক পণ্যের দাম রাতারাতি বেড়ে গেছে। উপজেলার মঙ্গলেরগাঁও বটতলা কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা সজিব মিয়া বলেন, যখন পাইকারি বাজারে সবজি কিনতে যাই, ওই সময় বাজারে যদি কাঁচামাল কম থাকে এবং ক্রেতার সংখ্যা অধিক হয় তখন পাইকাররা দাম বাড়িয়ে দেয়।
এটি এখন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যবসায়ীরা চিন্তা করে না, দাম বাড়ালে সাধারণ মানুষের সমস্যা হয়। পাইকারি বিক্রেতারা তো ঠিকই বিক্রি করতে পারে। শুধু সমস্যায় পড়তে হয় আমাদের মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। এন.হুসেইন রনী /জেসি