শহরে যানজটের নেপথ্যে চার স্পট
ইউসুফ আলী এটম
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৮:০২ পিএম, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ রোববার
কিছুতেই কমানো যাচ্ছে না শহরের যানজট। পুলিশ প্রশাসনের যাবতীয় উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা হোঁচট খাচ্ছে প্রতিনিয়ত। যানজট সমস্যাকে কোনক্রমেই বাগে আনতে পারছেন না তারা। প্রশাসনের এই ব্যর্থতার কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, তাদের মধ্যে সমন্বয়তার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। এছাড়া কতিপয় অসাধু ট্রাফিক পুলিশের মাত্রাতিরিক্ত দুর্নীতিও এ কাজের অন্তরায়।
স্টিকার বাণিজ্যের আড়ালে মাসোহারার বিনিময়ে শহরতলী ও আশপাশ এলাকার কয়েক হাজার অবৈধ অটো শহরে ঢুকে যানজটে নতুনমাত্রা যোগ করছে। শোনা যায়, ট্রাফিক পুলিশের স্টিকার বাণিজ্যের সাথে বিশেষ পেশার কিছু টাউটও জড়িত রয়েছে। আরো শোনা যায়, বিভিন্ন স্ট্যান্ড এবং শহীদ মিনার এলাকার ভ্যানবাহী দোকানপাট নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে রয়েছেন কতিপয় নামধারি ছাত্রলীগ নেতা। তা ছাড়া প্রশিক্ষণবিহীন, অদক্ষ এবং শিশু-কিশোর চালকের হাতে পড়ে নানা রকম দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে অটো।
জনসাধারণ্যে সবসময়ই একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খায়; কী কারণে শহরে যানজট? সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নারায়ণগঞ্জ শহরের একমাত্র প্রধান সড়ক বঙ্গবন্ধু রোডের ৪টি স্পট প্রায় সময়ই অরক্ষিত থাকছে। ফলে ওই ৪টি স্পটেই লাগাতার যানজট লেগে থাকে। পর্যায়ক্রমে এর প্রভাব পড়ে গোটা শহরে।
অরক্ষিত প্রথম স্পটটি হলো চাষাঢ়া চত্বর, দ্বিতীয় স্পট পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, তৃতীয় স্পট নারায়ণগঞ্জ ক্লাব এলাকা এবং চতুর্থ স্পট হলো ২ নং রেলগেট এলাকা। ট্রাফিক স্বল্পতার কারণে বেশীরভাগ স্পটেই নিয়ন্ত্রণহীনতা বিরাজ করে। ফলে চালকদের স্বেচ্ছাচারিতা যানজটকে খুব সহজেই বরণ করে নেয়। শুরু হয় লাগাতার যানজট। এর ঢেউ আছড়ে পড়ে অন্য স্পটগুলোতে। নিমিষেই অচল হয়ে পড়ে গোটা নগরী।
৪টি স্পটেই রয়েছে অবৈধ স্ট্যান্ড। মূল সড়ক দখল করে সিএনজি, অটো, মোটরসাইকেল এবং প্রাইভেট কার পার্কিং করে রাখা হয়। অভিযোগ রয়েছে, মাসোহারার বিনিময়ে এসব স্ট্যান্ড ও পার্কিং স্পটকে বৈধতা দিয়ে যাচ্ছে পুলিশ প্রশাসন। শহরের সবগুলো ফুটপাতই হকারের ভাসমান দোকানপাটের দখলে।
পথচারিরা বাধ্য হয়েই ফুটপাত ছেড়ে মূল সড়ককে যাতায়াতের জন্য বেছে নিচ্ছেন। এখানেই শেষ হলে না হয় কথা ছিলো! ভ্যানগাড়িতে করেও অনেক হকার মূল সড়কে পসার জমায়। এতোসবের পর অবশিষ্ট সড়কটি দিয়ে গাড়ি চলাচল করা দুঃসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
ট্রাফিকের নজরদারি না থাকায় উল্টাপথে গাড়ি চলাচল করার কারণেও আচমকা যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রায় সময়ই দেখা যায়, যাত্রীবাহী বাস ডিভাইডারের ফাঁক গলিয়ে বামদিকে রিকশার লেনে ঢুকে পড়ে। সরু রাস্তায় বড় গাড়ি প্রবেশের কারণে ছোট গাড়িগুলোর চলাচলেও মন্থর গতি ধারণ করে। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, একজন মানুষও রাস্তা পারাপারের ফাঁক খুঁজে পায় না।
এ প্রসঙ্গে চাষাঢ়া চত্বরে কর্তব্যরত একজন ট্রাফিক পুলিশের সাথে আলাপকালে তিনি দায়সারা গোছের জবাব দিয়ে বলেন, যাদের বিবেক নেই তারাই এমন কাজ করেন। রাস্তা বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকা মৌমিতা বাসের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি অসহায়ের মতো বলে ওঠেন, ওরা বেহায়া কথা শোনে না।
এ সময় জনৈক পথচারিকে বলতে শোনা যায়, মৌমিতা বাস শহরের একটা নতুন আপদের নাম। এই আপদ চাষাঢ়া চত্বরে যানজটের দক্ষ কারিগর। যারাই এই আপদ শহরে আমদানি করেছেন তারা লোভী মানুষ।
দেখা গেছে, শহীদ মিনার থেকে আদর্শ মিষ্টান্ন ভান্ডার পর্যন্ত জায়গায় সবসময় ৪-৫টা বাস মৌমিতা বাস দাঁড়িয়ে থেকে যাত্রী উঠায়। রাস্তা বন্ধ করে রাখায় ফতুল্লাগামী সব গাড়িও মৌমিতার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হয়। দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির লাইন ক্রমশই দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে থাকে।
কখনো কখনো এ লাইন কালীর বাজারের মোড় ছেড়ে যেতে দেখা যায়। মেট্রো সিনেমা হলের কাছ থেকে প্রতি পাঁচ মিনিট পর পর একটা মৌমিতা ছেড়ে চাষাঢ়া এসে ডানের লেনে না গিয়ে খুব ধীর গতিতে বাঁদিকে শহীদ মিনারের পাশে এস দাঁড়ায়। আর এভাবেই মৌমিতা চাষাঢ়া চত্বরে যানজটের সৃষ্টি করে।
মৌমিতা বিষয়ে কথা বলার জন্যে নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক বিভাগের জনৈক কর্মকর্তার মোবাইলে ফোন করলে তিনি তা রিসিভ করেননি। এস.এ/জেসি