মঙ্গলবার   ২২ অক্টোবর ২০২৪   কার্তিক ৭ ১৪৩১   ১৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

শামীম আইভী বিবাদ : হতাশ কর্মী সমর্থক

ফরিদ আহমেদ রবি

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০২:১৫ পিএম, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ মঙ্গলবার

 

নারায়ণগঞ্জে আবারও ভাই বোনের বিবাদ" শিরোনামে ১৫ সেপ্টেম্বর দৈনিক যুগান্তরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এখানে ভাই বোন হিসেবে সাংসদ শামীম ওসমান এবং নাসিক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। দ্জুনেই তৃণমূল থেকে উঠে আসা আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা।

 

 

মূলত তাঁদের কেন্দ্র করেই নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম আবর্তিত হয়। দলীয় বিভিন্ন কমিটি এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ নিজ নিজ অবস্থানে থাকা সত্ত্বেও সাধারণ কর্মী সমর্থকদের ম‚ল নেতা এঁরা দুজন।দল এবং দলের বাইরের লোকজনের কাছেও এটা পরিষ্কার, নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ সমর্থকদের মাঝে এঁদের দুজনের প্রভাব সর্বোচ্চ।

 

 

তাঁদের বিবাদের কারণে তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীগণ হতাশায় ভুগছেন বলেও সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁদের মত অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদের কাছে এমন আচরণ প্রত্যাশিত নয়।

 


গণতান্ত্রিক দেশে মতাদর্শ গত ভিন্নতার কারণে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থাকবে এটাই স্বাভাবিক, তবে একই দলের অন্তর্ভুক্ত হয়ে ব্যক্তিগত কারণে বিভিন্ন উপদল সৃষ্টি হওয়া দলের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে না। দলীয় নেতৃত্ব লাভের জন্য প্রতিযোগিতা মেনে নেয়া যায় কিন্তু দলের জন্য ক্ষতিকর এমন কোন বিভেদ বা কোন্দল কোন ভাবেই গণতান্ত্রিক দলের কাম্য হতে পারে না।

 

 

দলীয় নেতৃত্বের লড়াইয়ে কেউ নেতৃত্বে আসীন হবেন কেউ হতে পারবেন না এটিও একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। নেতৃত্বে আসীন এবং নেতৃত্ব বঞ্চিত সবাই দলীয় আদর্শে সঙ্ঘবদ্ধ থেকে দলীয় কার্যক্রম কে এগিয়ে নিয়ে যাবেন এটিই দলের ম‚লমণ্ত্র।এর অন্যথা হলে দলের ভিতরে বিভক্তি বেড়ে যায়, দল ক্ষতিগ্রস্ত হয় যা কোন রাজনৈতিক দলেরই কাম্য হতে পারে না।

 

 

রাজনৈতিক ঐতিহ্যে অত্যন্ত সমৃদ্ধ নারায়ণগঞ্জ সারাদেশে একটি আলাদা বৈশিষ্ট্য নিয়ে অবস্থান করছে। নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিতেও যথেষ্ট গুরুত্বপ‚র্ণ। রাজধানী সংলগ্ন পৃথক শহর হলেও রাজধানীর যেকোনো রাজনৈতিক কর্মকান্ডে এ অঞ্চলের ভ‚মিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

 

সুদ‚র অতীত থেকেই কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে নারায়ণগঞ্জের উপস্থিতি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং এখনো আছে। ঢাকা কেন্দ্রিক যে কোন রাজনৈতিক কর্মসূচির সাফল্য ব্যর্থতা অনেকাংশে নারায়ণগঞ্জের ওপর নির্ভর করে। আওয়ামী লীগের আঁতুড় ঘর হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।

 

 

৭৫ পরবর্তী দলের ক্রান্তিকালে দলকে সংগঠিত করতে যে দু চারজন এগিয়ে আসেন তাঁদের অন্যতম শামীম ওসমান। শামীম ওসমানের রাজনীতিতে পদচারণা শুরু সম্প‚র্ণ প্রতিক‚ল পরিবেশে স্কুলজীবন থেকে। সামরিক শাসনামলে যখন আওয়ামী লীগের নামোচ্চারণও নিষিদ্ধ তখন কিশোর শামীম রাজনীতির মাঠে নামেন, সেই অবস্থান থেকে আজকের প্রভাবশালী সাংসদ শামীম ওসমানের উত্তরণ।

 

 

যার সাংগঠনিক ক্ষমতা প্রশ্নাতীত। আওয়ামী লীগের আরেক দুঃসময় ২০০৩ সালে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনে অংশ নিতে চিকিৎসা বিজ্ঞানে উচ্চ শিক্ষা অসমাপ্ত রেখে দেশে আসেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, মেয়র নির্বাচিত হন। পৌরসভা থেকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হওয়ার পর ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রথম সিটি কর্পোরেশন মেয়র নির্বাচিত হন।

 

 

তিনিই বাংলাদেশের প্রথম নারী সিটি কর্পোরেশন মেয়র। এর পর থেকে প্রতিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ধারাবাহিক ভাবে মেয়র নির্বাচিত হয়ে আসছেন। দলীয় আদর্শ বজায় রেখে নিজ দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।৭৫ পরবর্তী ক্রান্তিকালে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগকে বিশেষ অবস্থানে নিয়ে আসার পেছনে এ দুইজনের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

 

 

দুজনই প্রবীণ নেতাদের সমর্থন পেয়েছেন নিজ নিজ যোগ্যতায়। তৃণম‚ল থেকে উঠে আসা দুজন নেতাই সাধারণ কর্মী সমর্থকদের অকুন্ঠ সমর্থন পেয়েছেন, পেয়েছেন সন্মান,তাই আজ তাঁদের একজন প্রভাবশালী সাংসদ, অপর জন সিটি মেয়র। তাঁরা দলকে যেমন দিয়েছেন, দলের কল্যাণে তাঁদের প্রাপ্তিও কম নয়।

 

 

তাঁদের নেতৃত্বে যখন দল আরো সুগঠিত হওয়ার কথা তখন তাঁদের বিভাজনের কারণে দলীয় শক্তি ক্রমশ দুর্বল হয়ে আসছে। এতে তাঁদের দুজনের কেউই লাভবান হচ্ছেনা। তাঁদের বিভাজনের কারণে সুবিধাভোগী একটি শ্রেণি হয়তো লাভবান হচ্ছে তাই বিভক্তি জিইয়ে রাখতে তাদের উৎসাহ ছিল, এখনও আছে।

 

 

যে দলের বদৌলতে তাঁদের এই অবস্হান সেই দল বঞ্চিত হচ্ছে কাঙ্ক্ষিত প্রাপ্তি থেকে। সক্রিয় কর্মী এবং সহানীয় নেতৃবৃন্দের অনেকেই দ্বিধাবিভক্ত থাকলেও সাধারণ সমর্থক গণ নির্দিষ্ট কোন পক্ষ অবলম্বন করতে পারছেনা শুধুমাত্র দলীয় আদর্শের কারণে। তাই একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় তাঁদের বিভক্তি অর্থ, ক্ষমতা, পদলোভী স্বার্থান্বেষী মহল ছাড়া কারো কাম্য নয়।

 

 

এই স্বার্থান্বেষী মহলের প্ররোচনায় বিভক্তি জিইয়ে রাখলে দল কোথায় পৌছুবে তা বুঝতে বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। যে দুজনকে ঘিরে এত হিসাব নিকাশ তাঁরা কেন এই সহজ বিষয়টি বুঝতে পারছেন না সেটিই বিস্ময়কর! বর্তমান নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিগণ কোন না কোন ভাবে দুটি বলয়ে বিভক্ত।

 

 

এমন অনেক নেতা রয়েছেন যারা এ দুজন নেতার আশীর্বাদেই নেতা হতে পেরেছেন, পদ পেয়েছেন। এমন অনেকে আছেন যারা সবসময় ক্ষমতাসীন দলের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখে। ক্ষমতার পালাবদল হলে এরাও রঙ বদলায়। দলের দুঃসময়ে এদের টিকিটিও খুঁজে পাওয়া যায় না।

 

 

শামীম - আইভী বিভাজন মিটাতে এসব স্বার্থান্বেষী মহলের কেউই আন্তরিক হবেনা আর সেটিই স্বাভাবিক বলে সাধারণ মানুষের ধারণা। কোন কোন নেতা আবার সুবিধা লাভের আশায় ঘন ঘন পক্ষ বদলাচ্ছেন। দলের প্রয়োজনে এসব নেতা কোন কাজে তো আসবেই না, প্রয়োজনে পিঠ বাঁচাতে শামীম - আইভী কে কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে।

 

 

সাধারণ সমর্থক গণ আলাদা ভাবে কোন পক্ষেই যেতে চায় না। তাঁদের চাওয়া দুঃসময়ের কান্ডারী এ দুজন নেতা দলীয় স্বার্থে বিভেদ মিটিয়ে একমঞ্চে আবির্ভ‚ত হোন। তাঁদের বিভাজন অব্যাহত থাকলে সাধারণ সমর্থকদের মনোবল ভেঙে যাবে। আসন্ন নির্বাচনে বা যে কোন সংকট কালীন সময়ে এর প্রভাব কোন অবস্থাতেই দলের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না।

 

 

সাংগঠনিক ভাবে দল দুর্বল হয়ে পড়বে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তাই দলীয় স্বার্থে দুজন দক্ষ, অভিজ্ঞ, নেতা নেত্রী স্ব উদ্যোগে বিরাজমান বিভেদ মিটিয়ে ফেললে তাঁদের গ্রহণ যোগ্যতা অনেক গুণ বাড়বে ছাড়া কমবে না। উজ্জীবিত হবে সাধারণ কর্মী সমর্থক।

 

 

শামীম ওসমান এবং সেলিনা হায়াৎ আইভীর ভাই-বোন সম্পর্ক প্রকৃত অর্থেই নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে প্রতিফলিত হোক এমন চাওয়া প্রতিটি দলপ্রেমী কর্মী সমর্থকের। দলীয় ঐক্য টিকিয়ে রাখতে তাঁরা উভয়েই এগিয়ে আসবেন অগণিত কর্মী সমর্থকের তেমনটিই প্রত্যাশা।

 

 

এক্ষেত্রে তাঁদের বিভাজনে লাভবান পক্ষ অখুশি হলেও উপকৃত হবে অগনিত সাধারণ কর্মী সমর্থক।বন্ধ হবে এক পক্ষের বিরুদ্ধে অপর পক্ষের কাদা ছোড়াছুড়ি। নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ মুক্তি পাবে বিভিন্ন দল উপদলে বিভক্তির কলঙ্ক তিলক থেকে।এন.হুসেইন রনী /জেসি 

লেখক : বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানী ও পোশাক শিল্পের সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা।