জন্ম নিবন্ধন বিড়ম্বনায় প্রবল ভোগান্তিতে সেবা প্রত্যাশীরা
সাইমুন ইসলাম
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৭:৪৪ পিএম, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ শুক্রবার
জন্ম নিবন্ধন একটি ব্যক্তির জীবনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নথি। এই নথির উপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র তৈরি হয়। কিন্তু এ নথি ইউপি থেকে সংগ্রহ করতে যেন যুদ্ধ জয়ের মতো সংগ্রাম করতে হয় সেবা প্রত্যাশীদের। এমন ভোগান্তিতে এক নারী আক্ষেপ করে বলেছিলেন সন্তান জন্মদানের চেয়েও জন্ম নিবন্ধন প্রাপ্তিতে বেশি কষ্ট সহ্য করতে হয়।
অথচ বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে ইউএনডিপির আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় ২০১০ সালের ১১ই নভেম্বর দেশের প্রতিটি জেলায় ইউনিয়ন পর্যায়ে তথ্যসেবা কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে উন্নয়ন অগ্রযাত্রায়, তথ্যই শক্তি স্লোগান দিয়ে দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে তথ্য সেবা কার্যক্রম চালু করা হয়। এরপর প্রায় ১ যুগ পেরিয়ে গেলেও যথাযথভাবে কাজে আসছেনা ইউপি সেবা।
ইউপিতে এ সেবা নিতে এসে প্রতিনিয়ত তিক্ত অভিজ্ঞতার স্বীকার হতে শোনা যায় অনেককেই। ফতুল্লা থানাধীন ৫ টি ইউনিয়নে এ ভোগান্তি যেন নিত্যনৈমত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কুতুবপুর, ফতুল্লা, এনায়েতনগর, কাশিপুর ও বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদ ঘুরে এমন ভোগান্তির সত্যতা মিলেছে। কেউ জন্ম নিবন্ধন কিংবা নিবন্ধন সংশোধন করতে আসলেই পরতে হয় বিড়ম্বনায়। প্রথম বিড়ম্বনা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় সার্ভার জটিলতাকে। কেউ সেবা নিতে আসলে প্রায়শই শোনা যায় সার্ভার বন্ধ।
আগামী সপ্তাহে আসেন। অথচ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য জন্ম নিবন্ধন প্রয়োজন হয় অতিসত্তর। শুধু তাই নয়। বলা হয় সার্ভার সমস্যা বাহিরে থেকে করে নিয়ে আসেন। বাহিরে থেকে করতে আসলে টাকা গুনতে হয় কয়েকগুন। এছাড়াও জন্ম নিবন্ধন পেতে যে সময় লাগার কথা প্রকৃত অর্থে সময়ও লাগে অনেক বেশি। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট কাজে দায়িত্বপ্রাপ্তদের অসদাচর তো আছেই। পদে পদে ভোগান্তি শেষে হাতে পাওয়া যায় কাঙ্খিত নথি। এতে করে চরম অস্বস্তিতে সেবা প্রত্যাশীরা।
এ ব্যাপারে বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত আলী বলেন, সার্ভার সমস্যাটা দীর্ঘদিন ধরে চলছে। ফলে অনেকে বাইরে থেকে আবেদন করছে। তবে কেউ যদি অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে তবে তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে বক্তাবলী বাজারে আমি নিজে দোকান বসানোর ব্যবস্থা করবো যেনো কেউ অতিরিক্ত অর্থ আদায় না করতে পারে এবং ভোগান্তিতে ফেলতে না পারে।
এ ব্যাপারে ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান স্বপন বলেন, এ ভোগান্তিতে আমাদের কোনো হাত নেই। সার্ভার জটিলতা সরকারি ওয়েবসাইট থেকেই। আমরা টাকা জমা দিতে চাই কিন্তু ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া হয়না। আগে যখন অনলাইন ছিলো না তখন কেউ চাওয়া মাত্রই আমরা দিয়ে দিতাম। কিন্তু এখানে আমাদের কিছুই করার নেই। যখন গুরুত্বপূর্ন কাজ আটকে যায় তখন জন্ম নিবন্ধন করতে কিংবা সংশোধন করতে আসে অনেকে। তখন এসে দেখে সার্ভার সমস্যা। তাদের বলবো প্রয়োজনীয় কাগজ যা লাগবে তা আগেই করে নেন।
এ ব্যাপারে এনায়েত নগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বলেন, সার্ভার জটিলতার বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত আছি। সার্ভারের সমস্যার কারণে জন্ম নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় প্রচুর বেগ পেতে হচ্ছে। টাকা জমা নিচ্ছে কিন্তু প্রিন্ট হচ্ছে না। খুব অল্প সময়ের জন্য মাঝে মাঝে সার্ভার ঠিক হলে অল্প কিছু জন্ম নিবন্ধন করা যায়। এটা নিয়ে মিটিংয়ে ইউএনও মহোদয়ের সাথেও আলোচনা হয়েছে।
অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার ব্যাপারে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জন্ম নিবন্ধনের জন্য ৫০ টাকা করে ফি নির্ধারণ করা আছে। তবে ডিজিটাল উদ্যোক্তারা তাদের পারিশ্রমিক ও আনুষঙ্গিক কিছু নথির খরচ বাবদ সর্বমোট ১০০ টাকা নির্ধারণ করা আছে। কেউ যদি এর চেয়ে বেশি টাকা নেয় তবে এটা অন্যায় এবং এমন করা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে সেবা প্রত্যাশীরা চায় নিরবিছিন্ন সেবা। কোনো রকম হয়রানি এবং অতিরিক্ত অর্থ আদায় ছাড়া সেবার মান বৃদ্ধির দাবি জানান তারা। এস.এ/জেসি