কেন এই বেহাল দশা
লতিফ রানা
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৯:৫৮ পিএম, ৮ অক্টোবর ২০২৩ রোববার
# এখানকার দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থায় এলাকাটি সব সময়ই জলাবদ্ধ থাকে
# বিআইডব্লিওটিএ ও সিএসডি গোডাউনের অতিরিক্ত ওজনের গাড়ি চলাচল
# অনেকেই এটাকে ড্যান্সিং জোন হিসেবে উপহাস করেন
নারায়ণগঞ্জ-আদমজী-চিটাগাংরোড সড়কটির জেলা প্রশাসকের বাংলোর সামনের অংশটি বেশিরভাগ সময়ই ভাঙ্গাচুড়া অবস্থায় থাকে। যানবাহনের চালক, যাত্রী ও স্থানীয়দের অভিযোগ কমপক্ষে ৭-৮ বছরের মধ্যে এই রাস্তা দিয়ে পুরো বছর জুড়ে কোন ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়া গাড়ি চলাচল করছে এমন কোন নজির নেই। অথচ এই রাস্তা দিয়ে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এমপি, মেয়র, ডিসি, এসপিসহ দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাগণ যাতায়াত করেন।
তারচেয়েও বড় কথা এই স্থানটি জেলার সর্বোচ্চ প্রশাসনিক অভিভাক হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের বাসভবনের ফটক। তারপরও কেন এই রাস্তাটি স্থায়ীভাবে মেরামতের জন্য কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন সেই বিষয়টি বোধগম্য নয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। বিষয়টি নিয়ে তারা নারায়ণগঞ্জ জেলার প্রভাবশালী দুই এমপি, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও জেলা প্রশাসকের মধ্যকার আভ্যন্তরীণ দূরত্বকে দায়ী করছেন।
কেউ কেউ আবার অপরিকল্পিত রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণকে দায়ী করেছেন। আবার কেউ কেউ বিআইডব্লিওটিএ’র জাহাজের জেটি এবং সিএসডির জেটির অতিরিক্ত ওজনের যানবাহন চলাচলকে দায়ী করেছেন। সর্বোপরি বছরের পর বছর এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকার এই সড়কটি এমন নাজেহাল অবস্থায় কেন থাকছে তা নিয়ে ভুক্তভোগীদের মধ্যে চলছে আলোচনা-সমালোচনা ও চুলচেরা বিশ্লেষণ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় খানপুর হাসপাতালের সীমানার পর থেকে এবং জেলা প্রশাসকের বাংলোর সীমানার শুরু থেকেই সড়কটি ভাঙ্গা শুরু। যেটা বাংলোর সামনে গিয়ে একেবারে নাজুক অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেখানে বড় বড় গর্তসহ উঁচু-নিচু ও এবড়ো-থেবড়ো হয়ে আছে সড়কের বিভিন্ন জায়গা। সেখানে কিছু ইট বিছিয়ে সেখানে মাটি দিয়ে সেসব গতু ভরাট করার চেষ্টা করা হয়েছে। সড়কটির পশ্চিম পাশে জেলা প্রশাসকের বাংলো এবং পূর্ব পাশে বিআইডব্লিওটিএ’র জাহাজ জেটি এবং সিএসডির জেটির মজুদাগার এলাকা।
সেখান থেকে খুবই ওজন নিয়ে বের হচ্ছে যানবাহগুলো। যার ঝাঁকুনিতে কেঁপে ওঠছে সড়কগুলো।তার উপর এই উঁচু-নিচু এবং ভাঙ্গাচুড়া রাস্তায় সেই গাড়িগুলো আরও বেশি করে হেলে দুলে চলার কারণে সেই যানবাহনগুলো আরও বেশি করে ঝাঁকুনি দিচ্ছে। তাছাড়া এখানকার রাস্তার পাশের ড্রেনগুলো খুবই সরু এবং অগভীর অবস্থায় অকেজো হয়ে পড়ে আছে।
বৃষ্টি মৌসুম তো দূরের কথা শুকনো মৌসুমেও এখনাকার সড়কগুলো স্যাঁতস্যাঁতে ভেজা থাকে বলে জানায় যানবাহন চালক ও যাত্রীরা। তারা আরও জানায় এখানে একটু পানি পড়লেও এখানকার দুই পাশে বাউন্ডারী দেয়াল থাকায় সেই পানি সরে যাওয়ার কোন জায়গা নেই। তার উপর এই রাস্তাটির উপর দিয়ে অতিরিক্ত ওজনের গাড়ি চলাচল করার চাপ নেওয়া এই নাজুক সড়কের পক্ষে সম্ভব বলে মনে হয় না।
সিএনজি চালক আরিফ হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নারায়ণগঞ্জ-আদমজী-চিটাগাংরোড সড়কটির খানপুর হাসপাতালের পর থেকে বরফকল এলাকার আগের রাস্তাটুকু প্রবিবছরের বেশিরভাগ সময়ই থাকে ভাঙ্গাচুড়া। এখান দিয়ে যেকোন যানবাহন চলাচল করার সময়ই এতটা ঝাঁকুনি হয় যে অনেকেই এই জায়গাকে ড্যান্সিং কার জোন অর্থাৎ গাড়ি নাচার এলাকা বলে উপহাস করেন। তারমানে যেকোন গাড়ি এখানে আসলেই যেন নাচতে বাধ্য হয়।
রিকশা যাত্রী চন্দনা রানী বলেন, নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে বড় হাসপাতালটির অবস্থান এখানে। এখানকার সবচেয়ে ঘনবসতি এলাকার মানুষের যাতায়াতও এই রাস্তা দিয়ে। এমনকি জেলার উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তার বাসভবন এখানে। এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি জোনের সড়কটি বছরে পর বছর এমন অবস্থায় থাকে, অথচ তার কোন স্থায়ী সমাধান করা হচ্ছে না, তা খুবই বিস্ময়কর।
পথচারী ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন বলেন, এই জায়গায় সব সময়ই পানি জমে থাকে। এখানকার ড্রেনটি আরও গভীর করাসহ নিয়মিত পরিষ্কার করে জায়গাটি শুষ্ক রাখা যেতে পারলে হয়তো এত দ্রুত রাস্তাটি নষ্ট হতো না। তাছাড়া যেহেতু রাস্তার এখানেই বেশিরভাগ সময় ভেঙ্গে যায়, তাই রাস্তাটির এই অংশটি আরও উচু করে এবং খুব হেভি করে আরসিসি ঢালাই করে এখানকার লোড নেওয়ার উপযোগী করে তুলতে পারলে হয়তো এই সমস্যাটা আর থাকতো না। যেখানে সমস্যা আছে, সেখানে সমাধানও আছে। আমাদের নারায়ণগঞ্জে দক্ষ প্রকৌশলীর অভাব নেই। তাই এর স্থায়ী সমাধান বের করা একটু শক্ত হলেও একেবারে অসম্ভব নয়।
তিনি বলেন, আসলে এই কাজের দায়িত্বে আছেন সিটি কর্পোরেশন। কিছুদিন আগেও মেয়র বলেছেন এখানকার ডিসি, এসপিরা মেয়রকে সহযোগিতা না করে একটি পক্ষ নিয়ে কাজ করে। বছর কয়েক আগে দেখেছি ময়লা ফেলা নিয়ে সমঝোতা না হওয়ায় ডিসির বাংলোর সামনে ময়লার গাড়ি এনে রেখেছে। তাই আমার মনে হয় এই রাস্তাটি নিয়ে কর্তৃপক্ষেরই কোন সদিচ্ছা নেই। তাই স্থায়ী কোন ভূমিকা রাখছে না।
তবে প্রকৃত কারণ যেটাই হোক না কেন, জনগণের ভোগান্তি কমাতে এবং নারায়ণগঞ্জ জেলার ভাবমূর্তি বজায় রাখার স্বার্থে এখানকার রাস্তাটি স্থায়ীভাবে মেরামত করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষকে জরুরী ও কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করার উচিৎ বলে নারায়ণগঞ্জবাসীর দাবি। এস.এ/জেসি