এমপি বাবুর সাথে লড়ছেন হাবিবুর রহমান মোল্লা
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৭:১৫ পিএম, ১১ অক্টোবর ২০২৩ বুধবার
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে উন্নয়নের বার্তা নিয়ে পুরোদমে মাঠে রয়েছে আওয়ামী লীগ। বিপরীতে বিএনপি এক দফা দাবী জানিয়ে আন্দোলনে রয়েছে। দুই দলই নারায়ণগঞ্জের নেতা কর্মীদের কর্মসূচির মাধ্যমে রাজপথে সক্রিয় রেখেছে। তবে দীর্ঘ দিন যাবত জেলার ৫টি আসনে নৌকার দাবী জানিয়ে আসছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।
কিন্তু জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহিদ বাদল একই ব্যক্তিকে দুই বারের বেশি মনোনয়ন না দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচন কমিটির কো চেয়ারম্যান আনোয়ার বিন কবিরের সাথে মতবিনিময় কালে তিনি দাবী তুলেন।
এদিকে আওয়ামী লীগ এখন তার মনোনয়ন চূড়ান্ত করার কাজ করছে। আগামী জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন হবে এমনটি মাথায় রেখে নির্বাচনের জন্য সংগঠন গোছানোর কাজ চূড়ান্ত করছে ক্ষমতাসীন দলটি। এই সময় একদিকে যেমন আওয়ামী লীগ সারা দেশে সাংগঠনিক তৎপরতা চালাচ্ছে, অপরদিকে নির্বাচন বিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে মাঠ থেকে পিছিয়ে নেই।
একই সাথে নির্বাচনে যেন ভালো এবং যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয় তার জন্য দলের ভিতর অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং বিরোধ যেন না থাকে তা নিশ্চিতরতে চাইছে। কিন্তু দীর্ঘ দিন যাবত নারায়ণগঞ্জ ২ আসনে একক আধিপত্য বিস্তার করে আসছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও এখানকার এমপি নজরুল ইসলাম বাবু। ওই আসনে তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী করার মতো যোগ্য নেতা থাকার পরেও টানা তিনবার আওয়ামী লীগের নমিনেশন পেয়ে তিনি এমপি নির্বাচিত হয়েছেন।
কিন্তু আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখানে নৌকার নমিনেশন পাওয়ার জন্য তোড়জোড় শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কৃষিবিদ ড. হাবিবুর রহমান মোল্লা। তিনি ইতোমধ্যে আওয়ামীলীগের উন্নয়নের বার্তা নিয়ে মানুষের কাছে যাচ্ছেন। সেই সাথে নৌকায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন।
এরই মধ্যে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এলাকায় পোস্টার, ফেস্টুন টাঙ্গিয়ে এমপি পদপ্রার্থী হওয়ার জানান দিয়েছেন এই কৃষকলীগ নেতা হাবিবুর রহমান মোল্লা। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও নানান প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। এর ফলে দীর্ঘদিন পর নজরুল ইসলাম বাবুর শক্ত প্রতিপক্ষ তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতারা।
তাই এবার সাংসদ নজরুল ইসলাম বাবুর মূল প্রতিদ্ব›দ্বী হাবিবুর রহমান মোল্লা নৌকার মনোনয়ন চাওয়ায় তাকে নিয়ে এলাকায় আলোচনা তৈরী হয়েছে। আর এতে করে রাজনৈতিক মহল মনে করছেন, হাবিবুরর রহমান মোল্লা নৌকার তিনবারের এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে। এজন্য তাকে নিয়ে কিছুটা চিন্ত্তি এমপি বাবু।
দলীয়সুত্রমতে, কৃষক লীগের কোনো পদে না থাকলেও নজরুল ইসলাম বাবু বিশাল বহর নিয়ে সমাবেশে হাজির হন। এসময় বাবুর নামে নানা ¯েøাগান দিতে থাকেন তার সঙ্গে থাকা অসংখ্য নেতাকর্মীরা। আর কৃষক লীগের পদে থাকায় হাবিবুর রহমান মোল্লাও হাজার হাজার নেতাকর্মী নিয়ে সমাবেশে হাজির হোন।
এর ফলে সমাবেশটি কৃষক লীগের হলেও মিছিলে মিছিলে আসল লড়াই হয়েছে আগামীতে লড়তে যাওয়া এই দুই এমপি মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্যে। সেখানেও বিশাল মিছিল নিয়ে নৌকার মনোনয়নের জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের নজর কাড়েন কৃষকলীগের নেতা হাবিবুর রহমান মোল্লা। তিনি এবার আট ঘাট বেধে মাঠে নেমেছে বলে জানান তার সমর্থকরা।
কৃষিবিদ ড. হাবিবুর রহমান মোল্লা জানান,নজরুল ইসলাম বাবু কৃষক লীগের কোনো পদে না থেকেও তিনি এই সমাবেশে আসার ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত শক্তিশালী হয়েছে। আমরা সবাই যদি এভাবে রাজপথে থাকি তাহলে ইনশাল্লাহ জয় আমাদেরই হবে।
আর এমপি মনোনয়ন প্রত্যাশীর বিষয়ে তিনি বলেন, আড়াই হাজার এলাকায় যদি এই আসনে এমপি বাবু আবারও মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হোন তাহলে আড়াইহাজারকে ব্যক্তি কেন্দ্রিক বানাবেন। অন্যদিকে আড়াইহাজারের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মতে, কৃষক লীগের এই সমাবেশে কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা উপস্থিত থাকায় এমপি বাবু তার অবস্থান জানান দেওয়ার জন্যই তিনি এই সমাবেশে আসেন বলে মনে করেন একাধিক নেতৃবৃন্দ। হাবিবুর রহমানের চেয়ে তার জনপ্রিয়তা একেবারেই কমে যাননি সে বার্তাও কেন্দ্রীয় নেতাদের জানিয়ে দিয়ে যান মিছিলের মাধ্যমে।
স্থানীয় নেতাদের মতে, সাংসদ নজরুল ইসলাম বাবুকে নিয়ে রয়েছে একাধিক বিতর্ক। টানা তিনবার তিনি এই আসনের এমপি নির্বাচিত হলেও আড়াইহাজারের অনেক অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি। এখনো অনেক রাস্তাঘাট বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এছাড়া এখানে নেই সকল সুবিধা সম্পন্ন কোনো হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়। সামান্য চিকিৎসা এবং উচ্চতর শিক্ষার জন্য আড়াইহাজারবাসীকে ঢাকার পথে ছুটতে হয়। যা নিয়ে এলাকাবাসীর ক্ষোভ রয়েছে।
তাছাড়া প্রায় সময় এই আসনটিতে খুন-খারাবি, মানবপ্রাচার, মারামারি-ডাকাতির ঘটনা ঘটে থাকে। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে আড়াইহাজারের আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে অবজ্ঞা করার অভিযোগ রয়েছে। একই সাথে ত্যাগীদের বাদ দিয়ে পুরো কমিটি নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আড়াইহাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে তার অনুসারীদের রাখার অভিযোগ রয়েছে। তাই এসব নিয়ে নজরুল ইসলাম বাবুর উপর নিজের দলেরই লোকদের ক্ষোভ রয়েছে। এই ক্ষোভ থেকেই তারা এই আসনে এমপি হিসেবে তার স্থলে অন্য কাউকে চাচ্ছে। নতুন কাউকে চাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই আসনটি আড়াইহাজার ও গোপালদী নামের দুটি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এ আসনে এবার মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৯৮ হাজার ৯২৩ জন। এ আসনে ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আতাউর রহমান খান আঙ্গুর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এমদাদুল হক ভূঁইয়া ৫৮ হাজার ৯৪৭ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আতাউর রহমান খান আঙ্গুর ফের এমপি নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এরপর ২০১৪ এবং সবশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনেও নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নজরুল ইসলাম বাবু। টানা তিনবার এমপি হিসেবে থাকলেও আগামীতে তিনি আবারও এমপি মনোনয়ন প্রত্যাশী হবেন বলে জানা যায়। তবে দীর্ঘদিন পর আড়াইহাজারে শক্তিশালী প্রার্থী লড়াইয়ের খবরে নজরুল ইসলাম বাবু কিছুটা ব্যাকফুটে রয়েছে বলে মনে করেন ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা কর্মীরা।
কিন্তু আগামী নির্বাচনে দলীয় হাই কমান্ড বার বার বলছে যে সকল এমপিরা এলাকয় জনবিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে তারা আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হতেপারেন। এই দিক দিয়ে কৃষকলীগের সাংগঠনিক সম্পাক হাবিবুর রহমান মোল্লা নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশায় কোন অংশে পিছিয়ে নেই।
তাই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনেস করেন আগামী নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান মোল্লা নৌকার মনোনয়ন চাওয়ায় এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর জন্য গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে তিনি। কেননা কৃষিবিদ হাবিবুর রহমান মোল্লা যেভাবে এবার আটঘাট বেধে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাতে মনে হচ্ছে তিনি নৌকার মনোনয়ন নিয়ে মাঠে চমক তৈরী করবেন।তবে নির্বাচনের তফসিলের পর মনোনয়নের ঘোষনার মাধ্যমে এই গলারকাটা পরিস্কার হয়ে যাবে।
সেই সাথে জানা যাবে, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে কে পাচ্ছে নৌকার মনোনয়ন। উল্লেখ্য নির্বাচন কমিশন সুত্রমতে আগামী নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তফসিল ঘোষনা করবেন নির্বাচন কমিশন। এই বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে কিংবা জানুয়ারির প্রথাম সপ্তাহে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এন. হুসেইন রনী /জেসি