ঊর্ধ্বগতির বাজারে মাত্র ৫০-১০০ টাকা রোজগারে চলছে দিন
শ্রাবণী আক্তার
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৮:০৯ পিএম, ১১ অক্টোবর ২০২৩ বুধবার
বিশ্ব নারী পুরুষের সমান অবদানেই এগিয়ে যাচ্ছে। তারপরও সমাজে এমন কিছু পেশা আছে যা নারীর জন্য একটু বিস্ময়কর। এমনই এক পেশার নারী চাষাড়ার রতী রবি দাস। যিনি ফুটপাতে বসে অন্যের জুতা মেরামত করে জীবীকা নির্বাহ করছেন। সরেজমিন নগরীর চাষাড়ার নবাব সলিমুল্লাহ রোডের বৈশাখী রেস্তোরার পাশে ফুটপাতের উপর কথা হয় তার সাথে।
তিনি জানান, পাকিস্তান আমল থেকেই তার স্বামীর ছোট একটি জুতার দোকান ছিলো। কিন্তু তিনি তার জন্য কোনো কিছুই করে রেখে যেতে পারেননি। তার স্বামী ১০ বছর আগে মারা যান। এরপর থেকে তিনি দীর্ঘ ১০ বছর ধরে জুতা মেরামতের কাজ করে জীবীকা নির্বাহ করছেন।
সন্তানদের কথা জিজ্ঞেস করলে কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, একে একে সাত সন্তান হয় আমার কিন্তু একজনও বাঁইচা নাই। প্রত্যেকটা পোলা-মাইয়া ৪-৫ বছর বয়স হইয়াই মইরা গেছে। আমি এহানে একলাই থাকি। আমার মা-বাপ, ভাই-বোন কেউই বাঁইচা নাই। এক ভাইয়ের পোলা আছে গাজীপুর থাকে আমারে দেহে না। আরেক ভাইয়ের বউ-পোলারা আছে কেউই দেহে না আমারে।
দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলেন, কে দেখবো আমারে কারটা কেডায় দেহে। আমার কপালডাই খারাপ, কেন যে আমার জন্ম হইছিলো? কইতে পারি না। আর আমার ছেলে মেয়ে যে মইরা যাইবো গা আমিও ভাবতে পারি নাই। আমার পোলা মাইয়া থাকলে আমার এতো কষ্ট করতে হইতো না।
কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, এহন এইখানে রইদে পুরি বিস্টিতে ভিজি কষ্ট কইরা কাম করি। কি করমু কাম না করলে কেমনে চলমু। আমারে তো দেহার কেউ নাই দুনিয়ায়। তারপরও সারাদিনে ১০০-১৫০ টেকার কাম হয় না। আজকে সারাদিনে ৫০ টেকার কাম হইছে মাত্র। বিস্টি আইলে যা-ই একটু বেশি কাম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে কিন্তু এইখানে বইয়া জুতা সিলাইতে পারি না সব ভিজ্জা যায় বিস্টিতে। মাঝে মধ্যে এই মনে করেন সাপ্তায় একদিন ৪০০-৫০০ টাকা রোজগার হয়।
এই টাকায় কীভাবে চলেন? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেনো রকম খাইয়া না খাইয়া দিন কাটাইতাছি জিনিসপত্রের যেই দাম। বাজারে গেলে দেহা যায় তরকারির(সবজির) যে কি দাম! কোনো তরকারি(সবজি) ৫০-৬০ টেকার নিচে কিনা যায় না। এরপর একটা না একটা জিনিসের দাম তো সাধ্যের বাহিরে থাকবোই। যেমন কয়দিন আগে মরিচের কেজি হইয়া গেছিলো ১২০০ টেকা কেজি। পিয়াইজ-আলুর দাম ও বেশি। মরিচ পিয়াইজ ছাড়া কি তারকারি রানধন যায়? এহন নিজে কাম করতে পারি যার কারণে কোনো রকম দিন যাইতাছে চিন্তা করি অসুস্থ হইয়া ঘরে পইরা থাকলে কে দেখবো?
আরোও বলেন, নগরীর ১৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আমি। রেশনের কার্ড করা আছে তারপরও ওই গুলাও তো টেকা দিয়াই কিনতে হয়। যে টেকা রোজগার করি তা দিয়া চলতে হিমশিম খাই প্রত্যেক মাসেই। ৬-৭ মাস পর পর বিধবা ভাতা দেয় এগুলা দিয়া কি চলন যায়? তিনি ভেজা চোখে বলতে থাকেন, জিনিসপত্রের দাম যদি কমতো তাইলে আমগো মতো গরিবের লাইগা অনেক ভালা হইতো। কাম কইরা খাই মানুষেরতে হাত পাইতা খাইতে সরম করে। এইভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়তে থাকলে সামনে কেমনে চলমু জানি না। এস.এ/জেসি