অর্ধকোটি টাকার জামদানী বিক্রি নোয়াপাড়া জমজমাট জামদানি হাট
এস এম শাহাদাত, রূপগঞ্জ
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০১:১৯ পিএম, ২৬ অক্টোবর ২০২৩ বৃহস্পতিবার
রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার পথ পেরুলেই নোয়াপাড়া জামদানীর হাট। রূপগঞ্জে তারাব সুলতানা কামাল সেতুর পাশ দিয়ে শীতলক্ষ্যা তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে নোয়াপাড়া জামদানীর হাট। এহাটটি অন্য পাচটি হাটের মত নয়। এ হাটে শুধু পাইকারি ব্যবসায়ীরাই নন, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসে ভিড় করছেন সাধারণ ক্রেতারা।
সপ্তাহে প্রতি শুক্রবার দিন সকালে বসে এ হাট। এখানে প্রতি হাট বার জামদানী বিক্রি হয় অর্ধকোটি টাকারও বেশী। অনেকের কাছে এটি গল্প মনে হলেও এটিই সত্য। একটি মাত্র টিনসেড ঘর রয়েছে এখানে তেমন কিছু নেই। এ শেড এর ভিতরে রং বে-রঙের জামদানীর পসরা সাজিয়ে বসে তাতিরা।
জানা গেছে, রূপগঞ্জের নোয়াপাড়া জামদানী পল্লীতে প্রতি শুক্রবার ভোর ৪টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত হাট বসে। এ হাটে জড়ো হতে থাকেন তাঁতি, ফড়িয়া, দালাল, পাইকারসহ খুচরা ক্রেতা –বিক্রেতাসহ নানা ধরনের ত্রেতা। হাটে ক্রেতারা চট, মাদুর বিছিয়ে বসে থাকে জামদানী ক্রয় করার জন্য। সবাইকে দেখা যায় দাঁড়িয়ে দুই হাতে শাড়ি উঁচিয়ে ধরে হাঁক দেন ‘এই জামদানি, শেষ দুইটা আছে।’
এ দুটো বিক্রি হয়ে গেলে আরও দুটো হাতে ওঠে। ‘দুইটা’ আর যেন শেষ হয় না। এভাবে ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চলে। হাঁকডাকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলে বেচাকেনা। হাট চলে শুক্রবার ভোর ৪টা থেকে সকাল ১০টা পযর্ন্ত। প্রতি হাটে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ লক্ষ টাকার জামদানী বিক্রি হয় এ হাটে।
জানাযায়, নোয়াপাড়া, রূপগঞ্জের রূপসী, মৈকুলী, খাদুন, পবনকুল, কাজীপাড়া, মোগরাকুল, বরগাও ও সোনারগাঁ এবং আড়াইহাজারের তাঁতিদের তৈরি জামদানি সংগ্রহ করতে আসেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পাইকারি ব্যবসায়ীরা। সেখান থেকে জামদানি চলে যাচ্ছে দেশের আনাচে-কানাচে। যাচ্ছে নামিদামি ব্র্যান্ডের শোরুমে।
একেকটি শাড়ি দেড় হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। জামদানি শাড়ি ছাড়া অন্য কোনো কাপড় কিংবা পণ্য এ হাটে পাওয়া যায় না। জানা যায়, প্রতি হাটে ১০ থেকে ১৫ হাজার পিস শাড়ি বেচাবিক্রি হয়। টাকার হিসাবে প্রায় ১ কোটি টাকা লেনদেন হয় হাটে। হাটে শাড়ি বিক্রিতে তেমন কোন ইজারা দিতে হয় না।
লন্ডন প্রবাসী ফাতেমা আসাদ জানান, খুলনা থেকে ছোট বোন আফসানাকে নিয়ে হাটে এসিেছ বিয়ের আনুষ্ঠানে শাড়ি গিফট করব। ৩ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকার শাড়ি কিনেছি। ১৫টি শাড়ি কিনেছি। তুলনামুলক এখানে দাম কম।
ঢাকা সিদ্ধেশ্বরী এলাকার গৃহিনী শিখা দাস বলেন, স্বামীকে নিয়ে প্রথম জামদানী হাটে আসলাম দেখার জন্য এসেছি। পছন্দ হলে জামদানী শাড়ি কিনব।
সোনারগাও উপজেলার বরগাও এলাকার তাঁতি আয়নাল হক জানান, ১৫ বছর ধরে এ হাটে আসি সাতটি জামদানী নিয়ে এসেছি চারটি বিক্রি করেছি। বর্তমানে আমরা দাম পাচ্ছি না। ৭ দিনে ধরে একটি শাড়ি বানাই সেটি সর্বোচ্চ বিক্রি ৪ হাজার টাকা। অথচ এ শাড়িটি ভারতে নিয়ে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ১৫ হাজার টাকা অথবা দেশের কোনো মার্কেটে বিক্রি হচ্ছে ১০ হাজার টাকা।
গন্ধবর্বপুর থেকে আসা তাঁতি মহিজ উদ্দিন বলেন, আমি ছোট বেলা থেকে জামদানী পাঞ্জাবির কাপড় তৈরি করে বিক্রি করি। ৮ শত টাকা থেকে শুরু করে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত জামদানী পাঞ্জাবি কাপড় বিক্রি করি।
পাইকারি ব্যবসায়ী হাজী আজগর আলী জানান, বাংলাদেশের জামদানি শাড়ির চাহিদা বিদেশেও রয়েছে। ভারত, আমেরিকা, লন্ডনসহ বিভিন্ন দেশে নারায়ণগঞ্জের জামদানি শাড়ি, থ্রিপিস ও পাঞ্জাবির কাপড় রফতানি হচ্ছ । এছাড়া তাতী, বিল্লাল, মতিন, গোলাম মাওলা, জাহাঙ্গীর, ইসমাঈল, হামিদুল্লাহসহ অনেকে বলেন, বর্তমানে জামদানী হাটে বেচা- বিক্রি কম। আগের মত হাটে জামদানী বেচা-বিক্রি হলে কোটির টাকার জামদানী বিক্রি হবে।
জামদানী পল্লীর মালিক সমিতির সভাপতি হাজী জহিরুল ইসলাম বলেন, এ হাটে কোন ইজারা নেয়া হয় না। প্রতিহাট বার এখানে ষাট থেকে সত্তর লক্ষ টাকার জামদানী বিক্রি হয়। হাটটি জমিয়ে রাখতে আমাদের অনেক শ্রম দিতে হয়েছে। এন.হুসেইন রনী /জেসি