মিনার ও ডেকোরেশনসহ ২০ ভাগ কাজ এখনো বাকি
রূপগঞ্জ প্রতিনিধি
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০১:৫২ পিএম, ৩০ অক্টোবর ২০২৩ সোমবার
সারাদেশের ন্যায় রূপগঞ্জ উপজেলার মুড়াপাড়া সদর এলাকায় নির্মিত দৃষ্টিনন্দন মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ হয়েছে। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ এ দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি উদ্বোধন করবেন। মডেল মসজিদটির এখনো ২০ ভাগ কাজ বাকী থাকতেই মসজিদটি উদ্বোধন করা হচ্ছে বলে স্থানীয় মুসুল্লীরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
মডেল মসজিদটির নির্মানে ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও মাত্র কাজ হয়েছে ৮০ ভাগ। এখনো মডেল মসজিদের মিনার, সিড়ি ও ডেকরেসনসহ ২০ভাগ কাজ বাকী রয়ে গেছে। এলাকাবাসী বলছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের গাফলতির কারনে মসজিদ নির্মাণ কাজ এখনো শেষ হয়নি।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের পাশেই নির্মাণ হচ্ছে মডেল মসজিদটি। কিন্তু মসজিদ নির্মাণের ৪ বছর পার হয়ে গেলেও মসজিদের মিনার, ডেকরেসন, দুই পাশের ডিজাইন সিড়িসহ অনেক নির্মাণ কাজ বাকী রয়েগেছে। এছাড়া গাড়ী পাকিং এর কাজ বাকী, তিনতলা ও নিচ তলার সৌন্দর্য বর্ধনের হয়নি এখনো।
কাজ শেষ না হওয়ায় এখনো চরম হতাশা ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে এলাকাবাসীর মাঝে। আবার এলাকার মুসল্লীরা আধুনিক মডেল মসজিদে নামাজ আাদয়ের অধির আগ্রহ নিয়েই দিন কাটাচ্ছেন। নতুন মসজিদের নির্মাণ কাজ ধীরগতিতে হওয়ায় ব্যাপক ক্ষোভেরও সৃষ্টি হয়েছে মুসল্লিদের মাঝে।
জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৭ মে মাসে ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বাস্তবায়নে এবং গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্বাবধানে ১৩ কোটি ৩১ লাখ ৪৯ হাজার ৫শত ৫৮ টাকা ব্যয়ে মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি নির্মানের বরাদ্ধ দেয়া হয়। নির্মানের মেয়াদকাল দেয়া হয় দুই বছর। মসজিদটি নির্মানের কাজ পায় খান বিল্ডার্স ফ্যামিলি বাজার (জেভি) নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
মসজিদ নির্মানের শুরুতেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বহীনতার পরিচয় দেয়। বিনা কারণে ৬মাস কাজ বন্ধ রাখে। এসব কারনে গত ৪বছরেও শেষ হয়নি মডেল মসজিদ নির্মানের কাজ। তিনতলা বিশিষ্ট এ মসজিদটির নিচতলা ১২ হাজার বর্গফুট, ২য় তলা ৮হাজার ৫শ বর্গফুট ও ৩য় তলা ৮ হাজার বর্গফুট আয়তন বিশিষ্ট।
মসজিদটিতে বিশেষ সুবিধাগুলো হচ্ছে হজযাত্রীদে প্রশিক্ষণসহ হজ পালনের জন্য ডিজিটাল নিবন্ধনের ব্যবস্থা, নারী ও পুরুষের পৃথক অজুখানা ও নামাজ আদায়ের সুবিধা, প্রতিবন্ধী মুসল্লিদের টয়লেটসহ নামাজের পৃথক ব্যবস্থা, ইসলামিক বই বিক্রয়কেন্দ্র, ইসলামিক লাইব্রেরী, অটিজম কর্নার, ইমাম ট্রেনিং সেন্টার, ইসলামিক গবেষণা ও দ্বীনি দাওয়া কার্যক্রম।
কোরআন হেফজখানা, শিশু ও গণশিক্ষা ব্যবস্থা, দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আবাসন ও অতিথিশালা, মরদেহ গোসল ও কফিন বহনের ব্যবস্থা, ইমাম-মুয়াজ্জিনের আবাসনসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অফিসের ব্যবস্থা। এছাড়াও রয়েছে নিরাপত্তার জন্য সিকিউরিটি গার্ড রুম।
রয়েছে গাড়ি পার্কিংয়ের সুব্যবস্থা। আগামী ৩০অক্টোবর সোমবার রূপগঞ্জ উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার আরো ৫০ টি মডেল মসজিদ ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র শুভ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্থানীয় মুসুল্লী হারুন মিয়া জানান, আমরা উপজেলাবাসী এই প্রথম আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন মডেল মসজিদে নামাজ আদায়ের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছি। মসজিদটি এক নজর দেখে মনটা জুড়িয়ে যায়।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের উপজেলায় এই দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি নির্মাণ করে আমাদেরকে ভাগ্যবান করেছেন। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের খামখেয়ালীপনায় মসজিদের কাজ এখনও বাকী রয়েছে।
স্থানীয় মুসল্লী সূজন মিয়া বলেন, ‘অনেক স্বপ্ন নিয়ে বসে আছি সরকারের উদ্যোগে গড়ে তোলা আধুনিক দৃষ্টিনন্দন মডেল মসজিদে নামাজ আদায় করবো। কিন্তু মসজিদের কাজ এখনো সম্পূর্ন না হওয়ায় আমরা হতাশ।
রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শাহজাহান ভুইয়া বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা ও সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অক্লান্ত পরিশ্রম করে দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে একমাত্র প্রধানমন্ত্রী যিনি সারাদেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায় কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে দৃষ্টিনন্দন মডেল মসজিদ মুসুল্লীদের উপহার দিয়েছেন। আর সেই মডেল মসজিদ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে আমাদের নেতাকর্মীদের মাঝে আনন্দের জোয়ার বইছে। আমরা এই সফল প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
মসজিদের মুসুল্লী রফিক মিয়া, এই মডেল মসজিদটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন। আর আমরা রূপগঞ্জবাসী এই দৃষ্টিনন্দন মডেল মসজিদে নামাজ আদায়ের জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছি। এ মসজিদটি পর্যটন শিল্পেও অনেক গুরুত্ব বহন করবে। এছাড়া মসজিদের যতটুকু কাজ বাকী আছে তা দ্রুত শেষ হবেইনশাল্লাহ।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান খান বিল্ডার্স ফ্যামিলি বাজার (জেবি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাওফুল ইসলাম রিয়ান বলেন, রূপগঞ্জ মসজিদটিরও নির্মাণকাজ এর ধীরগতির কারন করোনা মহামারীর কারনে মসজিদের ফান্ড ৯মাস বন্ধ ছিল। করোনার কারনে মডেল মসজিদের নির্মাণ সময় ২০২৫ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
খান বিল্ডার্স ফ্যামিলি বাজার (জেভি) এর প্রকৌশলী আবু সাঈদ বলেন, মসজিদ নির্মাণের স্থানে উপজেলা সদরের একটি পুকুর থাকায় সেটা ভরাট কে করতে দেরি হয়েছে। বরাদ্ধ দেরীতে পাওয়ায় কাজটি শুরু করতেই দেরি হয়। তবে আমরা দ্রুত কাজ শেষ করবো।
মডেল মসজিদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল হক বলেন, এ মসজিদের দায়িত্ব উপজেলা পরিষদের নয়। মসজিদ নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পরে ব্যবস্থপনা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মসজিদটি উদ্বোধন করবেন সেই কারণে মসজিদটি নির্মাণে ধীরগতি হওয়ায় জেলা পরিষদের মিটিংয়ে দ্রুত কাজ সম্পন্ন করার জন্য তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এ মডেল মসজিদের জন্য একজন পেশ ইমাম কাম খতিব, একজন মুয়াজ্জিন ও দুইজন খাদেম নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আশাকরি বাকী কাজ নভেম্বর মাসের মধ্যেই শেষ হবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন জানান, রূপগঞ্জ মডেল মসজিদের নির্মান কাজ প্রায় শেষের দিকে। কাজ দ্রুত শেষ করতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বলা হয়েছে।