দুর্নীতির বরপুত্র মতির পক্ষে খোকন সাহার সাফাই
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৭:৩৪ পিএম, ১৭ নভেম্বর ২০২৩ শুক্রবার
অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচার মামলায় রাজাকার পুত্র নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহবায়ক মতিউর রহমান মতির পক্ষে সাফাই গাইলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা। এড. খোকন সাহা বলেন আমাদের মতিকে নিয়ে একটি স্বার্থন্বেষী মহল ষড়যন্ত্র করে মামলার আসামি করেছে।
একটি মহল ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে। তার এই বক্তব্যের পরপরই সিদ্ধিরগঞ্জ জুড়ে চলছে বিভিন্ন সমালোচনা। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) বিএনপি জামায়াতের ডাকা অবরোধ বিরোধী মিছিল ও নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের আনন্দ মিছিলে অংশ নিয়ে খোকন সাহা এ কথা বলেন। এদিকে দুর্নীতির মামলায যুবলীগ নেতা মতিউর রহমান মতি প্রায় সাত দিন কারাভোগের পর জামিন পেয়ে এলাকায় আসেন।
দুর্নীতিবাজ ও রাজাকার পুত্র কাউন্সিলর মতিকে নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগংরোডে আনন্দ মিছিল শেষে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা বলেন, আমি একটা কথা বলতে চাই। আমার ভাই মতির বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। মতি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। মতি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হযয়ে আদালতের আশ্রয গ্রহণ করেছে। আদালত পাঁচ দিন পরে তার জামিনের বিষয় বিবেচনা করে তাকে মুক্তি দিয়েছেন। ঘটনা যদি সত্য হইত তাহলে মতি এত তাড়াতাড়ি জামিনে মুক্তি পাইতো না। একটি স্বার্থন্বেষী মহল মতি কে ষড়যন্ত্রের জালে ফাঁসিয়েছে।
পাশাপাশি ওই স্বার্থন্বেষী মহল মতির বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ জেলা জুড়ে পোস্টার লাগিয়েছে। তিনি আরও বলেন, ঘটনা মিথ্যা দেখে মতি আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। এ অঞ্চলে অনেকের বিরুদ্ধে মামলা হয় কই তারা তো আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হযয়ে আত্মসমর্পণ করে নাই। একটি মহল ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আপনারা সকলেই সতর্ক থাকবেন। সকল সময়মতির পাশে থাকবেন বলেও জানান খোকন সাহা।
এদিকে তার এই বক্তব্যের পরই তৃণমূল নেতাকর্মী ও স্থানীয়দের মাঝে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়ে তিনি একজন দুর্নীতিবাজ ও রাজাকার পুত্রের পক্ষে সাফাই গেয়ে একজন অপরাধীকে উচ্ছ্বসিত করলেন। তিনি কাকে স্বার্থন্বেষী বললেন প্রশ্ন তৃণম‚ল নেতাকর্মীদের। তারা জানান দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত করে দুর্নীতির সাথে মতির সংশ্লিষ্টতা পেয়ে তার (মতি) বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। তাহলে কি সরকারি কর্মকর্তারা স্বার্থন্বেষী হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।
সিনিয়র আওয়ামী লীগের একজন নেতা হয়ে তিনি সরাসরি অপরাধীর পক্ষে সাফাই গেয়ে একজন অপরাধীকে আরও সাহস বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। এদিকে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলার চার্জশিট ভুক্ত আসামি ছিলেন যুবলীগের এই নেতা। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেন আদালত। গত ৬ নভেম্বর মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. আছাদুজ্জামানের আদালতে শুনানি শেষে মতিকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মঈনুল হাসান রওশনী। যুবলীগ নেতা ও কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি সুমিলপাড়া এলাকার মৃত বাদশা রাজাকারের ছেলে। উল্লেখ্য, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মতিউর রহমান (মতি) ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয় ১-এর উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। আসামি কাউন্সিলর মো. মতিউর রহমান মতির বিরুদ্ধে ৬ কোটি ১ লাখ ৭২ হাজার ২৬৫ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনসহ ১০ কোটি ৮৬ লাখ ৫ হাজার ৬৩৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।
এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যাংকে ৮২ কোটি ৫১ লাখ ৪২৪ টাকা জমা করে তার থেকে ৭৪ কোটি ১৩ লাখ ৮৮ হাজার ৬৮৯ টাকা উত্তোলন করে স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের অবস্থান গোপন করার অভিযোগ আনা হয়।অপর মামলার এজাহারে বলা হয়, কাউন্সিলর মতির স্ত্রী রোকেয়া রহমানের বিরুদ্ধে ৫ কোটি ৬১ লাখ ১৮ হাজার ৩৯৭ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিভিন্ন ব্যাংকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ১ কোটি ৮৬ লাখ ৬৭ হাজার ৩৯৫ টাকা জমা করেন। এর পর সেখান থেকে ১ কোটি ৮৫ লাখ ৭৬ হাজার ৩৯৮ টাকা উত্তোলন করে তা রূপান্তর, হস্তান্তর ও স্থানান্তরের অভিযোগ আনা হয়।