পেঁয়াজের ডাবল সেঞ্চুরি
শ্রাবণী আক্তার
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৯:০৯ পিএম, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩ রোববার
ভারত রপ্তানি মূল্য বেঁধে দেওয়ায় এমনিতেই দেশের বাজারে পেঁয়াজের বাজার চড়া ছিল। মাত্র গত সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম যেখানে ১০০ থেকে ১২০ টাকা ঘোরাফেরা করছিল সেখানে শুক্রবার ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি করা বন্ধের ঘোষণা দিলে পেঁয়াজের দাম লাগাম ছাড়া হতে শুরু কের।
আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি করবে না বলে জানিয়েছে ভরাত। এরই প্রভাবে পণ্যটির দাম হু হু করে বাড়ছে। শুক্রবার পেঁয়াজ প্রতি কেজিতে ৬০ টাকা বেড়েছে। শনিবার দুপুরের পর থেকে কেজি প্রতি পেঁয়াজ ২০০ টাকা পেরিয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা। দ্বিগুবাবু বাজার, বাবুরাইলের বউ বাজার, মাসদাইর বাজারসহ শহর ও শহরতলীর বাজারগুলোতে পেঁয়াজ নিয়ে বিক্রেতা ও ক্রেতাদের মধ্যে তর্কযুদ্ধ হতে দেখা গিয়েছে।
সাধারণত বছরে বাংলাদেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২৫ লাখ টনের বেশি। গত অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৩৬ লাখ টনের বেশি। তবে ক্ষেত থেকে তুলে সংরক্ষণ করা পর্যন্ত ৪০ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়। ফলে প্রতিবছর ১০ থেকে ১২ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়।
গতকাল শনিবার বিকেলে সরেজমিন শহরের দ্বিগুবাবু বাজারে ঘুরে জানা গেছে, শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ভারতীয় পেঁয়াজ ১০৬ থেকে ১১০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছিল। ঘন্টাখানেক পরে ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানির খবর ছড়িয়ে পড়লে হু হু করে দাম বাড়তে থাকে। ব্যবসায়ীদের মুখে ফুটে উঠে হাসি। এরপর অশ্ববেগে ছুটে পেঁয়াজের দাম। আর এটি বাড়তে বাড়তে শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ হয় ১৯০ টাকা থেকে ২১০ টাকা কেজি প্রতি।
একই চিত্র দেশি পেঁয়াজের ক্ষেত্রেও। শুক্রবার সকালে যেখানে কেজি প্রতি দেশি পেঁয়াজ ১৩৫-১৪০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। ভারতের রপ্তানি বন্ধের খবর ব্যবসায়ীরা নিশ্চিত হওয়ার পর শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশি পেঁয়াজ ২৩০ টাকা থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছে, এমনিতেই পেঁয়াজের দাম বাড়তি। কারণ এখনো দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসেনি। আর এরমধ্যে ভারত রপ্তানি না করলে পেঁয়াজের দাম বাড়াটা স্বাভাবিক। কারণ বাংলাদেশের মোট আমদানির ৯০ ভাগ পেঁয়াজ আসে ভারত থেকে। পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা বলছেন, কয়েকদিন ধরেই পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী ছিল। ভারতের রপ্তানি বন্ধের খবরে পেঁয়াজের দাম আরো বেড়েছে। তবে বাজারে দেশি পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। আগামী সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়লে দাম কমে আসবে।
খানপুর ও তল্লা বাজারে দেখা যায়, প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজের খুচরা মূল্য ২২০-২৪০ টাকা এবং ইন্ডিয়ান পেঁয়াজের মূল্য ২০০-২২০ টাকা। খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা সাদ্দাম জানান, আমাদের পাইকারীতে দেশী পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে ২০০-২২০ টাকা এবং ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ১৮০-২০০ টাকা তাই আমরা পরিবহন খরচ বাবদ এই মূল্যে বিক্রি করছি। খুচরা বাজারে কেউ কেউ দেশী পেঁয়াজ ২৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছে।
পেঁয়াজ ক্রেতা রিয়াজুল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রাইভেট কোম্পনীতে চাকুরী করি আমরা বেতনই পাচ্ছি না ঠিক মতো এদিকে একটা পন্যের দাম কমলে আরেকটার দাম বেড়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্রেতা বলেন, আমার বড় সংসার বাজারে আসছি এক পাল্লা পেঁয়াজ নিবো এসে শুনি এক পাল্লা পেঁয়াজের দাম ১১০০টাকা। শুনে ২ কেজি পেঁয়াজ কিনলাম। কাকে বলবো আমাদের এই করুন পরিস্থিতির কথা কেউ তো নাই শুনার।
তবে এই সময়ে পেঁয়াজের দাম বাড়াটা স্বাভাবিক বলছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
নারায়ণগঞ্জ কৃষিবিপণন অধিদপ্তরের কৃষিবিপণন কর্মকর্তা মো. আতিকুল ইসলাম যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘আমি বাস্তবতার নিরিখে বলি, বাস্তবতা হচ্ছে আমরা যদি কোনো ব্যবস্থা নিতে যাই সেক্ষেত্রে বাজারে পেঁয়াজের সংকট হবে। মানে পেঁয়াজ তখন আর ব্যবসায়ীরা বাজারে রাখবে না বা রাখতে চাইবে না। এখন নতুন পেঁয়াজ না আসা পর্যন্ত, যেহেতু ভারতের পেঁয়াজ ৮০০ ডলার করে ফেলছে, এবং এই বিধিনিষেধ আরো তিন মাসের জন্য বাড়িয়েছে।
এখন আমাদের দেশেতো পেঁয়াজের সিজন অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। যতটুকু পেঁয়াজ মজুদ করা ছিল কৃষকদের কাছে, ব্যবসায়ীদের কাছে বেশি একটা পেঁয়াজ নেই। ওনারা কৃষকদের কাছ থেকেই আনে। এখন যে সমস্ত হাটে কৃষকরা পেঁয়াজ বিক্রি করে যেমন- পাবনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ি, এই এলাকাগুলো মূলত পিয়াজের মূল উৎপাদনের জায়গা। এসব হাটে যদি আমরা অভিযান চালাই, এর আগে আমাদের অভিজ্ঞতা হচ্ছে তখন কৃষকরা আর বাজারে পেঁয়াজ নিয়ে আসে না। এইভাবে পেঁয়াজ তখন মার্কেটে থাকে না।
তখন মাকের্টে বিশাল একটা ক্রাইসিস দেখা দেয় এবং দামটা আরো বেড়ে যায়। এখানে আসলে সিজন যখন থাকে না তখন ইমপোর্টের ক্ষেত্রেও যদি পেঁয়াজ আমদানিতে সমস্যা হয় সেক্ষেত্রে আমাদের খুব বেশি হস্তক্ষেপ করলে মার্কেটে উল্টো রিয়েকশন হয় এটা হচ্ছে আমাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা। তবে গত সপ্তাহে পেঁয়াজ ও আলুর ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলেছি দ্বিগুবাবুর বাজারে। ওনাদের আমরা চালানগুলো চেক করছি আসলে ওনারা কত করে কিনে আনতেছে এবং কত করে বিক্রি করছে।
আর ওনারা মুল্য তালিকাটা টানাচ্ছে কিনা। সেক্ষেত্রে আসলে ওনাদের কেনাটাই এখন বেশি পড়ছে। আপনারা মোটামুটি নিশ্চিত থাকেন জানুয়ারীতে নতুন পেঁয়াজ উঠলে পেঁয়াজের দামটা কমে যাবে।’ এস.এ/জেসি