চাহিদা বেশি, অনেকেই ফিরছেন শূন্য হাতে
মেহেরীন জারা
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৮:১৯ পিএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ রোববার
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বর্তমানে সাধারণ মানুষের ধরাছোয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে। ঘন্টার পর ঘন্টা টিসিবির ট্রাকের পিছনে বিশাল লাইন প্রমান করে দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষরা সংসার চালাতে পারছেন না। জীবনধারণ ক্রমশ দূর্বিসহ হয়ে উঠছে স্বল্প আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত শ্রেনির মানুষের। বাজার মূল্যের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম দামে ওএমএস এর আটা-চাল, চিনি, ডাল ও তেল কিনার জন্য বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য মানুষ ভিড় করছেন।
এই টিসিবির পন্য যেখানে, সেখানেই নিম্ন-মধ্যবিত্ত লোকে লোকারণ্য। এখন বাজারে গেলে মিলে না সংসার চালানোর হিসাব তাই এই তীব্র শীতকে উপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে ন্যায্যমূল্যেও আটা, চাল আলু নিতে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করে পন্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এখানে প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য কিনতে জড়ো হচ্ছেন নানা শ্রেনি পেশার মানুষ। তারা লাজ-লজ্জা দুরে ঠেলে কম দামে টিসিবির পন্য কিনতে লাইন ধরছেন। তবে সেখানেও তাদের ভোগান্তির শেষ নেই।
বাজারে জিনিসপত্রের দামের উর্ধ্বোগতিতে ব্যয় মিটাতে যারা হিমশিম খাচ্ছেন তারা মধ্যরাতে লাইনে দাঁড়াতে বাধ্য হচ্ছেন। বাজারে গিয়ে দেখা যায়, নতুন আলু যেখানে ৬০টাকা ছিল এক সপ্তাহের ব্যবধানে তা এখন ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নতুন দেশি পেঁয়াজ এখন কেজি প্রতি ১১০ টাকা থেকে বর্তমানে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বাজারে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ওএমএসের প্রতি কেজি চাল ৩০ টাকা ও আটা প্রতি কেজি ২৩ টাকায় দেওয়া হচ্ছে। এলাকা গুলোতে টিসিবির ট্রাকে পন্য বিক্রির স্থানগুলো ঘুরে দেখা যায়, ট্রাক এলাকায় যাওয়ার আগেই ভিড় জমে যায়। ট্রাক আসার পর পরই দীর্ঘ অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়। এরপর কে কার আগে পন্য নিবে সেই নিয়ে চলতে থাকে ধাক্কাধাক্কি। এতোকিছুর পরও অনেকেই পন্য হাতে পান না। বহু সময় দাঁড়িয়ে খালি হাতে ফিরতে দেখা যায় অনেককে।
আসমা বেগম নামে এক গৃহিনী তার ছোট শিশুকে নিয়ে এসেছে চাল কিনতে, দীর্ঘক্ষন লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। পন্য শেষ হয়ে যাওয়ায় পরে খালি হাতেই ফিরতে হয় তাকে। অনেকে আবার চাল না থাকায় আটা নিয়েই নিজেকে সন্তুষ্ট রেখেছেন।
এ নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে এক গার্মেন্টস শ্রমিক বলেন, নানা অজুহাতে ব্যবসায়ীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে বিপদে ফেলছে। কোনো কিছু কিনার মতো হাতের সাধ্যে আসছে না। স্বল্প আয়ে সংসার চালানোও দায়। আমাদের কাছে এখন দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি যেন নতুন এক অভিশাপের নাম।
মন্ডলপাড়া এলাকার রোডের পাশে পণ্য পরিবহন ট্রাকের পাশে দাঁড়ানো হাসিনা খাতুন এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, আগে না এলে চাল-আটা পাই না। মাঝেমধ্যে খালি হাতে ফিরতে হয় আমাদের, তাই সকালে আগে-ভাগেই চলে আসি। তিনি আরো বলেন, মেয়েকে লাইনে দাঁড়া করিয়ে যাবেন বাসার কাজ সারতে। তার স্বামী রিকশা চালায়। যে কোনো ভাবেই হোক প্রতি সপ্তাহে আলু, চাল ও আটা সংগ্রহ করি। বাজারে সবকিছুর যে দাম তাতে ওএমএস-টিসিবির পন্য বড় ভরসা।
১৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সালেহা বেগম বলেন, আমরা মধ্যবিত্ত হয়েও আছি এক বিপদে চোখের শরমের কারনে কারো কাছে হাতও পাততে পারি না। আবার বাজারে সবকিছুর যেই দাম সেই দামে যে কিনে খাবো তারও কোনো উপায় নেই। কারণ আমাদের হাত বাধা। আয় রোজগার কম। আমার পরিবারে ৫ জন সদস্য তাদের মধ্যে ১ মাত্র উপার্জনকারী আমার স্বামী। একটা মানুষের উপর কত চাপ দেওয়া যায়।
বাড়িভাড়া, ছেলে মেয়ের পড়াশোনার খরচ অন্যান্য আরো কত কি? একটা সংসারের খরচ কী কম। তাই বাধ্য হয়ে একটু কষ্ট করে লাইনে অপেক্ষা করে কম টাকায় টিসিবির পন্য নিতে আসছি। মান সম্মানের কথা চিন্তা কইরা ঘরে থাইকা দেখছি কেউ আইসা ১ বেলার খাবার দিয়া যায় না। যেই সম্মানে আমার পেটে ভাত জোটে না সেই সম্মান দিয়া আমি কি করমু।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-১ জনাব মোঃ আব্দুল করিম বলেন, আমাদের এখানে চলতি মাসে এবার টিসিবির পন্য দেওয়া হয়নি। আগামি মাসের ১ম সপ্তাহের শনিবার দেওয়া হবে টিসিবির পন্য। আর বর্তমানে ওএমএস এর পন্য দেওয়া হচ্ছে সপ্তাহে সপ্তাহে।চাহিদা অনেক, মানুষ নিচ্ছে বেশি। কমপক্ষে ৩০০ থেকে ৪০০ এর মতো মানুষ আসছে পন্য নিতে।
সিটি কর্পোরেশনের ১৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর অসিত বরন বিশ্বাস বলেন, আমার ওয়ার্ডে এই মাসে আমরা টিসিবির পন্য দিতে পারিনি। কারণ ডিলাররা বলছে ওইখানে মাল পর্যাপ্ত নেই তাই তারা মাল ট্রাকে উঠাতে পারছে না। আর আমরা প্রত্যেকবারই এগুলো একইভাবে দেই সেটা ভিন্ন বিষয়। তিনি আরো বলেন, না পাওয়ার কারনে মানুষ যেভাবে টেলিফোন করছে তাতে বুঝা যাচ্ছে মানুষের প্রয়োজনটা কতটুকু আছে। দেখা গেছে সাধারন মানুষ যেভাবে তাগাদা দিচ্ছে মনে হচ্ছে মানুষের চাহিদা প্রচুর।
টিসিবির এখানে চাল, ডাল তেল আমরা প্যাকেজ দেই ৭৫০ টাকায়, এখানে চাল ৫ কেজি, ১লিটার তেল ও ডাল ৪ কেজি দেওয়া হয় । আর এখন না দেওয়ার কারন হচ্ছে টিসিবির ডিলাররা বলছেন ট্রাকে যে চাল, ডাল, তেল উঠানো হয় সেখানে তাদের গোডাউন এ নাকি এখন ডাল নেই। যখন ডাল আসবে তখন আবার দেওয়া শুরু হবে।
১৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান মনির বলেন, মানুষের চাহিদার চেয়ে পন্যের পরিমান কম। এ কারণে অনেকে দেখা যায় একদিনে আইসা নিতে পারে না। আর টিসিবির পন্য আমরা ২ দিনে দিয়ে থাকি। একদিনে না পেলে বলে দেই আপনারা কষ্ট করে কালকে আইসা নিয়ে যাইয়েন। আর আমার এখানে না সব জায়গাতেই ৪৭০ টাকা দরে টিসিবির পন্য বিক্রি করা হয়। এস.