রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১   ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

গ্যাস দেয়ার মুরোদ নেই বিল নেয়ার গোঁসাই

ইউসুফ আলী এটম

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৮:৫৫ পিএম, ১৭ জানুয়ারি ২০২৪ বুধবার

 

গ্যাস সংকটে দিশেহারা নারায়ণগঞ্জবাসী। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরদিন থেকেই গ্যাসের গ্যাস সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এখন অবস্থাটা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, রান্না করতে না পেরে খাবারের জন্য বাড়ির সদস্যরা হোটেলমুখী হতে বাধ্য হচ্ছেন। এ সংকট নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এলাকা এবং শহরতলীকে গ্রাস করছে। গ্যাস না থাকায় কোন বাড়ির চুলা জ্বলছে না। সবার ঘরেই পাক বন্ধ।

 

কিন্তু তাই বলে তো সকালের নাস্তা, দুপুর এবং রাতের খাবার না খেয়ে থাকা যায়! শিশুদের খাবার নিয়ে বেশী ভোগান্তিতে আছেন অভিভাবকরা। শিশুদের খাবার তৈরি করতে অনেকে ইলেক্ট্রিক হিটার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। এর ফলে বাড়তি বিদ্যুৎ বিল গুণতে হচ্ছে। অপরদিকে গ্যাস না পেয়েও মাস শেষে নিয়মিত গ্যাস বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। গ্যাস এখন শাঁখের করাতে রূপ নিয়েছে। থাকলেও যা, না থাকলেও তা। বিলের ব্যাপারেতো কোন ছাড় নেই। এ যেন, ‘ভাত দেবার মুরোদ নেই, কিল মারার গোঁসাই।’  

 

শহরতলী পূর্ব ইসদাইরের এক বাড়িওয়ালা জানান, গ্যাস না থাকায় তার বাড়ির ভাড়াটিয়ারা একজোট হয়ে মিটিং করেছে। এরপর তারা দল বেঁধে বাড়িওয়ালার কাছে গিয়ে ২ দফা দাবি পেশ করেছেন। হয় তাদেরকে এলপি গ্যাসসিলিন্ডার দিতে হবে, নয়তো মাটির চুলায় রান্না করার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। লাকড়ি দিতে হবে। তা না হলে তারা বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে। বাড়িওয়ালা তাদেরকে ইলেক্ট্রিক হিটার কিনে নেয়ার প্রস্তাব দেন। কিন্তু বাড়িওয়ালার এই প্রস্তাবে তারা রাজি নন বলে জানান। কারণ, ইলেক্ট্রিক বিল যে ভাড়াটিয়াদের দিতে হয়।

 

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গোটা নারায়ণগঞ্জের চিত্রটাই পূর্ব ইসদাইরের মতো। চাষাঢ়া এলাকার এক নারী চাকরিজীবী বলেন, ‘নির্বাচনের আগে কয়েকদিন তো গ্যাস ভালোই পাওয়া গেছে। কিন্তু নির্বাচন শেষ হওয়ার পরদিন থেকেই  কেনো গ্যাসের আকাল লাগলো, বুঝবার পারছি না’ তার মতে, এটা কি কোন স্যাবোটাজ!’

 

এদিকে আবার গ্যাসের দাম বাড়ানোর পাঁতারা চলছে বলেও শোনা যাচ্ছে। যারা গ্যাস বিতরণ করেন তারা এই দাম বাড়ানোর প্রস্তাব সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে জমা দিয়েছেন বলেও জানা গেছে। অন্য একটি সূত্র জানায়, এলপি গ্যাসের বাজার বৃদ্ধির চেষ্টা করছে একটি ব্যবসায়ী মহল। সেই মহলকে খুশি করতেই নিয়মিত গ্রাহকের গ্যাস বন্ধ রেখে সেই গ্যাস এলপিজি ব্যবসায়ী মহলের কব্জায় তুলে দেয়া হচ্ছে।

 

এমন ধরণের সংবাদে ক্ষেপেছে নারায়ণগঞ্জের সুশীল সমাজ। তারা বলছেন, এখন তো গ্যাস এক্কেবারেই পাওয়া যাচ্ছেনা। কিন্তু গ্রাহকের কাছ থেকে তো মাসে মাসে ঠিকই বিল নেয়া হচ্ছে। এমন  অবস্থায় যদি গ্যাসের দাম ফের বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়, তা কোনমতেই গ্রহণযোগ্য হবে না।

 

তারা  বলছেন, গ্রাহকরা সভ্য বিধায় সবকিছু নীরবে সহ্য করছেন। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, তারা আজীবন বোবা হয়ে সব অনিয়ম সয়ে যাবেন। এ বিষয়ে তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছেন, এই মুহূর্তে গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হলে তা হবে একটি আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত। দাম বাড়ানোর আগে চুলায় নিরবিচ্ছন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এস.এ/জেসি