রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১   ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তীব্র গ্যাস সংকটে বিপর্যস্ত জনজীবন

সাইমুন ইসলাম

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৮:০৫ পিএম, ১৯ জানুয়ারি ২০২৪ শুক্রবার

 

শিল্প কারখানায় সয়লাব, যান্ত্রিক শহর নারায়ণগঞ্জ এর অন্যতম অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র বিসিক শিল্প নগরীর ব্যস্ততা কমে গিয়েছে বহুগুণ। যে জায়গায় ২ মিনিট দাঁড়ানোর মত সময় ছিল না কারো সে স্থানেই পোশাক শ্রমিকরা পার করছেন অলস সময়।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শেষ কয়েক সপ্তাহে গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন মুখী শিল্প কারখানাগুলোতে পণ্যের উৎপাদন কমে গিয়েছে বহুগুণ। কোন কোন প্রতিষ্ঠান এলপিজি ও বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার করে অর্ডার প্রাপ্ত পণ্য তৈরীর চেষ্টা চালালেও এতে করে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায় অনেক। 

 

এ নিয়ে এক ডাইং মালিকের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, গ্যাসের সংকট গত কয়েক মাস ধরেই তবে জানুয়ারির প্রথম দিক থেকে এ সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। আমরা প্রতিদিন গড়ে যে পরিমাণ কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছি পূর্বে বর্তমানে তা কয়েকগুণ কমে গিয়েছে। 

 

এছাড়াও, গ্যাসের বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার করেও চাহিদা মত উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে করে অর্থনৈতিকভাবে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। 

 

ফতুল্লার এক সুতা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বললে তারা জানায়, গ্যাস সংকট এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে ব্যবসা বিলীন হওয়ার পথে। উৎপাদন এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে টিকে থাকাই দায়। বাধ্য হয়ে শ্রমিক ছাটাই করতে হচ্ছে।

 

এ নিয়ে সদ্য ছাটাই হওয়া এক উৎপাদনমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক জানান, বেশ কয়েক মাস ধরেই গ্যাসের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদনে যাওয়া যাচ্ছে না।  

 

যার কারণে বেশ কয়েক দিন অলস সময় পার করতে হয়েছে বহু শ্রমিকের। কিন্তু জানুয়ারিতে এ সংকট তিব্রতর আকার ধারণ করে যার ফলশ্রুতিতে বহু শ্রমিককে ছাটাই করা হয়েছে। গ্যাস সংকটের প্রভাব যে শুধুমাত্র উৎপাদন মুখী প্রতিষ্ঠানে পড়েছে তা নয় বরং সমগ্র নারায়ণগঞ্জের মানুষের ব্যক্তিজীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। 

 

বিশেষ করে শহরের খানপুর, সিদ্ধিরগঞ্জ, মাসদাইর, ইসদাইর, পঞ্চবটি, ফতুল্লা, কাশিপুর, কুতুবপুর এলাকায় এ সংকট অধিকতর তীব্র।

 

খানপুর এলাকার গৃহবধু পাপিয়া আক্তার জানান, দিনের বেলা গ্যাসের নাগাল পাওয়া তো দূরের কথা রাতের বেলাও গ্যাস পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। মধ্যরাতের দিকে গ্যাসের প্রবাহ কিছুটা আসলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। কখন গ্যাস আসবে কখন রান্নাবান্না করব এই চিন্তা সারাদিন মাথায় ঘুরে। সময় মত ঘুমাতে পারি না। 

 

মাসদাইর এলাকার বাসিন্দা মিশুক চালক রিমন জানান, গ্যাসের সংকট এতটাই তীব্র বাধ্য হয়ে এলপিজি কিনতে বাধ্য হয়েছি। দ্রব্যমূলের এই উর্ধ্বগতির বাজারে এলপিজি গ্যাস কিনে ব্যবহার করা অনেকটা মরার উপর খাড়ার ঘা। 

 

ইসদাইর বাজার এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল আউয়াল জানান, গ্যাস সংকটের কারণে অনেক ভাড়াটিয়া বাড়ি ছেড়ে দিয়েছে। প্রচুর রুম খালি পড়ে আছে। ভাড়াটিয়া না থাকলেও গ্যাস বিল নিয়মিত পরিশোধ করতে হচ্ছে। গ্যাসের সমস্যা না থাকলে এই বিড়ম্বনায় পড়তে হতো না।

 

এ ব্যাপারে তিতাস গ্যাসের নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক মামুনুর রশিদ যুগের চিন্তা কে জানান, নারায়ণগঞ্জে প্রতিমাসে ৯০ মিলিয়ন কিউবিক মিটার গ্যাস হলে মোটামুটি ভাবে মানুষ চলতে পারে কিন্তু বর্তমানে রয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ মিলিয়ন কিউবিক মিটার। যার কারণে গ্যাসের এই সংকট তৈরি হয়েছে। তবে গ্যাস সংকট জাতীয় সমস্যা। কবে নাগাদ এই সমস্যা সমাধান হবে তা বলা মুশকিল।

 

তবে, নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষ এই সংকটের কারণে মানবেতর জীবন যাপন করছে। সবাই এ সমস্যার দ্রুত সমাধান প্রত্যাশা করছেন। এস.এ/জেসি