রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১   ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

যানজট নিয়ে পুলিশের প্রতি ক্ষোভ নগরবাসীর

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৯:৩৭ পিএম, ২৬ জানুয়ারি ২০২৪ শুক্রবার

 

আমাদের দেশে অধিকাংশ মানুষ বিভিন্ন কারণে শহরমুখী হচ্ছে। জীবনের তাগিদে গ্রামের মানুষ গুলো শহরমুখী হন। শহরে চলাচল করতে গিয়ে মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। নারায়ণগঞ্জ শহরেই ২০ লক্ষ জনসংখ্যার উপরে। আর অধিক জনসংখ্যা হিসেবে উন্নয়নের দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে এ শহর।

 

নগরীর চাষাঢ়া থেকে নিতাইগঞ্জ পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার জুড়ে বঙ্গবন্ধু সড়কে প্রতিনিয়ত যানজট লেগে থাকে। আর এতে করে মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হয়। এই ভোগান্তি নিয়ে ক্ষোভ পুলিশ প্রশাসনের ট্রাফিক বিভাগের প্রতি প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন নগরবাসী। এই বছরের নাসিকের বাজেট অধিবেশনেও তার ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে।

 

এদিকে নগরবাসী থেকে অভিযোগ উঠেছে, শহরের ফুটপাত হকারদের দখলে। বর্তমান হকাররা ফুটপাত ছেড়ে বঙ্গবন্ধু সড়কে ভ্যান বসিয়ে প্রায় ১৫ ফিট দখল করে নিয়েছে। তাদের দখলের কারণে মানুষ যে একটু স্বস্তিতে হেটে চলাচল করবে তারও কোন অবস্থা নেই। আর যানজটের কারনেও রিকশা কিংবা অন্য কোন যান বাহন দিয়েও চলাচল করা যায় না। অভিযোগ রয়েছে হকার এবং যানজটের পিছনে বিশাল অংকের টাকা চাদাঁবাজি হয়।

 

শহরের প্রভাবশালী এমপির লোকজন এই চাদাঁবাজিতে জরিত বলে অভিযোগ তুলেন নগরবাসি। চাঁদা দেওয়ার মাধ্যমে  ফুটপাত দখল করে দোকান-পাট চালিয়ে যাচ্ছে হকাররা। আর মাঝেমধ্যে পুলিশ এলে তারা দোকান-পাট সরিয়ে নিচ্ছে, পরে আবার বসে যাচ্ছে। অনেক সময় পুলিশও চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের চাদঁবাজির জন্য ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে মানুষকে।

 

নগরবসী জানান, যানজটের কারণে চাকরিজীবী লোকেরা যথাযথ সময়ে তাদের অফিসে পৌঁছাতে পারে না, এবং যারা শিক্ষার্থী আছে তারা সঠিক সময়ে তাদের ক্লাসে উপস্থিত হতে পারে না। এমনকি অনেক সময় তাদের পরীক্ষা থাকা সত্ত্বেও যানজটের কারণে পরীক্ষার হলে সঠিক সময়ে বসতে পারে না। তাছাড়া কি কারণে শহরের মুল সড়কে যানজট লেগে থাকে তা কারো অজানা নয়। যে সমস্যাগুলোর কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে সেগুলো নিচে তুলে ধরা হলো।

 

১) অপরিকল্পিত নগরায়ন। ২) দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও যথাযথ আইনের অভাব। ৩) যত্রতত্র সিএনজি অটো স্ট্যান্ড। সড়কে অবৈধ পার্কিং ব্যবস্থা। টাকার বিনিময়ে অবাধে মহরে অটো মিশুক চলাচলের ব্যবস্থা। কিন্তু পুলিশ প্রশাসন চাইলে এই সমস্যা মহুর্তে সমাধান করে দেখাতে পারে। কেননা এসপি হারুন যখন নারায়ণগঞ্জের দায়িকত্ব পালন করেছেন তখন বঙ্গবন্ধু সড়কে হকার মুক্ত এবং অটো প্রবেশ করতে না দিয়ে দেখিয়ে গেছেন। তাই নগরবাসি প্রশ্ন তুলেন তিনি পারলে বর্তমান এসপি কেন পারবে না।    

 

জানা যায়, এই বছরের নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের বাজেট অনুষ্ঠানে পুশিলের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী বলেন, ফুটপাত ফ্রি রাখার দায়িত্ব পুলিশের। যানজট মুক্ত রাখার দায়িত্ব পুলিশের। হাইকোর্ট থেকে নির্দেশনার পরেও শহর থেকে ট্রাক সরানো হয় না। অথচ যখন এমপি তা সরিয়ে নিতে নির্দেশ দিলেন তখন সরানো হলো। তাহলে আমরা হাইকোর্ট বাদ দিয়ে এমপির নির্দেশ মানলেই পারি।

 

চাঁদাবাজি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ শহরে কে চাঁদাবাজী করে এটা সবাই জানে। এমপির লোকজন শহরে অটো রিকশা ঢুকায়। অটো রিকশায় এমপি মহোদয়ের স্টিকার লাগানো থাকে। এই অটো রিকশা শহরকে যানজট করে তুলেছে। আর ফুটপাত তো আমরা বানিয়েছি মানুষজন চলাচল করার জন্য। কিন্তু এ ফুটপাত হকারমুক্ত করতে গিয়ে আমাদের উপর হামলা হয়েছে। আমাদের রাস্তায় ফেলে পিটিয়েছে। তাহলে কেন আমি ফুটপাত দখলমুক্ত করতে যাবো। আমার পাশে তো তখন কেউ দাঁড়ায়নি। আমার তো পিস্তল নাই, কোন বাহিনী নাই। আমি অর্থ দিতে পারি না। নারায়ণগঞ্জের ডিসি ও এসপি দুই এমপির কথায় চলে। আমাদের কথা নগরবাসীর কথা চিন্তা করে কম।

 

তাশফিক নামের এক ব্যক্তি জানান, যানজট বর্তমানে আমাদের কাছে বিষফোড়ার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। বঙ্গবন্ধু সড়কে চাষাড়া শেখ রাসেল পর্যন্ত আসতে আমরা এখন যানজটের বিড়ম্বনায় পোহাতে হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু সড়কে অটোর যন্ত্রনায় মানুষ হেটেও চলাচল করতে পারে না। এই অটো থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। পুলিশ থেকে শুরু করে নামধারি সাংবাদিকও রয়েছে। যানজট নিয়ন্ত্রন নিয়ে প্রশাসনের প্রতি আমাদের আস্থা নেই। তারা এখানে ২ বছরের জন্য পকেট ভরে কামিয়ে চলে যায়। তাই বঙ্গবন্ধু সড়কের যানজট থেকে নগরবাসিকে বাচাঁতে হবে।

 

দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থা ও যথাযথ আইনের অভাব :

 

ট্রাফিক পুলিশের কাজ সড়কে শান্তি-শৃংখলা নিশ্চিত করা যানজট দূরকরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, শহরের বেশির ভাগ এলাকায়  দেখা যায় রিকশাওয়ালা, সিএনজি বা লেগুনা চালকরা শুধুমাত্র টাকার বিনিময়ে ভাঙা মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি হরদম পরিচালনা করছেন। ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা কিছু টাকার বিনিময়ে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও প্রধান সড়কগুলোতে চলাচল করে। প্রতিযোগিতা দিয়ে সিন্ডিকেটের সহায়তায় টাকার বিনিময়ে অটো প্রবেশ করে। এতে ভোগান্তি পোহাতে হয় নগরবাসিকে।  

 

নিবন্ধনহীন যানবাহন সড়কের নৈরাজ্য ও যানযট ঠেকাতে সারা দেশে ফিটনেস, রুট পারমিট ও যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করার কথা বলে আগের ডিসি চুপচাপ থেকে এখান থেকে বদলি হয়ে যান। সংশ্লিষ্টরা জানান, ফিটনেস, রুট পারমিট কিংবা ইন্স্যুরেন্সবিহীন কোনো যান রাস্তায় কোনো ধরনের দুঘর্টনা ঘটিয়ে পালিয়ে গেলেও এর নিবন্ধন নাম্বার শনাক্ত করে সংশ্লিষ্ট মালিক-চালকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা অসম্ভব। প্রয়োজনে দুঘর্টনা সংঘটনকারী গাড়িটি জব্দও করা যায়। অথচ নিবন্ধনহীন যানবাহন শনাক্ত করা যেমন দুস্কর, তেমনি ঘটনাস্থলে এ ধরনের যান আটক করা না গেলে সংঘটিত অপরাধ প্রমাণ করাও অসম্ভব। এ ছাড়া সব বিষয়ে নগর মাতাদের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। না হলে যানযট কখনো কমবে না। শহরবাসীর জীবন আরও দুর্বিসহ হয়ে উঠবে।

 

এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তার ফোনকল রিসিভ করেন নাই। এস.এ/জেসি