বাস মালিকদের কাছে জিম্মি না.গঞ্জবাসী
মাহফুজ সিহান
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৭:৩৩ পিএম, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সোমবার
# শহরে বাসের অরাজকতায় দায়ী নারায়ণগঞ্জের বাইরের লোকেরা
# বহিরাগত মালিকদের পক্ষ নিয়েছে স্থানীয় পরিবহন নেতারা
# উধাও মৌমিতা, বন্ধন-উৎসবের রুট পারমিট পাওয়া গাড়ি হাতেগোনা
# বেশিরভাগ পরিবহনেরই নিজস্ব গাড়ি রাখার জায়গা নেই
নারায়ণগঞ্জের মাত্র ৪ দশমিক ২ ভাগ রাস্তা গাড়ি চলাচলের বাকি ৯৫ দশমিক ৮ ভাগ রাস্তাই পায়ে হাঁটা কিংবা ছোট গাড়ি চলাচলের জন্য। কিন্তু এই স্বল্প সড়কেই ঠিক কতগুলো বাস চলতে পারবে তা নির্ধারণ এখনো হয়নি।
জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক জানিয়েছেন, সামনের সভায় এই বিষয়ে পরিবহন মালিক, বিআরটিএকে সাথে নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে সদ্য সমাপ্ত প্রেসক্লাব আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে নারায়ণগঞ্জে রুট পারমিট ব্যতিত বাস চলাচলের বিষয়ে কঠোরতার ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসক। তিনি রোববার থেকে রুট পারমিট ব্যতিত বাস চললেই মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তা সরাসরি ডাম্পিংয়ে দেয়ার ঘোষণা দেন। এই ঘোষণার পর পরিবহন মালিকদের আসল চেহারা ও থলের বেড়াল বেড়িয়ে এসেছে।
কেননা, নারায়ণগঞ্জে চলাচলকারী অধিকাংশ বাসেরই রুট পারমিট নেই। আর বন্ধন, উৎসব, হিমাচল, মৌমিতাসহ অধিকাংশ বাসের রুট পারমিট পেয়েছে এমন সংখ্যা খুবই কম। তাছাড়া নারায়ণগঞ্জবাসীর গলার কাঁটা মৌমিতা পরিবহনকে তো গতকাল রাস্তায় দেখাই যায়নি। এই মৌমিতা পরিবহন নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। অথচ বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক শামসুল কবির জানিয়েছে, মৌমিতা পরিবহনের মালিক নারায়ণগঞ্জের নন। সোহেলুর রহমান নামের এক ব্যক্তি মৌমিতা পরিবহনের মালিক।
নারায়ণগঞ্জের বাইরের এই লোক নারায়ণগঞ্জ থেকে কোন মৌমিতা বাসের কোন রুট পারমিট নেননি। ঢাকার বিআরটিএ থেকে মৌমিতার ১২০টি গাড়ির রুট পারমিট নিয়েছেন। তবে পুলিশের তথ্যমতে, মৌমিতা বাসের রুট পারমিট রয়েছে এমন সংখ্যা ৭০টি। অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ বিআরটিএ’র এডি শামসুল কবির জানিয়েছেন, সর্বমোট মাত্র ১১৯টি বাসের রুট পারমিট দিয়েছেন তারা। এসব তথ্যের ভিত্তিতে বেরিয়ে আসে নারায়ণগঞ্জ থেকে বিভিন্ন জেলা শহরে চলাচলকারী নামে বেনামে বাস পরিবহনের আসলে এই জেলা থেকে কোন রুট পারমিটই নেই। আর অধিকাংশ বাসের নিজস্ব কোন বাস রাখার জায়গাই নেই।
বিষয়টি নজরে আসার পরপরই গোলটেবিল বৈঠকে শামীম ওসমান বলেন, তিনি শীতল পরিবহন নামের একটি বাস পবিহনের মালিক। সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি থাকলেও শীতল পরিবহনের বাসগুলো রাখার জন্য তিনি একটি জায়গা ভাড়া করে সেখানে গাড়ি রাখেন। তাহলে নারায়ণগঞ্জের মানুষ নন, ব্যবসা করার নিমিত্তে রুট পারমিট প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া দেদারচে বাস নামিয়ে নগরবাসীকে কষ্টে ফেলবেন, অরাজকতা তৈরি করবেন এমন দুঃশাহস তারা কোথায় পান।
শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জ থেকে বিভিন্ন জেলায় আন্তঃনগর যেসব বাস রুট পারমিট বা অনুমোদন ছাড়া নামে বেনামে চলছে, সড়কে চাপ তৈরি করছে তা অবিলম্বে বন্ধের জন্য প্রশাসনকে চাপ দেন। এই ঘোষণার পর আন্তঃনগর সেসব বাস নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে তো লুকিয়েছে, তার সাথে সাথে নারায়ণগঞ্জের বন্ধন, উৎসব, হিমাচলসহ অন্যান্য পরিবহনের রুট পারমিট পাওয়া বাসের হাতেগোনা সংখ্যাটাও বেরিয়ে এসেছে। রুট পারমিট ছাড়া বাস উধাও হয়ে যাওয়ায় শহরে গতকাল যাত্রীর বাস সংকটে তীব্র ভোগান্তিতে পড়েছেন।আর এই সুযোগে পরিবহন মালিক ও নেতারা রুট পারমিট পাওয়া বাসও বন্ধ রেখে নারায়ণগঞ্জবাসীকে জিম্মি করার চেষ্টা করছেন।
সূত্র বলছে, বর্তমানে বাসের রুট পারমিট পাওয়াটা এতো সহজ নয়। বেশিরভাগ বাসের রুট পারমিটই হয় গন্তব্যের অর্ধেক অথবা গোঁজামিল দিয়ে চলে। সেলিম ওসমানের অবজেকশন দেয়া পুরনো সড়কের বোরাক পরিবহনসহ অন্যন্যা নামে বেনামের রুট পারমিটবিহীন বাসগুলোও সড়ক থেকে হাওয়া হয়ে গিয়েছে। এতে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, নারায়ণগঞ্জের বাইরের লোকদের দিয়ে নারায়ণগঞ্জের পরিবহন নেতারাই বাস নামিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছেন।
জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের ঐকমত্যের ভিত্তিতে যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাতে আতেঁ ঘা পড়েছে তাদের। তাই বাসের কৃত্রিম সংকট এবং নানাভাবে জিম্মি করে রুট পারমিটবিহীন বাস চলাচলের জন্য তারা সবাইকে বাধ্য করতে চাইছেন। অথচ গোলটেবিল বৈঠকে পরিবহন নেতারা উপস্থিত থাকলেও তারা টু শব্দটি করেননি। এবং তাদের নাম ধরে জেলা প্রশাসন ও সেলিম ওসমান যখন সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানান তারা তাতে আপত্তি তোলেননি।
তাহলে নারায়ণগঞ্জবাসীকে জিম্মি করার দুঃসাহস বাস পরিবহন নেতারা কোথায় পাচ্ছেন এই বিষয়টি খতিয়ে দেখে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন নগরবাসী। এদিকে গতকাল গোলটেবিল বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কোন ট্রাক শহরে চলাচল না করায় সড়ক ছিল শৃঙ্খলিত। তবে নিতাইগঞ্জে নাসিক ভবনের সামনে সারিবদ্ধভাবে ট্রাক দাঁড়িয়ে লোড-আনলোডের চিত্র ছিল পুরনো দিনের মতোই।
যানজট নিরসনের গোল টেবিল বৈঠকের পরদিন জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় নগরীর বঙ্গবন্ধু সড়কে পাকিং থাকার যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছেন জেলার ট্রাফিক পুলিশ। জেলা পুলিশের কঠোর নির্দেশনায় পেয়ে ব্যাটারিচালিত ২০টি অটোরিকশা জব্দ করেছে ট্রাফিক পুলিশ।
গতকাল রবিবার (৪ জানুয়ারী) সন্ধ্যায় চাষাড়া সোনালী ব্যাংকের সামনে থেকে শুরু করে রাস্তার পাশের সকল মার্কেট মালিক ও দোকান ম্যানেজারদেরকে নির্দেশ দিয়ে যাওয়া হয় আর যেন দোকানের সামনে কোন মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট গাড়ি পার্কিং না করা হয়। এ সময় ৩টি মোটর সাইকেল আটক ও একটি মোটর সাইকেলকে ৩ হাজার টাকার মামলা দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) রুহুল আমিন সাগর যুগের চিন্তাকে জানান, যানজটমুক্ত রাখতে বিভিন্ন মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের রাখা হয়েছে। তারা অবৈধ ব্যাটারীচালিত রিক্সার বিরুদ্ধে ও শহরের যেন বিভিন্ন জায়গায় অবৈধভাবে পার্কি না করা হয়, সেই জন্য অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে সকলকে একটি সতর্কবার্তা দেওয়া হলো যে কেউ রাস্তায় কোন প্রকারের পার্কিং না করে।
এ সময় অভিযানে আরো উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) তরিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) রুহুল আমিন সাগর, ট্রাফিক সার্জেন্ট ইমন, ট্রাফিক সার্জেন্ট সোবনসহ ট্রাফিক বিভাগের আরো কর্মকর্তাবৃন্দ। এস.এ/জেসি