এ যেন এক অচেনা শহর!
ইউসুফ আলী এটম
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৭:৪১ পিএম, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সোমবার
এ যেন এক অচেনা শহরে প্রবেশ করলেন সিকদার সাহেব! চারদিকে তাকান আর অবাক হয়ে ভাবতে থাকেন, এ তিনি কোথায় এলেন! এটা কি তার চিরচেনা সেই নারায়ণগঞ্জ শহর? না, মিলছে নাতো! তবে কি তিনি স্বপ্ন দেখছেন! চশমাটা খুলে মুখের কাছে ধরে ফুঁ দিয়ে ঘোলা করে টিস্যু দিয়ে ভালোমতো ঘষলেন।
তারপর চোখ কচলিয়ে চশমাটা পরে আবার চারপাশে তাকিয়ে দেখলেন, সব ফকফকা পরিষ্কার। ফুটপাতে হকার নেই, রাস্তায় যানজট নেই, সড়কের মোড়ে মোড়ে স্ট্যান্ড নেই। এমনকি মার্কেট ও অফিসের সামনে পার্কিংকরা গাড়িও নেই। তাজ্জব ব্যাপার তো। কোথা দিয়ে কী ঘটে গেলো! এটা কি আলাদিনের সেই দৈত্যের কারসাজি নাকি কোন ম্যাজিশিয়ানের ভেল্কিবাজি!
অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা কাদের সিকদার। থাকেন শহরতলীতে। সাংসারিককাজে দু’দিন আগে গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলেন। ফিরেছেন শনিবার রাতে। এ দু’দিন নারায়ণগঞ্জ শহরের সাথে তার কোন যোগাযোগ ছিলো না। রোববার বিকেলে লিংকরোড দিয়ে চাষাঢ়া চত্বরে প্রবেশ করেই অবাক হয়ে গেলেন সিকদার সাহেব।
হঠাৎকরে নারায়ণগঞ্জ শহরের এই অবিশ্বাস্য পরিবর্তনের কারণ খুঁজতে গিয়ে তিনি জানলেন, শনিবার নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে যানজট ও হকারমুক্ত নারায়ণগঞ্জ গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। তাদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তের ফসলই হলো শহরের এই পরিবর্তন।
যাদের উদ্যোগে যুগান্তকারি এ পরিবর্তন সাধিত হতে যাচ্ছে তাদের প্রতি সিকদার সাহেবের মনের অজান্তেই অকৃত্রিম কৃতজ্ঞতা জমা হয়ে যায়। বহুদিন পর তিনি খালি ফুটপাত দিয়ে হাত দোলাতে দোলাতে হাঁটতে থাকেন। এর আগে বহু চেষ্টা করেও তিনি ফুটপাত দিয়ে এমন স্বাধীনভাবে হাঁটতে পারেননি। ফুটপাত ধরে তিনি এক নিঃশ্বাসে চাষাঢ়া থেকে ২ নং রেলগেট পর্যন্ত বাধাহীন হেঁটে গেলেন।
হঠাৎ তার মনে নতুন এক ভাবনার উদয় ঘটলো। তিনি তার নিজের মনকেই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন, কতোদিন থাকবে শহরের এই সুন্দর পরিবেশ? এক মাস, দু’মাস কিংবা ছয় মাস, নাকি আজীবন নারায়ণগঞ্জবাসী এমন সুন্দর সুনশান পরিবেশ উপভোগ করবেন ? আজকে উত্তর আর দক্ষিণ এক হয়েছে বলেই না এটা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু কোন কারণে যদি এই দুই মেরুতে আবার বিভাজন দেখা দেয়, তখন কি শহরটা ফের আগের অবস্থায় ফিরে যাবে!
এমন আশঙ্কা সিকদার সাহেবকে খাবলিয়ে খাবলিয়ে খাচ্ছে। যারা ফুটপাতে হকার বসিয়ে চাঁদা উঠাতো, স্ট্যান্ড তৈরি করে চাঁদা নিতো, অটোর কার্ড ভাড়া মাসোহারা নিতো তারা এতো সহজে এটা মেনে নেবে বলে মনে করার কোন কারণ নেই। এসব খাত থেকে উঠানো চাঁদার ভাগ যাদের পকেটে যেতো তারা যে সুযোগের অপেক্ষায় থাকবে, এটা খুবই স্বাভাবিক। এ সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে না পারলে পরিবর্তীতে পরিবেশ ফের লণ্ডভণ্ড হওয়ার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না।
কিন্তু শহরবাসীর সাথে আলাপ করে জানা গেছে, বেশিরভাগ মানুষই শহরের এমন সুন্দর পরিবেশ পেয়ে খুশি। পরিবেশটা সবসময় এমনই থাকুক এ প্রত্যাশা সবার মনেই বিরাজমান। এস.এ/জেসি