রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১   ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দুই কিলোমিটার সড়কে ৯ অবৈধ স্ট্যান্ড, উচ্ছেদের দাবি নগরবাসীর

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৯:২২ পিএম, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ মঙ্গলবার


নগরীর বহুদিনের সমস্যা অবৈধ স্ট্যান্ড। ছোট্ট এ নগরীতে এখন অবৈধ স্ট্যান্ডের ছড়াছড়ি। যেখানে সেখানে কোন অনুমতি ছাড়াই গড়ে উঠছে সিএনজি, লেগুনা, ইজিবাইক, রিকশা, ভ্যানগাড়ির স্ট্যান্ড। নগরীর বিভিন্ন স্থানে প্রায় অর্ধশতাধিক অবৈধ স্ট্যান্ড। রীতিমত সম্পূর্ণ নগরী যেন অবৈধ স্ট্যান্ডের দখলে। আর এইসব অবৈধ স্ট্যান্ডের কারণে একদিকে তৈরি হচ্ছে তীব্র যানজট, অন্যদিকে দিকে চাঁদা তোলা হচ্ছে এই সকল অবৈধ স্ট্যান্ড থেকে।

 

 

এতে যানজটে নিত্যদিন নাকাল হয়ে নগরবাসী দুর্ভোগ পোহালেও পরিবহন চাঁদাবাজদের পকেট ভারী হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের আয়োজনে শহরের যানজট ও ফুটপাত দখল সমস্যার সমাধানে গোলটেবিল বৈঠকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ অভিযোগ করেছিলেন প্রশাসনকে নগরীর অবৈধ স্ট্যান্ডের তালিকা দিলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

 

 

গত শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের ৭ম তলায় অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন মেয়র, ২ সংসদ সদস্য, ডিসি, এসপি, বিআরটিএ সহকারি পরিচালক, ব্যবসায়ী নেতা, নাগরিক প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন অংশীজনরা। ওই বৈঠকের পর থেকেই সুফল মিলতে শুরু করেছে। চিরচেনা যানজট আর হকারের নগরীতে মিলছে স্বস্তি।

 


বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, এসব অবৈধ স্ট্যান্ডের মূলে রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন ও স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ। তাদের ছত্রছায়ায় থেকে একদল চাঁদাবাজ প্রতিদিন বিপুল পরিমান টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এসব স্ট্যান্ড থেকে। এসব চাঁদা প্রশাসনের লোকেরাও ভাগ পায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এসব চাঁদাবাজদের চাহিদা মেটাতে সাধারণ যাত্রীদের থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া।

 

 

জানা গেছে, গত বছরের ১৮ জুলাই জেলা পুলিশ সুপারের কাছে নগরীর বৈধ ও অবৈধ স্ট্যান্ডের তালিকা পাঠান নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের   প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। তালিকার অনুলিপি নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক, র‌্যাব-১১ এর অধিনয়ক, সদর মডেল থানাকে পাঠানো হয়।

 


তালিকায় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন যে ১০ টি ষ্ট্যান্ডে প্রতি বছর ইজারা আদায় করে থাকে সেগুলো হল, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, পঞ্চবটি ট্রাক টার্মিনাল, রাস্তার ক্ষতিপুরণ ফি আদায় (নিতাইগঞ্জ ও থানা পুকুরপাড় (এস এম মালেহ রোড), ১ নং রেলগেইট সংলগ্ন সিএনজি স্ট্যান্ড, জীমখানা সড়ক সিএনজি ষ্ট্যান্ড, থানা পুকুর পাড় মালামাল লোড আনলোড ষ্ট্যান্ড (এস এম মালেহ রোড), নিউমেট্রো সিনেমা হলের সম্মুখস্থ সড়ক বাস ষ্ট্যান্ড, নবীগঞ্জ সিএনজি ষ্ট্যান্ড (কামাল উদ্দিনের মোড়সহ), বন্দর ১ নং খেয়াঘাট রোড ও পার্শ্বস্থ সিএনজি ষ্ট্যান্ড, জালকুড়ি টিসি রোডের মাথায় (বাস ষ্ট্যান্ড সংলগ্ন) সিএনজি স্ট্যান্ড।

 


ইজারাবিহীন ৯ টি অবৈধ ষ্ট্যান্ডের তালিকায় উল্লেখ করা হয়, মন্ডলপাড়া হতে নিতাইগঞ্জ মোড় পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সড়কের দুইপার্শ্বে অবৈধ ট্রাক ষ্ট্যান্ড, মন্ডলপাড়া পুল হতে (আর কে মিত্র রোডের দুইপার্শ্বে) টানবাজার পুল পর্যন্ত অবৈধ ষ্ট্যান্ড, সরকারী মহিলা কলেজের সম্মুখস্থ সিএনজি অবৈধ ষ্ট্যান্ড, চাষাড়া সান্তনা মার্কেটের সম্মুখস্থ রাস্তার উপর অবৈধ লেগুনা ষ্ট্যান্ড।

 

 

রাইফেল ক্লাবের পার্শ্বস্থ বাস/সিএনজি অবৈধ স্ট্যান্ড, চাষাড়া শহীদ মিনার সংলগ্ন সিএনজি অবৈধ স্ট্যান্ড, চাষাড়া সুগন্ধা বেকারীর সম্মুখ হতে বাগে জান্নাত মসজিদ পর্যন্ত সিএনজি, টেম্পু, লেগুনা অবৈধ স্ট্যান্ড, খানপুর হাসপাতালের সম্মুখস্থ সিএনজি অবৈধ স্ট্যান্ড, হাজীগঞ্জ গুদারাঘাট সংলগ্ন সিএনজি অবৈধ স্ট্যান্ড।

 


চিঠিতে বলা হয় বৈধ ষ্ট্যান্ড ব্যতিত সিটি কর্পোরেশন হতে অন্য কোন স্ট্যান্ড খাস আদায় বা ইজারা প্রদান করা হয়নি। অথচ শহরের যত্রতত্র সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ট্রাক, বাস, সিএনজি/টেম্পো, ব্যাটারী চালিত গাড়ি ইত্যাদি যানবাহনের অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে ওঠায় প্রতিনিয়ত নগরীতে অবর্ননীয় যানজট সৃষ্টিসহ জনসাধারণের অসহনীয় ভোগান্তি ও বিড়ম্বনার সৃষ্টি হচ্ছে।

 

 

জনস্বার্থে অবৈধ স্ট্যান্ডগুলো বন্ধ বা অপসারণের জন্য বিভিন্ন সময়ে পত্র পত্রিকায় নানা ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এমতাবস্থায়, বঙ্গবন্ধু সড়কে অবৈধভাবে ট্রাক পার্কিং বন্ধ এবং সড়কটি যানজটমুক্ত রাখাসহ জনস্বার্থে শহরের যত্রতত্র অবৈধভাবে গড়ে উঠা ষ্ট্যান্ড সমূহ অপসারণের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

 


এসব অবৈধ স্ট্যান্ডগুলোর বিরুদ্ধে এর আগে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। নগরবাসীর দাবি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের অবৈধ স্ট্যান্ডের তালিকা ধরে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাসহ ও স্থায়ী উচ্ছেদ করতে হবে। এতে যানজট ভোগান্তি থেকে দীর্ঘমেয়াদি সুফল মিলবে।   এন. হুসেইন রনী  /জেসি